‘আমার বাইকটা নিয়ে গেছে’‌- থানায় বসেই কেঁদে উঠলেন শাহনাজ

0

সময় এখন ডেস্ক:

জীবিকার তাগিদে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং বেছে নিয়েছিলেন রাজধানীর মিরপুর নিবাসী শাহনাজ আক্তার পুতুল। দিনে-রাতে যাত্রী পরিবহন করতেন জীবন সংগ্রামী এই নারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে পেয়েছিলেন মানুষের প্রশংসাও।

প্রায় ২ মাস ধরে রাইড শেয়ারিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মোটরবাইক চালাচ্ছেন শাহনাজ। দুই কন্যার লেখাপড়ার ও সংসারের খরচ বহন করতেন এভাবেই। কিন্তু প্রতারক চক্রের খপ্পড়ে পড়ে আজ (মঙ্গলবার) নিজের উপার্জনের একমাত্র সহায় বাইকটি হারিয়ে এখন অঝোরে কেঁদেই চলছেন শাহনাজ।

আজ বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শেরেবাংলা নগর থানা এলাকার খামার বাড়ি মোড় থেকে এক ব্যক্তি তার বাইকটা নিয়ে সটকে পড়েছেন। থানায় জিডি দায়ের করার পর এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।

যেভাবে চুরি হল শাহনাজের বাইক

বাইক চুরির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই নারী বলেন, ‘গত ৫ দিন আগে জনি নামে একজনের সাথে পরিচয় হয়। সে নাকি বাইকের পার্মানেন্ট ট্রিপ মারেন। আমাকে বলছিল, আপা আপনি পার্মানেন্ট ট্রিপ মারতে পারেন না? আমি বললাম, খুঁজি তো, এগুলা পাইনা ভাই। আপনার কাছে আছে নাকি? সে বললো, আমি তো পার্মানেন্ট মারি। জিজ্ঞেস করলাম, এটার সিস্টেম কি? জানালো, কয়েকজন ড্রাইভার ঠিক করে রাখেন। যখন স্যার ম্যাডামদের সিরিয়াস দরকার হয় তখন তাদের ট্রিপ দেন।

জানতে চাইলাম, টাকা পয়সা দেয় কীভাবে? বললো, ধরেন খামার বাড়ি থেকে উত্তরা এয়ারপোর্ট যাবেন আবার নিয়ে আসবেন। আসার পর আপনার ডিউটি শেষ। আপনাকে তেলের খরচসহ ১,২০০ টাকা দিয়ে দেবে। বললাম, এরকম হলে তো ভালই হয়। ২ ঘণ্টায় দিয়ে যদি ১ হাজার টাকা আয় হয় তবে তো ভাল।

শাহনাজ বলেন, পরদিন সে আমাকে ফোন দিয়ে গাড়ির কাগজের একটা কপি নিয়ে দেখা করতে বললো। গত ২ দিন আগে আমি তার সাথে দেখা করে গাড়ির কাগজপত্র দিয়ে দেই। আজকে (মঙ্গলবার) সকালে বড় মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়েছিলাম দুপুরে। এ সময় জনি আমাকে কয়েকবার ফোন দিয়েছে। কী হয়েছে- জানতে চাইলে বললো, আপনার চাকরি হয়ে গেছে। আপনি দ্রুত বাইক নিয়ে খামার বাড়ি চলে আসেন। এরপর আমি খামার বাড়ি চলে যাই। তখন সে রাগ হয়ে আমাকে বলে আসতে দেরি দেখে ম্যাডাম অন্য রাইডার নিয়ে চলে গেছে। যাই হোক, চিন্তার কারন নাই, চাকরি হয়ে গেছে আপনার এই খামার বাড়িতে।

তারপর সে বলল, আমাকে অফিসের কাজে বিমানবন্দর যেতে হবে। আমাকে নিয়ে চলেন। আপনার যে ভাড়া দৈনিক দেবার কথা সেটাই আপনি পাবেন। এরপর সে আমার বাইকে চড়ে বিমানবন্দরে গেল। সে তার ল্যাপটপের ব্যাগ আমার কাছে রেখে একটা অফিসে ঢুকে কী যেন কাজ করে আবার বের হয়ে এল। এসেই আমাকে বললো- চলেন এখানকার কাজ শেষ। এরপর আসার সময় সে অন্য একটা অফিসে ঢুকে ১০ মিনিট কাজ করে বেরিয়ে এল। বেলা ৩টার দিকে আবারো আমার বাইকে চড়ে খামার বাড়ি মোড়ে এল। এরপর অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে কাকে যেন ফোন করে বলল- দ্রুত আজকের বাইকের বিলের কাগজটা নিয়ে আসো তো।

ফোন রেখে দিয়ে সে আমাকে বললো- চলেন চা খাই। আমরা সংসদ ভবনের সামনের টিএন্ডটি মাঠের পাশের একটা চায়ের দোকানে চা খাই। তারপর সে আমাকে বললো- কাওরান বাজারে যাব, একটা কাজ আছে। আপনি ভাড়া পাবেন।

আমি বললাম- ভাই আমার গাড়িতে তো তেল নেই। সে বললো- সমস্যা নাই আমি তেল কিনে দিচ্ছি। তখন আমি বাইকে চাবি দিয়ে চালাতে যাব, এমন সময় সে বললো- আপনাদের এই বাইক কীভাবে চালায় দেখিতো.. বলে সে আমার বাইকে বসে ক্লাচ চালু করল। আমি বললাম আমার বাইকে এভাবে ক্লাচ টানলে কাজ হবে না। এমন সময় সে বাইকের ক্লাচ টেনে জোরে একটা টান দিল আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফাঁকা রাস্তায় হাওয়া হয়ে গেল।

আমি পাগলের মত পিছনে দৌড়ালাম, কিন্তু তার আর দেখা পাই না। আমি দ্রুত তখন দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকে বললাম। পুলিশ আমাকে থানায় পাঠালো। আমি থানায় গিয়ে একটা জিডি দায়ের করেছি।

কাঁদতে কাঁদতে ওই নারী বলেন, ‘আমার ২টা মেয়ের পড়ালেখা আমার সংসার সব কিছুই এই বাইকের উপার্জনের টাকায় চলে স্যার। আমার বাইকের টাকা এখনো শোধ করতে পারি নাই।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সিনিয়র সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘এরই মধ্যে শাহনাজের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে থানায়। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করবো। আজ রাতের ভেতরে সবদিকে তল্লাশি করে বাইকটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

শাহনাজ ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। রাজধানীর মিরপুরেই জন্ম শাহনাজের। তার বাবা নেই, মা আর বোনেরা আছেন। শাহনাজ জানালেন, ২০০০ সালে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন শাহনাজ। কিন্তু দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি, ছাড়াছাড়িও হয়নি। এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত বলতে চান না। ২ মেয়েকে নিয়ে মা–বোনদের সহায়তায় দিন যাচ্ছিল তার। এক মেয়ে ৯ম ও এক মেয়ে ১ম শ্রেণিতে পড়ে। খুবই কষ্টে দিন যাচ্ছিল। অগত্যা বাইক নিয়ে পথে নেমে পড়েছেন জীবন সংগ্রামে।

বাংলা রিপোর্ট

শেয়ার করুন !
  • 1
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!