আলাদা ফ্ল্যাটে ২ বছর রেখে ঝর্ণার ওপর সুযোগ নিয়েছেন মামুনুল!

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীসহ স্থানীয় জনগণের কাছে আপত্তিকর অবস্থায় আটকের পর হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়ে যায়। এরপর নিজেকে বাঁচাতে যে নারীর সাথে মামুনুল ধরা পড়েছিলেন, তার সাথে বিয়ের ভুয়া কাবিননামা জোগাড়ের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে খবর দিয়েছে বাংলানিউজ ব্যাংক।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে গভীর নজরদারি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কেউ যদি এরকম কোনো কাজে মামুনুল হককে সাহায্য করেন তবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র।

জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিলাস বহুল রয়্যাল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে গোপনে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করার সময় মামুনুল হককে আপত্তিকর অবস্থায় স্থানীয় জনগণ ঘেরাও করেন। ওই দিন জনগণের প্রশ্নের মুখে তিনি দাবি করেছিলেন, সঙ্গে থাকা নারী তার স্ত্রী। কিন্তু রিসোর্টে থাকা রেজিস্টার খাতায় ওই নারীর নাম আমিনা তৈয়বা হিসেবে উল্লেখ করেন মামুনুল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই নকল স্ত্রীর আসল নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা। আর আমিনা তৈয়বা নামটি হলো মামুনুলের বাড়িতে থাকা বিবাহিত আসল স্ত্রীর নাম। এতেই মামুনুলের মিথ্যাচার ধরা পড়ে। পরে নিজেকে বাঁচাতে মামুনুল বলেন, তার সাথে থাকা নারীকে ২ বছর আগে তিনি বিয়ে করেছেন। ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। কিন্তু তিনি এই বিয়ের কাবিননামার অস্তিত্ব দেখাতে ব্যর্থ হন। ফলে লাইভে জানান, তিনি কলেমা পড়ে বিয়ে করেছেন।

এপ্রিল রয়্যাল রিসোর্টে থাকা সংবাদকর্মীরা জানান, মামুনুল আটক থাকা অবস্থায় স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের নেতা–কর্মীরা সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর করে মামুনুল হক ও তার নকল স্ত্রীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় তারা। যদিও মামুনুল রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে নিজে আলাদা সরে পড়েন, নকল স্ত্রীর দায়িত্ব নেন হেফাজতের সিনিয়র নেতারা।

ততক্ষণে সারাদেশে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিবারকে ম্যানেজ করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠে মামুনুল প্রথম স্ত্রীকে ফোন করেন। সেই ফোনালাপ প্রকাশ পেয়ে যাওয়ায় অনেক কিছুই খোলাসা হয়ে যায়।

সেই ফোনালাপে মামুনুল তার আসল স্ত্রীকে বলেন, তার সঙ্গে থাকা ওই নারী জনৈক শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। পরিস্থিতির কারণে তাকে দ্বিতীয় স্ত্রী বলে পরিচয় দিতে বাধ্য হন তিনি।

মামুনুল তার স্ত্রীকে বলেন, ‘পুরো বিষয়টা আমি তোমাকে সামনে এসে বলব। ওই মহিলা যে ছিল সে হলো আমাদের শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের ওয়াইফ। ওটা নিয়ে সেখানে পরিস্থিতি এমন হয়ে গিয়েছিল যে, এটা বলা ছাড়া…. আমাকে ইয়ে করে ফেলছে বুঝছো?’ তখন তার আসল স্ত্রী আমিনা বলেন, ‘আচ্ছা, বাসায় আসেন, তারপর যা বলার বইলেন।’

এরপর মামুনুল বলেন, ‘বলুম তো, তুমি বিষয়টা.. অন্যান্য কথা অন্যদের বলতে হবে। পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে। তুমি আবার মাঝখানে অন্যকিছু মনে কইরো না। তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবা, হ্যাঁ, আমি বিষয়টা জানি।’ এরপর তার স্ত্রী বলেন, ‘ঠিক আছে।’

