সময় এখন ডেস্ক:
শিশু বক্তা খ্যাত রফিকুল ইসলাম মাদানীর (২৭) বিরু’দ্ধে আরো একটি মামলা করা হয়েছে।
রবিবার সকালে গাজীপুরের বাসন থানায় এ মামলা করা হয়। গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এ মামলায় তার বিরু’দ্ধে গুরুতর মিথ্যাাচার, ভ’য় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘা’ত করে মানহা’নিকর তথ্য প্রকাশ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার মতো অপরাধে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বাদী গাজীপুরের টেকনাগপাড়া এলাকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মারকাজুল নূর আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় বসে না’শকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন রফিকুল ইসলাম মাদানী। সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া সহিং’সতার পেছনে অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে তার বক্তব্য।
এর আগে শনিবার রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গাজীপুর ডিস্ট্রিক্ট জেল থেকে কাশিমপুর সেন্ট্রাল জেল-২ এ স্থানান্তর করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার সকালে তাকে গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। তখন আদালত শুনানি শেষে তাকে জেলে পাঠানোর আদেশ দেন।
রাষ্ট্রবিরোধী, উসকানিমূলক ও ঔ’দ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং বি’শৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে রফিকুল ইসলামের বিরু’দ্ধে গত ৮ এপ্রিল র্যাব বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গাজীপুরের গাছা থানায় মামলা করে। পরে ঢাকায় তার নামে আরো একটি মামলা করা হয়।
এর আগের দিন ৭ এপ্রিল ভোরে রফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দা থেকে তাকে আটক করে র্যাব।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা থেকে ১০টায় গাজীপুরের গাছা থানাধীন বোর্ড বাজারের কলমেশ্বর এলাকার শীতক ফ্যাক্টরির ভেতর ওয়াজ মাহফিলে বক্তা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্র তথা সরকারবিরোধী ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি বি’দ্বেষমূলক বক্তব্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদান করে।
যা তার নির্দেশে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।
তার ‘উসকানিমূলক বক্তব্যের ফলে’ ২৬ মার্চ ঢাকায় বায়তুল মোকাররম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, না’শকতা ও ব্যাপক ধ্বং’সাত্মক কার্যকলাপ সংগঠিত হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের পরম মিত্র ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরু’দ্ধে গত ২৫ মার্চ বিক্ষোভকালে ঢাকার মতিঝিল এলাকা থেকে মাদানীকে আটক করেছিল পুলিশ।
পরে সেদিন বিকেলেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি।
ওই সময় বিক্ষোভ ও হেফাজতে ইসলামের হরতাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ব্যাপক সহিং’সতা হয়েছিল। মাদানীর ওয়াজেই এই সহিং’সতার উসকানি ছিল বলে র্যাব প্রাথমিক তদন্তে সেই প্রমাণ পায়।
রফিকুল ইসলাম মাদানী ওরফে শিশু বক্তার বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দা গ্রামে। সেখান থেকেই তাকে আটক করা হয় বলে স্বজনরা জানায়। আটকের পর জেরার জন্য র্যাব কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে তার মোবাইল ফোনে আপত্তিকর ভিডিওসহ সহিং’সতায় মদদ দেয়ার নানান তথ্য প্রমাণ পায় র্যাব।
ইসলামী দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় রফিকুলের বয়স ২৫ বছর হলেও আকার-আকৃতির জন্য তাকে ‘আদর’ করে ‘শিশু বক্তা’ বলে ডাকেন তার ভক্তরা।
গাজীপুর মহানগরের বাড়িয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে মারকাজুন নূর আল ইসলামিয়া নামে একটি আবাসিক মাদ্রাসা রয়েছে। হাফেজ রফিকুল ইসলাম মাদনী ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও পরিচালক।