মুক্তমঞ্চ ডেস্ক:
মামুনুল হক লাইভে এসে গতকাল তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এটা দেখে অনেকের মনে হয়েছে তিনি ‘২ কান-কাটা মানুষ’, যার হায়া লজ্জা বলতে কিছুই নাই এবং মিথ্যাচারে তিনি বড়ই সিদ্ধহস্ত।
যদিও এটাকে তিনি তার নৈতিক শক্তি হিসেবে উত্থাপন করেছেন। লাইভে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে টেলিফোনে প্রথম স্ত্রীর সাথে মিথ্যা বলেছেন, আর সেটাকে তিনি তার ব্যক্তিগত কথোপকথন প্রকাশের জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেছেন। তিনি এর আগে পুলিশ ও সাংবাদিকদের সম্পর্ক যা বলেছেন, গতকালের লাইভে তার উল্টাে কথা বলে আরেক দফা মিথ্যাচার করেছেন।
যদিও এর আগে তিনি দাবি করেছেন, পুলিশ ও সাংবাদিকগণ তার সাথে খুব ভালো আচরণ করেছেন।
পর্দা সম্পর্কে তিনি মিথ্যা বলেছেন। পবিত্র কোরআনের আলোকে পর্দার যে উল্লেখ করা আছে, তার খেলাপ তিনি করেছেন। পবিত্র কোরআনের আয়াত দিয়ে মামুনুল হক প্রমাণ করতে পারবেন না যে, তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে বেপর্দা করা হয়েছে।
ইসলামের বিভিন্ন ফেরকার লোকেরা তাদের স্বার্থে মহানবীর নামে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কিতাবের মাধ্যমে জাল হাদিস তৈরি করেছেন। তাই তিনি জাল হাদিসের আশ্রয় নিয়ে তার বক্তব্যের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবেন, এটাই স্বাভাবিক। সবাই জানেন, যে হাদিস পবিত্র কোরআনের কোন আয়তের সাথে সাংঘ’র্ষিক, নবীজির মুখ নিসৃত বাণী বলে কোনো যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাই জাল হাদিস।
অনেক সাহাবির নিজস্ব বক্তব্যকেও পরবর্তীতে হাদিস বলে অনেকেে দাবি করেছেন। এসব বিভ্রা’ন্তি দূর করতে সহি হাদিসের জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রন্থকে অনুসরণ করা হয়। যেমন- সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম ইত্যাদি।
মামুনুল হক তার লাইভের বক্তব্য জুড়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কথাই বেশি বলেছেন, যদিও ইতিপূর্বে তিনিই তার প্রথম স্ত্রীর কাছে জান্নাত আরা ঝর্ণাকে ফরিদপুরের হাফেজ জাফর শহিদুল ইসলামের স্ত্রী বলে দাবি করে প্রথম স্ত্রীকে ম্যানেজ করার আকুতি জানিয়েছেন, তা দেশবাসী জানেন।
মামুনুল হক তার বক্তব্যে অ’শুভ উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন। এই অ’শুভ উদ্দেশ্য কার? সরকারের না হেফাজতের ব্য’ভিচারী তথাকথিত নামধারী আলেমদের? বক্তব্যর মাঝে তিনি সরকার ও প্রশাসনকে নানাভাবে হুম’কি দিয়েছেন, আগুন নিয়ে না খেলার কথা বলেছেন। এটা কি আইনসিদ্ধ কথা? সরকার বা রাষ্ট্রকে হুম’কি দিয়ে, সরকারি আইন না মানা কী ইসলাম সমর্থন করে?
ইসলামে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালনাকারী সরকার যদি বিপথগামীও হয়, তবুও আইন অ’মান্য করে রাস্তায় নেমে বি’শৃঙ্খলা করা যাবে না, সরকারের বিরু’দ্ধাচরণ করা যাবে না, রাষ্ট্রদ্রো’হিতা করা যাবে না, হ’ত্যাকাণ্ড, সম্পদ বিনষ্ট করা বা কোনো ধরণের অরাজকতাও করা যাবে না।
মামুনুল হক এসবই জানেন, তবুও হয়তো তার ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। তাই তিনি তার বক্তব্যে বার বার প্রশাসনকে অভিযুক্ত করার পরেও শেষে এসে তিনি আবার তাদের সাহায্য চান কেন? মামলার হাত থেকে রক্ষা পেতে?
মামুনুল হক সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। দেশে যদিও টর্ট আইনের প্রয়োগ খুব কম, তবুও হয়তো টর্ট আইনে তার বিচার করা সম্ভব। Sir Frederric Pollock টর্ট আইন সম্পর্কে বলেন- এমন কোন কাজ করা বা করা হতে বিরত থাকা যা আইন সমর্থনযোগ্য নয় এবং চুক্তির সাথে সম্পর্কহীন তাকেই Tort বলা হয়। সামাজিক উ’ৎপাত টর্ট আইনে বিচারযোগ্য অপরাধ।
২৫ বছরকে মোটামুটিভাবে একটা জেনারেশন বা প্রজন্ম বলা হয়। নতুন প্রজন্মকে তিনি বিপথে চালিত করার জন্য ব্য’ভিচারকে উৎসাহিত করছেন সারা দেশ জুড়ে। তা না হলে মাত্র ২৭ বছর বয়সী মাকুন্দ (শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রাপ্ত বয়সের দাড়ি গোঁফ গজায় না এমন পুরুষ) তথাকথিত “শিশুবক্তাকে” তিনি ব্য’ভিচারে বা অ’নৈতিক কাজে প্রলু’ব্ধ করছেন। তাইতো সেই শিশুবক্তার মোবাইলে পাওয়া গেছে অ-শালীন ছবি।
এমন অনেকেই তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, হয়েছেন পায়ুযো’দ্ধা। তিনি এমন অ’নৈতিক কাজ করে আগে সিরাজগঞ্জ ও মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসা থেকে চাকরি হারিয়েছেন। কিন্তু তার বা তাদের সহযোগীদের আস্কারা পেয়ে মাদ্রাসাগুলোর অধিকাংশ হয়ে উঠেছে ব- কার ও ধ- এর স্বর্গরাজ্য।
মামুনুল হক এসব অপরাধ সম্পর্কে তার বক্তব্যে কিছুই বলেননি, কখনই বলেন না। ভ’ণ্ডামির একটা সীমা থাকা দরকার।
লেখক: ক্বারী ইকরামুল্লাহ মেহেদী
পরিচিতি: শিক্ষক ও গণমাধ্যম কর্মী
পেকুয়া, কক্সবাজার