ঝর্নার ডায়েরি: টাকা দিয়ে জান্নাত কিনে নিয়েছিলেন মামুনুল!

0

সময় এখন ডেস্ক:

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের নকল স্ত্রীর ফোনালাপ প্রকাশের পর এবার উদ্ধার হয়েছে ৩টি ডায়েরি। ওই ডায়েরিগুলোতে গত ৩ বছর ধরে মামুনুলের সাথে সম্পর্ক এবং দুজনের বিষয়ে অনেক কথা লিখেছেন তার জান্নাত আরা ঝর্না।

সেই ডায়েরিগুলো থেকে পাওয়া গেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। মামুনুল হক টাকা এবং ক্ষমতার জোরে জান্নাতের দেহ কিনেছিলেন বলে ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন জান্নাত আরা ঝর্না নিজেই। এছাড়াও ওই ডায়েরিতে নানান ঘটনা উল্লেখ করা হলেও সেখানে মামুনুল হকের সাথে জান্নাত আরার বিয়ের বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।

জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ আপত্তিকর অবস্থায় স্থানীয় জনগণের হাতে আটক হন মামুনুল হক। ওই দিন মিডিয়ার সামনে তিনি দাবি করেছিলেন, সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। ২ বছর আগে তিনি বিয়ে করেছেন।

কিন্তু রিসোর্টে থাকা রেজিস্টারে ওই নারীর নাম আমিনা তৈয়বা হিসেবে উল্লেখ করেন মামুনুল। কিন্তু পরে জানা যায়, ওই নারীর নাম জান্নাত আরা ঝর্না। আর মামুনুলের বাড়িতে থাকা আসল স্ত্রীর নাম আমিনা তৈয়বা। কিন্তু পরে কয়েকটি ফোনালাপের সূত্রে জানা যায়, মামুনুলের সাথে জান্নাত আরার বিয়ের খবরটি ভুয়া।

বিষয়টিতে মামুনুল হকের মিথ্যাচার প্রমাণিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা হয়। আলেম পরিচয় দিয়ে এরকম অপকর্ম করায় তার সাজার দাবি ওঠে। সমালোচনার মুখে সোনারগাঁয়ে ধরা পড়ার ৫ দিন পর ফেসবুক লাইভে আসেন মামুনুল হক। লাইভে এসে আবারও মিথ্যাচার করেন তিনি। সেখানেও জান্নাত আরাকে নিজের বিবাহিত স্ত্রী দাবি করেন। কিন্তু তার স্বপক্ষে কোন প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হন।

মামুনুল হকের লাইভের পর আজ শুক্রবার ঝর্নার লেখা ৩টি ডায়েরি উদ্ধার হয়। ডায়েরিগুলোতে ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত মামুনুলের সঙ্গে জান্নাতের গোপন সম্পর্কের বর্ণনা রয়েছে।

ডায়েরি সূত্রে জানা গেছে, খুলনার মাদ্রাসা শিক্ষক শহিদুল ইসলাম এবং জান্নাত আরা দম্পতির সংসারে রয়েছে দুই ছেলে। ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট স্বামীকে ডিভোর্স দেন জান্নাত। তার পর বাবার বাড়িতে চলে গেলেও কিছুদিন পরেই হেফাজতের নেতা মামুনুলের হেফাজতে চলে যান জান্নাত। অবিবাহিতা উল্লেখ করে ৮ মাস ধরে ঢাকার নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাড়িতে সাবলেট থাকতেন জান্নাত। এই বাড়ির ভাড়া দিতেন মামুনুল হক।

প্রথম ডায়েরিতে জান্নাত লিখেছেন, ‘আমাকে নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই, শরীরের দাবিদার আছে।’ এরপর এক পৃষ্ঠায় জান্নাত আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘মামুন সাহেব আমার শরীরটা কিনেছে কেন আল্লাহ? সব জেনে মামুন সাহেব যা করেছেন, আমি শুধু তার টাকা ফেরত দিতে চাই। আল্লাহ কবুল কর।’

