মুক্তমঞ্চ ডেস্ক:
নারী- মায়ের জাত, এটা আমরা স্বীকার করি মুখে কিন্তু অন্তরে ধারণ করি না। হাদিস শরিফে সন্তানের জন্য সুপারিশের ক্ষেত্রে মায়ের নাম ৩ বার উচ্চারণ করার পর পিতার নাম এসেছে। এখানেই গুরুত্বটা সহজে বোঝা যায়। কিন্তু বোঝার কথা যাদের সবচেয়ে বেশি, সেই ধর্ম ব্যবসায়ী আল্লামা শফীরা সেটা বুঝেন না বা প্রকাশ করেন না। তারা নারীর অবমূল্যায়ণ করে, তাদের অগ্রযাত্রাকে ভয় পেয়ে।
তিনি ক’দিন আগেই বলেছিলেন, ‘আপনাদের মেয়েদের স্কুল-কলেজে দেবেন না। ক্লাস ফোর বা ফাইভ পর্যন্ত পড়াতে পারবেন। বেশি পড়ালে আপনার মেয়েকে টানাটানি করে অন্য পুরুষ নিয়ে যাবে। তাই আপনারা আমার সাথে ওয়াদা করেন, মেয়েদের বেশি পড়াবেন না।’
আমাদের জাতীয় অর্থনীতির বড় ভিত নারীদের শ্রমের ওপর দাঁড়িয়ে আছে যেখানে, সেখানে এমন এক ধর্ম ব্যবসায়ীর বিচার দাবি করছে না কেউ, সেটা আমি বুঝতে পারছি না। তবে এর বোধহয় এক বড় জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এর দল রাজশাহী কিংস।
সন্ধ্যায় পত্র পত্রিকায় দেখলাম, মায়েদের প্রতি সম্মান জানাতেই রাজশাহীর দলটি এক সুন্দর উদ্যোগ নিয়েছে, জার্সিতে খেলোয়াড়দের মায়ের নাম অঙ্কিত থাকবে। এ নিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে মায়েদের যে অবদান ও ভূমিকা, তাতে জার্সিতে মায়ের নাম পরে মাঠে নামতে বিশেষ কোনো উপলক্ষ্যের প্রয়োজন হয় না।
ছবিতে দেখলাম, নিজের জার্সি হাতে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫৩ নাম্বার জার্সিতে নাম লেখা মিনারা, লরি ইভান্সে লেখা ‘সুজান’। বুধবার ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ম্যাচটি নিজেদের মায়ের নামাঙ্কিত জার্সি পরে খেলবেন রাজশাহী কিংসের ক্রিকেটাররা।
মায়ের নামে জার্সি গায়ে চাপানোর জন্য যেন তর সইছে না রাজশাহী অধিনায়ক মিরাজের, উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, এমন কিছুর অভিজ্ঞতা আমার হবে প্রথমবার। মায়েদের জন্য কিছু করতে পারা আমাদের জন্য সত্যিই বিশেষ কিছু। আমরা ম্যাচটি জিতে মায়েদের উৎসর্গ করতে চাই।
একই রকম রোমাঞ্চ ছিল সহ-অধিনায়ক সৌম্য সরকারের কণ্ঠে, তিনি বলেন, আমাদের দেশে মনে হয় এ রকম কিছু এটিই প্রথম। সবসময় আমরা নিজের নাম বা ডাকনাম নিয়ে খেলেছি। এরকম কিছু হতে পারে, আগে ভাবিনি। আমরা সবসময় বলি, মায়ের জন্য কিছু করতে চাই। এবার সেটিই করে দেখানোর সময়। ম্যাচটি জিতে মায়েদের উৎসর্গ করতে চাই আমরা।
রাজশাহী কোচ ও সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার ল্যান্স ক্লুজনার নিজের উদাহরণ দিয়ে অনুরোধ করলেন, মায়েদের প্রাপ্য গুরুত্বটুকু দিতে হবে। মা আমার কাছে বিশেষ একজন। আমার দিনটি কেমন গেল, সেটি সবার আগে সবসময় তিনিই জানতে চান। প্রতিদিন তার সঙ্গে কথা বলি আমি। আমরা অনেকেই প্রায়ই মায়েদের ভুলে যাই, চারপাশের অন্যদের নিয়ে ভাবনায় পড়ি। আমি তাই সবার প্রতি আবেদন জানাব, দিনে অন্তত একবার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে এবং আমাদের জন্য যা করেছেন, সেটিকে মূল্যায়ন করতে।
এই অবস্থা দেখে একটা প্রশ্ন জাগে, এরা তো শিক্ষিত সমাজ। এরা তো নারীর মর্যাদা দিতে কার্পণ্য করছে না। বিদেশিদের ক্ষেত্রে বলা হয়, তারা ১৮ বছর হলে আলাদা হয়ে যায়, বাবা-মায়ের গুরুত্ব থাকে না তাদের কাছে। কিন্তু বিদেশি খেলোয়াড়দের কথাতে স্পষ্ট, তারা শফী হুজুরদের মত মূর্খ নয়।
শফী হুজুরদের মত ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাদের জন্ম কীভাবে হয়েছে, কে জন্ম দিয়েছে, তার কন্যা সন্তানও একদিন মা হবে, সে অশিক্ষিত হলে তার পরবর্তী প্রজন্মও অশিক্ষিত থাকবে- এসব বোঝার তওফিক দান করুক রাব্বুল আলামীন।
লেখক: ক্বারী ইকরামুল্লাহ মেহেদী
পরিচিতি: শিক্ষক ও গণমাধ্যম কর্মী
পেকুয়া, কক্সবাজার