বিশেষ প্রতিবেদন:
দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসাগুলোতে উত্তে’জনা সৃষ্টি হয়েছে। কওমী আবাসিক মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে এই উত্তে’জনা সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা হেফাজতের নেতাদেরকে ঘেরাও করেছেন। মাদ্রাসা বন্ধ করার পেছনে হেফাজত নেতাদের উগ্রবাদী আচরণ, সরকারবিরোধী অবস্থানকে দায়ী করছেন।
একাধিক সূত্র বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসাগুলোতে কওমী শিক্ষার্থীরা জড়ো হচ্ছেন এবং তারা হেফাজতের নেতাদের বিরু’দ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন।
হেফাজতের নেতাদের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা গত কিছুদিন ধরেই হেফাজতের নিয়ন্ত্রণে নেই। তারা তাদের মতো করে কাজ করছে, নির্দেশ অ’মান্য করছে। হেফাজতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ২৬ এবং ২৭ মার্চে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে তা’ণ্ডব হয়েছে, বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং হাটহাজারীতে যা হয়েছে সেটি হেফাজতের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো না।
হেফাজতের নেতারা শিক্ষার্থীদেরকে মাদ্রাসায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানালেও সেই অনুরোধ কানে নেয়নি কেউ। তবে হেফাজতের নেতারা এটাও মনে করেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাদের বড় শক্তি। শিক্ষার্থীরা না থাকলে হেফাজতকে আর কেউ পাত্তা দেবে না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণে মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে হেফাজতের নেতাদের দূরত্ব এবং বিরোধ তৈরি হচ্ছে।
বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিলেন তখন থেকেই শিক্ষার্থীরা মনে করছেন তাদের একটা ভবিষ্যৎ ভিত্তি তৈরী হলো, তারা এখন উগ্রবাদী পথ থেকে সরে এসে আস্তে আস্তে নিজেদের ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারে মনোনিবেশ করবেন। আর এ কারণেই অধিকাংশ মাদ্রাসার ছাত্ররা চায়, সরকারের সঙ্গে একটা সম্পর্ক রেখে তাদের ভবিষ্যতে পেশাগত জীবন যেন মসৃণ হয়, তারা যেন মুলধারার চাকরিতে ঢুকতে পারে তা নিশ্চিত হয়।
কিন্তু আহমদ শফীর মৃ’ত্যুর পর জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই বড় একটি অংশ উগ্রবাদী অবস্থানে চলে যায়। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করা নিয়ে তারা যে তা’ণ্ডব সৃষ্টি করে তাতে কওমী মাদ্রাসার প্রতি সরকারের যে সহানুভূতির জায়গা ছিলো তা নড়বড়ে হয়ে গেছে। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সরকার এখন কঠোর অবস্থানে।
এখন কওমী মাদ্রাসাগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে হেফাজতের শিক্ষার্থীরা কোথায় থাকবেন এটি তাদের বড় মাথাব্যথার কারণ। তারা মনে করছে, হেফাজতের নেতারা তাদেরকে ব্যবহার করে নিজেরা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছে। নিজেদের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের জন্য মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
দেশের অন্তত ১২টি মাদ্রাসায় এখন পর্যন্ত হেফাজতের বিরু’দ্ধে বিদ্রোহ এবং বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। তাদের কথা একটাই, হেফাজত যেন সরকারের কাছে ক্ষমা চায় এবং মাদ্রাসাগুলো খোলা রাখার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতার চেষ্টা করে। না হলে হেফাজতের নেতাদের বিরু’দ্ধেই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করবে এমন হুম’কি দিচ্ছে।
হেফাজতের একাধিক নেতা বলছেন, কওমী মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করার ফলে কিছু কিছু শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এজন্য তারা সরকারের কাছে দাবি জানাবেন। তবে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, সরকারের সাথে সহিং’সতা বা সরকারকে হুম’কি-ধামকি দিয়ে এই সমস্ত দাবি আদায় করা যাবে না। বরং সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতার মাধ্যমেই কওমী মাদ্রাসাগুলোকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
এজন্য তারা অপেক্ষাকৃত নমনীয় এবং সরকার যাদের প্রতি সহানুভূতিশীল এমন নেতৃত্ব হেফাজতে থাকা উচিত বলে মনে করছেন। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ হেফাজতকে নতুন সংকটের মধ্যে ফেলেছে। বাংলাইনসাইডার।
253