বিশেষ প্রতিবেদন:
সাবেক ডাকসু নেতা এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেনের শিবির পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসের রজতজয়ন্তী উদযাপন ন’স্যাৎ করার লক্ষ্যে রাজধানীতে অরাজকতা সৃষ্টি করেন তিনি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঠেকানোর অজুহাতে ২৫ মার্চ রাজধানীতে সহিং’সতা ছড়ানোর পটভূমি সৃষ্টি করে দেন তিনি।
ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারকে সামনে রেখে আয়োজিত কর্মসূচিতে উগ্রবাদী বক্তব্য দিয়ে উসকানি দেন বিএনপি-জামায়াত জোটের অন্যতম শরিক জমিয়তের যুব নেতা এবং শিশুবক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী। এরপরই মিছিল নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয় আখতারের সঙ্গীরা। পুলিশের সঙ্গে এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় তাদের। পরের দিন এই ঘটনাকে ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে দেশজুড়ে না’শকতা শুরু করে হেফাজত।
এরপর, ৩ দিনব্যাপী হেফাজতের না’শকতায় ক্ষ’তিগ্রস্ত হয় থানা-হাসপাতাল-গ্যাসফিল্ড-ভূমি অফিসসহ হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পদ। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয় চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত সাধারণ মানুষের ঘরবাড়িতে। এমনকি নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে দেশের কোটি কোটি মুসলমানকে ‘কাফের’ বলে ফতোয়া দেয় হেফাজতের ধর্মব্যবসায়ীরা।
সরকার তাদের প্রতি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করলে খোলস থেকে বেরিয়ে পড়েন সাবেক ডাকসু ভিপি ও বাংলাদেশ ছাত্র-যুব ও শ্রম অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক নুরু। ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিন নিজের ফেসবুক পেজ থেকে আওয়ামী লীগের লোকদের ‘মুসলমান নয়’ বলে অভিহিত করেন নুরু। উগ্রবাদী ভঙ্গিমায় ফতোয়া দিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানির মাধ্যমে আবারো দেশকে অস্থির করে তোলার চূড়ান্ত চেষ্টা করেন নুরু।
এর আগে, স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন বানচালের চেষ্টার সময় ২৫ মার্চ পুলিশের ওপর হাম’লার ঘটনায় আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছিল পুলিশ। আটক ওই ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে নিলে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের কর্মীরা তাকে তুলে নিয়ে যায়।
পুলিশের নিরাপত্তা থেকে আসামিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সামনে থেকে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৪ এপ্রিল আখতারকে আদালতে তোলা হলে তার জামিন চাইতে আসেন শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি শিশির মনির।
এই শিশির মনির ইতোপূর্বে ১৯৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা ও আল-বদর বাহিনীর কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ ও কামারুজ্জামানের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন।
শিবিরের পক্ষে জনবল সংগ্রহ করতে অনলাইনে নিয়মিত ছবক প্রদান করেন আইনজীবী শিশির মনির। এমনকি শিবিরের সেক্রেটারি হিসেবে মেয়াদ শেষ করার পর (২০১০ সাল) জামায়াতের টাকায় ব্যারিস্টারি পড়তে ব্রিটেনে পাঠানো হয়েছিল তাকে। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের যে কোনো অপরাধ ঢাকার জন্য তাদের হয়ে নিয়মিত মামলা পরিচালনা করেন তিনি।
এছাড়াও শিবিরের ক্যাডারদের আইনি সুরক্ষা দিতে, এক যুগের বেশি সময় থেকে তাদের মামলাগুলো সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী ফ্রিতে পরিচালনা করছেন শিশির মনির।
২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হাতে প্রাণ হারান ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক। রগকে’টে হ’ত্যা করে ম্যানহোলে ফেলে দেওয়া হয় তাকে। শিবিরের হাতুড়ি ও ধারালো অ’স্ত্রে অঙ্গ হারান সাইফুর রহমান, রুহুল আমীন, আরিফুজ্জামান, আসাদুর রহমানসহ আরো অনেক ছাত্রলীগ কর্মী। এসব মামলার আসামিদের পক্ষেও আদালতে আইনজীবী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন সাবেক শিবির সেক্রেটারি ও আইনজীবী শিশির মনির।
সম্প্রতি ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা ও হেফাজতকে মাঠে নামার ক্ষেত্র প্রস্তুতের অন্যতম কুশীলব আখতারের সঙ্গেও আদালতে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা গেছে তাকে।
উল্লেখ্য, হেফাজতের ৩ দিনব্যাপী না’শকতার বিভিন্ন ভিডিওচিত্র পর্যবেক্ষণ করে যাদের স্থানীয় পরিচয় চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি শিবির ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এছাড়াও ফতোয়াবাজ হেফাজত নেতা ও নারী কেলে’ঙ্কারীর হোতা মামুনুল হকের নিজের দল খেলাফতে মজলিস-ও বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক দল।
উগ্রবাদী মামুনুল হক খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব হওয়ার আগে সেই পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন শিবিরের আরেক সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি আহমদ আবদুল কাদের। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসের ৫০ বছর পুর্তির উদযাপন ন’স্যাতের লক্ষ্যে হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দেশজুড়ে সহিং’সতা ছড়িয়ে দেন মামুনুল হক।
কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের উসকে দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে নিজে নারায়ণগঞ্জের এক আবাসিক হোটেলে নারী নিয়ে জনতার হাতে ধরা খান তিনি। এরপর দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়।
কিন্তু ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মামুনুল হকের পক্ষে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করেন সাবেক ডাকসু ভিপি নুরু। ফেসবুকে একাধিক বিবৃতি দিয়ে সাধারণ মানুষকে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মামুনুলের সীমাহীন অপকর্মের তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ হয়ে পড়ায় নুরুর প্রোপাগাণ্ডা ব্যর্থ হয়ে যায়।
এরপর নতুন করে আওয়ামী লীগের লোকদের ‘কাফের’ ফতোয়া দিয়ে সহিং’সতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তিনি। নুরু এবং আখতার গত কয়েকবছর থেকে ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগে যুক্ত হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি খেলাফত মজলিস, জমিয়ত ও হেফাজতের সঙ্গে তাদের পরিকল্পিতভাবে পথচলার তথ্য-প্রমাণও প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। নিউজব্যাংক।