❝কেন এই নিঃসঙ্গতা, কেন এই মৌনতা?❞

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

গত বছরের ১৫ নভেম্বর হেফাজতের আমির নির্বাচিত হয়েছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী। সে সময় তিনি হেফাজতে প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। এমনকি আহমদ শফীর পুত্র, তার আত্মীয় স্বজনকে তিনি বিদায় করে দিয়েছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে। এরকম জনপ্রিয়তা এবং প্রতাপ নিয়েই হেফাজতকে তিনি করতলগত করেছিলেন।

কিন্তু ৫ মাস যেতে না যেতেই হেফাজতেই তিনি এখন বিত’র্কিত নেতায় পরিণত হয়েছেন। হেফাজতের যারা উদ্যোক্তা এবং হেফাজতের যারা প্রসিদ্ধ আলেম-ওলামা হিসেবে পরিচিত, তারা এখন বাবুনগরীর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে চাইছেন। তারা এখন হেফাজতের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য বাবুনগরীকেই একটি বড় বাধা মনে করছেন।

যে বাবুনগরী একসময় ছিলেন হেফাজতের একটি সম্পদ, তিনি এখন হেফাজতের এক দায়ে পরিণত হয়েছেন। আর একের পর এক বিভিন্ন নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাবুনগরী যেন ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে যাচ্ছেন।

গত রোববার রাতে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুখপাত্র আজিজুল হক ইসলামাবাদী গ্রেপ্তার হন। আজিজুল হক ইসলামাবাদী ছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরীর অন্যতম প্রধান শক্তি। তার মাধ্যমেই তিনি সারাদেশে হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। এখন আজিজুল হক ইসলামাবাদী গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাবুনগরী কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

আরেক ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মামুনুল হক এখন বিয়ে, প্রেমসহ নানা বিত’র্কে জর্জরিত। এই প্রেক্ষিতেই একটি সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জুনায়েদ বাবুনগরীর জন্য। তিনি ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন। এমনকি তিনি যে সমস্ত নির্দেশ, আদেশ দিচ্ছেন সেগুলো প্রতিপালন করছেন না হেফাজতের অন্যান্য নেতারা।

গতকাল হেফাজতের পক্ষ থেকে বাবুনগরী সরকারের বিরু’দ্ধে কঠোর এক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, নেতাকর্মীদের মুক্তি না দেয়া হলে দুর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কিন্তু এই বক্তব্য গ্রহণ করেনি হেফাজতের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ। তারা এই সমস্ত বক্তব্য উগ্রবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ এবং হঠকারী বলে চিহ্নিত করেছেন।

হেফাজতের আমির বিভিন্ন মাদ্রাসায় দুর্গ গড়ে তোলার জন্য এক গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন সেই গোপন বার্তাও প্রতিপালন করেননি আলেম-ওলামারা। জুনায়েদ বাবুনগরী সরকারের নির্দেশ অ’মান্য করে বিভিন্ন মসজিদে জামাত আদায়ের যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সেটিও হেফাজত নেতৃবৃন্দের মানেনি।

হেফাজতের একাধিক নেতারা বলছেন, জুনায়েদ বাবুনগরী একটি রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থের জন্য হেফাজতকে ব্যবহার করতে চাইছেন। কিন্তু এটি করা উচিত নয়। এটা করা সম্ভব নয়। হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এবং এই সংগঠনের যে নীতি এবং আদর্শ সেটি সম্পূর্ণ ভাবে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক।

কাজেই সরকারের সাথে কথায় কথায় যুদ্ধ করা, বাহাসে লিপ্ত হওয়া এবং সরকারকে একটি বিপদাপন্ন পরিস্থিতিতে ফেলার যে মানসিকতা, সে কারণেই বাবুনগরীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছেন অনেকে। আর এ কারণেই জুনায়েদ বাবুনগরীর যে প্রভাব এবং প্রতিপত্তি ছিলো হেফাজতের ওপর, তা ক্রমশ খর্ব হতে বসেছে।

একাধিক হেফাজতের নেতা বলছেন, হেফাজত একটি শক্ত অবস্থানে গিয়েছিল এবং কওমি মাদ্রাসাগুলোর সঙ্গে সরকারের একটি সম্পর্কের ভিত্তিতে কওমি মাদ্রাসারগুলোর উন্নতির ছোঁয়া লক্ষণীয় ছিলো। এখন জুনায়েদ বাবুনগরীর কারণে সবকিছুতে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এখন তারা বাবুনগরীকেই বোঝা মনে করছেন। জুনায়েদ বাবুনগরী বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকদেরকে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি হালে পানি পাচ্ছেন না। ফলে এখন তার পাশে আর কেউই নেই।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!