হেফাজত নেতাদের সমালোচনা করে পদ ছাড়লেন নায়েবে আমীর আব্দুল্লাহ হাসান

0

সময় এখন ডেস্ক:

নানা ঘটনায় বিত’র্কের মধ্যে থাকা ধর্মকেন্দ্রীক রাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নায়েবে আমীরের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান।

মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, মোদিবিরোধী বিক্ষোভের নামে দেশে যা হয়েছে, তাতে তিনি উদ্বিগ্ন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে, এই স্বাধীনতা একটি সমষ্টিগত অর্জন। স্বাধীনতার সুবিধা এবং স্বাধীনতার আবেগ, অনুভূতি, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার অধিকার সকল নাগরিকের রয়েছে। তাই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমি বাংলাদেশের সকল জনগণকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে আগে ও পরের বি’শৃঙ্খল পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এহেন পরিস্থিতিতে হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মত মহান নেতৃত্বের শূন্যতা অনুভব করছি।

আহমদ শফীর মৃ’ত্যুর পর হেফাজতে ইসলামে সংকট তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি বলেন, হেফাজতে ইসলামে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গ্রুপিং, দলাদলি সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের অঙ্গনে ভিনদল ও ভিন মতাদর্শের মানুষ অনু-প্রবেশ করেছে এবং তারাই তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে হেফাজতে ইসলামকে অত্যন্ত সুকৌশলে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে।

এরই অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলামকে তারা অনেকটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছে এবং ওই বিত’র্কিত বহিরাগত সংগঠনের লোকজনই হেফাজতে ইসলামের নেতাদের অধিকাংশের মতামত উপেক্ষা করে হরতালের মত জনভো’গান্তিকর কর্মসূচি পালনে বাধ্য করেছে।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা’রা যান হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের মহাপরিচালক আহমদ শফী, যার নেতৃত্বে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল।

তার আগের দিন মাদ্রাসায় তুমুল ভাঙচুরের মধ্যে শফী মহাপরিচালকের পদ ছাড়তে বাধ্য হন। তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানীকেও বহিষ্কার করে বাবুনগরী, কাসেমী ও মামুনুল হকদের গ্রুপ।

পরে ১৫ নভেম্বর শফীর অনুসারীদের বিরোধিতার মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের সম্মেলন হয়, তাতে আমির পদে আসেন জুনাইদ বাবুনগরী।

মাওলানা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান নিজের পদত্যাগের ঘোষণায় বলেন, হেফাজতে ইসলাম এখন কিছু ব্যক্তির ‘নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের একটি প্ল্যাটফর্ম’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমি হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর পদ থেকে ইস্তফা প্রদান করলাম। আমার ইস্তফা প্রদানে কে বেজার হল, কে খুশি হল- এটা আমার দেখার বিষয় নয়, আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমার হেফাজতে ইসলাম থেকে ইস্তফা প্রদান ইসলাম, দেশ ও জাতির অধীকতর কল্যাণের লক্ষ্যে।

আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান বলেন, এখন থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডের দায়ভার আমি বা আমার দল বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন নেবে না।

বিগত কয়েকদিন অনা’কাঙ্ক্ষিতভাবে হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০ জন নিহ’ত ও অসংখ্য আহত হওয়ায় আমি গভীরভাবে ব্যথিত হয়েছি। বাংলাদেশ সরকারসহ সর্বস্তরের জনগণকে উক্ত নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহবান জানাচ্ছি।

কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ার পাশাপাশি ‘নিরীহ আলেম ওলামাদের’ হয়রা’নি না করার আহ্বান জানান ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি।

সংগঠনের সহ সভাপতি আব্দুল বাতেন, মবিন উদ্দিন আহম্মদ, নওশী মিয়া, আব্দুল বাতেন নোমান, আবুল কাশেম চাকলাদার, মহাসচিব আ. রহমান খান ফরায়েজী, যুগ্ন-সম্পাদক নুরুল ইসলামসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!