ওইদিন রাত ১০টার পর ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল হক দাবি করেন, ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর তিনি তাকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু তখনও তিনি কাবিননামা দেখাতে ব্যর্থ হন।

জানা যায়, জান্নাত আরা ঝর্নার আগের সংসারে ২টি পুত্র সন্তান রয়েছে। যারা আবার গণমাধ্যমের সামনে বার্তা দিয়েছেন মামুনুল হক তাদের পরিবার ভেঙে দিয়েছেন। খুলনায় যদি মামুনুল হককে কখনও পান, আব্দুর রহমান এবং তামীম দুই ভাই মিলে তাকে প্র’হার করবেন।। ঝর্ণার দুই ছেলে এবং তার পিতা-মাতা বলেছেন, ঝর্নার সাথে মামুনুলের বিয়ের কথা তারা কেউই জানেন না।

ঝর্ণার বড় ছেলে আব্দুর রহমান জানান, তার ছোট ভাইকে দুধ পান করানোর সময় মামুনুল শয়নকক্ষে ঢুকে পড়ে কু-প্রস্তাব দেয় ঝর্ণাকে। ঝর্ণা তখন বলেন- আপনি আপনার কাছের বন্ধুকে ঠকাচ্ছেন। আব্দুর রহমান তার লাইভ বক্তব্যে জানিয়েছিল, মামুনুল এর সাথে পরকিয়ার সূত্র ধরেই শহিদুল ও ঝর্ণার সংসারে ডিভোর্সের ঘটনা ঘটে। মূলত মামুনুলের যৌ- আকাঙ্ক্ষার বলি হয়েছেন ঝর্ণা।

ডিভোর্সের পর ঝর্ণা মামুনুলকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে মামুনুল হক ঝর্ণাকে প্রথমে একটি সেলাই মেশিন কিনে দেয় এবং পরে একটি পার্লার করে দেয়। যার নাম ‘ঢাকা বডি ম্যাসাজ’। এই পার্লারে অনেক হেফাজত নেতার যাতায়াত আছে বলেও জানা যায়।

হেফাজতের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার আগে ‘তমদ্দুন’ নামে একটি ইসলামি এনজিও ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত ছিলেন মামুনুল হক। বিদেশি ফান্ড আসত প্রচুর। সেই টাকায় বছিলাতে গোপনে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তিনি। যার খবর হেফাজতের কেন্দ্রীয় দুয়েকজন নেতা ছাড়া আর কেউই জানে না। যদিও মামুনুল নিজে থাকেন মোহাম্মদপুর এলাকায়। আর ঝর্নাকে অস্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করেন সেই ফ্ল্যাটে।

দিনের পর দিন ঝর্ণাকে নিজের ইচ্ছে মত ভোগদখল করে আসছেন মামুনুল হক। সোনারগাঁও এর রয়েল রিসোর্টে আপত্তিকর অবস্থায় জনগণের হাতে আটকের পর নিজেকে বাঁচতে ঝর্ণাকে ২য় স্ত্রী দাবি করলেও সেই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি মামুনুল হক।

অপরদিকে ঝর্ণার দাবি, মামুনুল হক বিয়ের স্বপ্ন দেখানোর কারণেই শহিদুল এর সাথে ডিভোর্স হয়েছে তার। কিন্তু ডিভোর্সের ২ বছর পার হয়ে গেলেও তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়নি মামুনুল হক। বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা না দিলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন জান্নাত আরা ঝর্ণা।

বিয়ের আশ্বাস দিয়ে অন্যের স্ত্রীকে ভাগিয়ে এনে বছরের পর বছর ভোগদখল করা কি ইসলামের কোথাও আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে হেফাজত নেতা মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী বলেন, এটা কোনভাবেই উচিৎ নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে মামুনুল হক যা করেছেন তা সম্পূর্ণ হারাম। গ’র্হিত পাপ। এজন্য আমি তাকে সংগঠন থেকে বের করার পরামর্শ দিয়েছি। একজন মুসলমান এ ধরনের পাপ কখনো করতে পারেন না।

শেয়ার করুন !
  • 295
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!