বিশেষ প্রতিবেদন:
চাঞ্চল্যকর তিনটি ডায়েরি উদ্ধারের ঘটনার পর হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের নকল স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্নার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মায়ের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শনিবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ঝর্নার বড় ছেলে আব্দুর রহমান।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রিসোর্টকাণ্ডের পর ফোনালাপ প্রকাশ এবং জান্নাত আরার ডায়েরি উদ্ধার হওয়ার পর নিজের অপকর্ম ঢাকতে এবং মিডিয়ার কাছ থেকে দূরে রাখতে মামুনুল তার কথিত স্ত্রী জান্নাতকে কোথাও সরিয়ে ফেলেছে বলে দাবি করছেন কেউ কেউ।
শুক্রবার (৯ এপ্রিল) মামুনুলের নকল স্ত্রী জান্নাতের লেখা তিনটি ডায়েরি উদ্ধার হয়। ওই ডায়েরি তিনটিতে গত ৩ বছর ধরে মামুনুলের সাথে সম্পর্ক এবং মামুনুলের বিষয়ে অনেক কথা লিখেছেন জান্নাত আরা ঝর্না।
জান্নাত এসব ডায়েরিতে দিয়েছেন অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মামুনুল হক টাকা এবং ক্ষমতার জোরে তার দেহ কিনেছিলেন বলে ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন জান্নাত আরা। আর এসব ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ হন মামুনুল হক।
একটি সূত্র জানিয়েছে, সকল অপকর্ম প্রকাশ হওয়ায় ব্যাপক চাপে পড়েছেন মামুনুল হক। দেশব্যাপী তার জালিয়াতি এবং ভ’ণ্ডামির বিরু’দ্ধে সরব হয়েছেন সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা। হেফাজতের ভেতরেও মামুনুলের বিরু’দ্ধে ক্ষোভ বেড়েছে। এসব থেকে সবার নজর এড়াতে এবং নিজে বাঁচতে জান্নাত আরাকে সরিয়েছেন মামুনুল। এরপর সরকারের ওপর দোষ চাপানোর পরিকল্পনা করছেন তিনি।
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা হাসান জামিল বলেন, রিসোর্টকাণ্ডের পর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে অনেকেই মামুনুল হকের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের সমালোচনা করেন। ব্যক্তির দায়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষু’ণ্ণ হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন কয়েকজন তরুণ নেতা।
তারা বলেন, এই ঘটনায় মামুনুল হকের দোষ আছে। যদি তিনি বিয়ে করেও থাকেন, তা কেন গোপন রেখেছিলেন এরকম প্রশ্ন উঠে আসে। এই ঘটনায় সংগঠন চাপে পড়েছে, যার দায় এড়াতে পারেন না মামুনুল হক। এ সময় মামুনুল হককে বেশ চুপচাপ দেখাচ্ছিল। এরপর ডায়েরি উদ্ধারের ঘটনার পর থেকে তাকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখা গেছে বলে জানান সভায় উপস্থিত কয়েকজন।
এদিকে নকল স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্নার বড় ছেলে আব্দুর রহমান পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরিতে বলেন, আমি বেশ কিছুদিন ধরে আমার মা জান্নাত আরা ঝর্ণার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের বাসায় যাই। সেখান থেকে বাড়ির মালিক আমাকে জানায় ৯ এপ্রিল তিনি বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন। আর আসেননি।
শনিবার (১০ এপ্রিল) আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই। পল্টন মোড়ে পৌঁছালে অচেনা কয়েকজন আমাকে অনুসরণ করে। এতে আমার নিকট প্রতীয়মান হয় আমার জীবন এবং আমার মা জান্নাত আরা ঝর্নার জীবন হুম’কিতে। উদ্ধার হওয়া ডায়েরিগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি। যে কোন সময় মামুনুল হকের লোকেরা আমার ক্ষ’তি করতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, নিজের অতি বিশ্বস্ত কয়েকজন মাদ্রাসা ছাত্রের মাধ্যমে জান্নাতকে ভিন্ন কোথাও সরিয়ে থাকতে পারেন মামুনুল। এই ছাত্ররা তার একান্ত আস্থাভাজন। এই ছাত্ররাই জান্নাতের ছেলে আব্দুর রহমানকেও পল্টনে অনুসরণ করেছেন বলে মনে করেন আব্দুর রহমান। মূলত মিডিয়ায় আর কোনো সেনসিটিভ তথ্য যেন ঝর্নার বরাতে বেরিয়ে আসতে না পারে, সে চেষ্টা করেছেন মামুনুল হক- এমন ধারণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনৈকেরই।
আহমদ শফীপন্থী হেফাজতের একাংশের কয়েকজন বলেছেন, মামুনুল হক ধূর্ত প্রকৃতির লোক। তার দ্বারা সবই সম্ভব। এর আগেও আমরা দেখেছি, সরকারকে চাপে ফেলতে নিজেরা গা ঢাকা দিয়ে গু’মের অভিযোগ তুলেছে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা। মামুনুল সে পথেই হাঁটছেন।
ধর্ম ব্যবসায়ী এই ভ’ণ্ড নিজে বাঁচতে জান্নাতের ক্ষ’তিও করতে পারেন। তাই জান্নাত ও তার ছেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে মামুনুলকে গ্রেপ্তার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহবানও জানান তারা। নিউজব্যাংক।