মামুনুলের সাথে জান্নাতের মধ্যে যে সম্পর্ক, তা যে টাকার বিনিময়ে গড়া, তা বোঝা যায় দ্বিতীয় ডায়েরির লেখায়। সেখানে জান্নাত লিখেছেন, ‘আমাদের সাথে শুধু প্রেম হয়েছিল। কোন ভালোবাসা ছিল না। ছিল শুধু ক্ষণিকের আবদার পূরণের আমেজ।’

দ্বিতীয় ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা, ‘এম। এগ্রিমেন্ট স্টার্ট। ২০-০২-১৯।’

এই সংক্ষিপ্ত লেখার ব্যাখ্যা তৃতীয় ডায়েরিতে দিয়েছেন জান্নাত। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখে জান্নাত লিখেছেন, ‘স্বপ্নে দেখলাম সে হেল্প চাচ্ছে, বাট সে হাতটা বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরেছে। ভাবছিলাম ঘুমের মধ্যেই, বিয়ে না করে জড়িয়ে কেন ধরেছে? এবার বাস্তবতা শুরু, ঠিক ফেব্রুয়ারির ১৯ বা ২০ হবে। এখনও চলছে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি তাকে খুব ঘৃ’ণা করি। আবার মাঝেমাঝে মনে হয় আমি তাকে ভালোবাসি। তবে হ্যাঁ, আমার লাইফটা নরক বানিয়ে ফেলেছে।’

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে ধরা পড়ার পর এবং এরপর ৮ এপ্রিল লাইভে এসে মামুনুল দাবি করেছিলেন, ২ বছর আগে তারা বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু জান্নাতের ডায়েরি সাক্ষ্য দিচ্ছে এ বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের বিয়েই হয়নি।

মামুনুলের আসল পরিচয় পেয়ে জান্নাত লিখেছেন, ‘সাদা সাদা জামা পরলেই আর বড় মাওলানা হলেই মানুষ হয় না, মুখোশধারীও হয়।’

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখে জান্নাত লিখেছেন, ‘টাকা দিয়ে আমার দেহ কিনেছিলেন। আজ আপনার টাকা আমি ফেরত দিতে চাই। শুধু আমার সময় ফেরত চাই। কেন করেছিলেন এমন? আপনার অনেক টাকা ছিল, পাওয়ার ছিল তাই?’

এদিকে, ডায়েরিতে কয়েকবার সুইসা’ ইড করার কথাও লিখেছেন জান্নাত। মামুনুলের সাথে সম্পর্কের হতাশা এবং আ’ত্মগ্লানি থেকেই এসব লিখেছিলেন তিনি। অনেক বার খোদার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন জান্নাত।

এদিকে ডায়েরির বিষয়ে জানতে চাইলে শহিদুল-জান্নাত দম্পতির প্রথম সন্তান আব্দুর রহমান জামি বলেন, এই ডায়েরিগুলো তার মায়েরই। হাতের লেখা দেখে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ডায়েরি প্রকাশের পর আর মামুনুলের ভ’ণ্ডামির বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকা উচিৎ নয়। ধরা পড়ার পর ফোনালাপ প্রকাশ পেল, তখনই এসব পরিষ্কার। তবুও ফেসবুক লাইভে এসেও বিয়ের বিষয়ে মিথ্যাচার করেছেন মামুনুল। এবার ডায়েরি উদ্ধারের পর তিনি যে আবারও মিথ্যা বলবেন না, তার কোনো নিশ্চয়তা নাই।

মামুনুলদের মত ধর্ম ব্যবসায়ীরা যুগে যুগে এভাবে নিজেরা অন্যায়-অপকর্ম করে জনগণের সামনে নিজেদের ধর্ম প্রচারক হিসেবে তুলে ধরেন। প্রকৃত অর্থে জনগণের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আখের গোছানোর কাজ করেন এসব ধর্ম ব্যবসায়ীরা।

শেয়ার করুন !
  • 438
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!