সরকারের সময়োপযোগী কৌশলে হেফাজতের দফারফা

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

কদিন আগেও হেফাজতের হুংকারে মানুষ ভয় পেত। সাধারণ মানুষ মনে করতো নতুন কোনো সংকট আসছে! হেফাজতের উত্থানে অনেকেই আত’ঙ্কিত হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু এখন হেফাজত মিনমিনিয়ে কথা বলছে। হেফাজতের কথাবার্তার মধ্যে সেই হুংকার নেই, জোশ কমে গিয়ে নিস্তেজ ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের কার্যকরী কৌশলে হেফাজত নিস্তেজই শুধু হয়নি, দফারফা হয়ে গেছে তাদের। হেফাজতের মধ্যে যেমন গ্রুপিং তীব্র হয়েছে তেমনি অনিশ্চয়তাও বেড়েছে। সরকার যে সমস্ত কৌশলে হেফাজতকে ‘সাইজ’ করেছে, সেসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে-

১. আবাসিক কওমি মাদ্রাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত: সরকার আবাসিক কওমি মাদ্রাসা বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা হেফাজতকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ হেফাজতের নেতারা এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে পুঁজি করেই নিজেদের আখের গুছিয়ে নেন। এখন যখন মাদ্রাসাগুলো বন্ধ হবে, বিশেষ করে রোজার মধ্যে যখন মাদ্রাসা বন্ধ হবে তখন তাদের আয় উপার্জনের একটি বড় পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

ইতিমধ্যে হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী প্রকাশ্যেই বলেছেন, মাদ্রাসা দান-খয়রাতের ওপর চলে। রোজাই তাদের দান-খয়রাত পাওয়ার সবচেয়ে বড় সময়। এই সময় যদি কওমি মাদ্রাসা বন্ধ হয় তাহলে একটি বিপ’র্যস্ত অবস্থা হবে।

আবার এই কওমি মাদ্রাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত হেফাজতের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মনে করছেন, হেফাজতের নেতাদের বাড়াবাড়ির জন্যই সরকার মাদ্রাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য তারা হেফাজতকেই দুষছেন। ফলে এক ধরনের উভয় সংকটে পড়েছে হেফাজত।

২. সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার: সরকার হেফাজতের ব্যাপারে একটি পরিকল্পিত কৌশল গ্রহণ করেছেন। সরকার কখনই হেফাজতের বিরু’দ্ধে আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়ে প্রথম ধাক্কায় সব বড় বড় নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করেনি বরং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বেছে বেছে গ্রেপ্তার করছে।

আহমদ শফীর মৃ’ত্যুর বিষয়টিও সরকার ঠান্ডা মাথায় আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তদন্ত করেছে। তদন্তের ব্যাপারে পিবিআই এর একটি নিরপেক্ষ ইমেজ আছে। পিবিআই এর তদন্তের মাধ্যমে আহমদ শফীর হ’ত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুনগরী এবং মামুনুল হক অভিযুক্ত হয়েছে। এটি হেফাজতের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভক্তি আনবে নিশ্চিত করেই বলা যায়।

এর ফলে হেফাজত সাংগঠনিকভাবে শুধু দুর্বল নয় বিভক্ত হয়ে পড়বে। যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় এটি নিয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করছেন না এবং হেফাজতও এটি নিয়ে উচ্চবাচ্য করার সাহস পাচ্ছে না।

৩. মামুনুল কাণ্ড: এক মামুনুলই সাধারণ মানুষের কাছে হেফাজতের মুখোশ খুলে দিয়েছে। তার কারণেই হেফাজত সম্মান হারিয়েছে বলে সংগঠনের নেতারা মনে করেন। মামুনুলের পরকীয়া, ব্য’ভিচার, একাধিক বিয়ে নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে।

এটি হেফাজতের আদর্শ ও নীতিকে পর্যুদস্ত করেছে বলে হেফাজতের নেতারা স্বীকার করছেন। সরকার মামুনুলকে উন্মোচনের ক্ষেত্রে যে সাফল্য দেখিয়েছে সেই কৌশলে হেফাজত পরাজিত হয়েছে। এখন মামুনুলদের মুখ দেখানোর জায়গা নেই বলেই মনে করছেন অনেকে।

৪. জনমত তৈরি: সরকার সফলভাবে হেফাজতের বিরু’দ্ধে একটা জনমত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে ২৬ এবং ২৭ মার্চ হেফাজত সারাদেশে যে তা’ণ্ডব করেছে সেই তাণ্ডবের ব্যাপারে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং এজন্য হেফাজতকে দায়ী করেছে। পাশাপাশি রয়েল রিসোর্টে ভাঙচুরের ঘটনাটিও মানুষ সহজভাবে নেয়নি। এর ফলে হেফাজত ক্ষ’তিগ্রস্ত হয়েছে।

৫. আলেম-ওলামারা হেফাজতের বিরু’দ্ধে: সরকারের কৌশলের কারণে দেশের আলেম সমাজ হেফাজতের বিরু’দ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং আলেম সমাজ প্রকাশ্যে হেফাজতের বিরু’দ্ধে কথা বলছেন। এটি হেফাজতের জন্য অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর হয়েছে। হেফাজত যে প্রকৃত ইসলাম না, এটি প্রতিষ্ঠা করতে সরকারের সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে।

আর এসব কারণেই এখন হেফাজতে ইসলামের ব্যাপারে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের আর আবেগ অনুভূতি কাজ করছে না। আর এই সরকারের কৌশলের কারণেই সংগঠন হিসেবে তছনছ এবং অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে হেফাজত। বাংলাইনসাইডার।

শেয়ার করুন !
  • 357
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!