বিশেষ প্রতিবেদন:
হেফাজতে ইসলামের ভাঙন এখন স্পষ্ট। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের দিন দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পর মূলত তাদের আসল চেহারা সবার সামনে এসেছে।
এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিষোদ্গার, ইসলামের নামে দেশের শান্তি শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ও স্মৃতিসম্ভ ভাঙচুর করা, রাষ্ট্রীয় দপ্তরে আগুন দেয়া ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠনের শীর্ষ নেতা মামুনুল হকের নারী কেলে’ঙ্কারীর পর সাধারণ মানুষের মত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও প্রতিবাদ করছেন।
মামুনুল হকের মত একজন ল’ম্পটকে সাজা দেওয়ার পরিবর্তে উল্টো এসব তার ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা সংগঠনের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীর ওপর চটেছেন দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ। গত দুদিন আগে ১২টি মাদ্রাসায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে ইসলামের নামে হেফাজতের ধ্বং’সাত্মক কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের বলি হওয়া নিরীহ দরিদ্র মাদ্রাসা ছাত্রদের পক্ষে।
কেন সাধারণ ছাত্ররা রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের কারণে নিজেদের প্রাণ দেবে, কেন তাদের কওমি সনদকে বাতিল করার জন্য চাপ আসবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে, কেন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলবে হেফাজতের নেতারা- প্রশ্ন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের। এই ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন হেফাজতে ইসলামের মূল ধারা- অর্থাৎ আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারীগণ।
আহমদ শফীর মৃ’ত্যুর সাথে বাবুনগরী, মামুনুল হকসহ ৪৩ জনের জড়িত থাকার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। কেন আহমদ শফীর ময়না তদন্তে বাধা নিয়েছিলেন বাবুনগরী ও মামুনুল হকরা, সে প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে। তাদের কিসের ভয় ছিল? সত্য বেরিয়ে আসবে বলে? এসব প্রশ্ন করেছেন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
এর পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের বিপুল অংকের অর্থ তছরুপের কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে জুনায়েদ বাবুনগরীর। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচারও দাবি করেছেন তারা। এ দাবি হেফাজতে ইসলামের তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীরও। বিশেষ করে মামুনুল হকের অপকর্ম ঢাকা দিতে সংগঠনের মুরুব্বিদের বৈঠকে বাবুনগরীর তোড়জোড় দেখেই বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
উল্লেখ্য, জুনায়েদ বাবুনগরীর আর্থিক দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করেছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতা মাওলানা সলিমুল্লাহ।
আর্থিক হিসাবের নয়-ছয় এবং এতদসংক্রান্ত বিষয়ে অডিটে বাধা প্রদান, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশে বাধা, বছরের পর বছর হিসাব নিষ্পত্তি না করে ফেলে রাখাসহ দুর্নীতির নানান তথ্য জনসম্মুখে কিছুদিন আগেই তুলে ধরেছেন সংগঠনের অডিটর হিসেবে দায়িত্বরত চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি অঞ্চলের হেফাজতে ইসলামের এই বর্ষীয়ান নেতা।
সে সময় মাওলানা সলিমুল্লাহর বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তাকে বলতে দেখা যায়-
‘আপনারা আমাকে জানেন, আমি, হাফেজ জুনায়েদ সাহেব (জুনায়েদ বাবুনগরী) আপনার সাথে ২২ বছর এই ফটিকছড়ির ভেতর নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। আপনি সভাপতি, আমি সেক্রেটারি। আমার সাথে বাড়াবাড়িতে যাবেন না আপনি। আপনারা বড় মানুষ।
আপনি যদি আমার সাথে খেলা খেলেন, আমি খেলায় হারলেও সেটা আমার জয়, কিন্তু আপনি যদি হেরে যান, আপনার জন্য তা জেতার জিনিস নয়। কার সাথে লাগবেন, এটা ভাবার চেষ্টা করবেন।
আপনি ৫ এপ্রিল (আসলে ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনা) এর ঘটনার মধ্যে কী যেন নাম, সাদেক হোসেন খোকার হাত থেকে নেয়া ৫০ লক্ষ টাকার হিসাব কোথায়?
আমি তো হেফাজতের অডিটর। ৫০ লক্ষ টাকা হেফাজতের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে? আপনি বারডেম হাসপাতালে ছিলেন। ২০ লক্ষ টাকা যে আপনার চিকিৎসা বাবদ গেছে, এই ২০ লক্ষ টাকার হিসাব এ পর্যন্ত দিয়েছেন? এটার হিসাব এ পর্যন্ত এসেছে?
তারপর আল্লামা শায়খুল ইসলাম আহমদ শফি (র.) যে ২৫ লক্ষ টাকা ক্যাশ দিয়েছিলেন, এই ক্যাশ কোন খাতে জমা হয়েছে কি না?
একসময় আমি অডিটরের প্রধান, এরপর মোহতরম মোজাহেরুল সাহেব সদস্য, মাওলানা ইসহাক নূর সদস্য, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদি সদস্য.. প্রমুখ সকল সদস্য। আমরা গুছিয়ে আনি। রিপোর্ট তৈরী করার আগে কমিটিটা ভেঙে যায়।
এরকম করতে করতে আজ ৭ বছর হয়েছে মনে হয়, তারপরেও হেফাজতের মূল কমিটির মূল ফান্ডে, এখনও পর্যন্ত তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হতে পারে না, কেন?
আমার রাগাবেন না। আমি অনেক কথা জানি…।’
ভিডিও:
613