হেফাজতে ঢুকেছে হাজারো শিবির ক্যাডার, লক্ষ্য একটাই

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

একসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিবির মানেই ছিল এক আত’ঙ্কের নাম। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের নাম শুনলেই মানসপটে ভেসে উঠত একপাল হায়েনার ছবি। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ত্রা’সের রাজত্ব কায়েম করেছিল স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররা।

সে সময় বিরোধী মতের ছাত্র-শিক্ষক, রাজনৈতিক কর্মী কেউ তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। বিরোধীদের ধরে ধরে হাত-পায়ের র’গকেটে দেওয়ার কু-খ্যাতি অর্জন করেছিল ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা।

আন্তর্জাতিকভাবে কালো তালিকাভুক্ত এই সন্ত্রা’সী সংগঠনটির নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন রাজনৈতিক চাপের মুখে লুকিয়ে থাকলেও আবার হেফাজতের ব্যানারে সক্রিয় হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত সোমবার সকালে কক্সবাজারের পেকুয়ায় কৃষক লীগের সভাপতির পায়ের র’গকেটে আবারও আলোচনায় এসেছে শিবির ক্যাডাররা।

জানা গেছে, হেফাজতে ইসলাম নেতা মামুনুল হকের বেগানা নারীসহ আপত্তিকর অবস্থায় আটকের ঘটনার সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় কক্সবাজারে কৃষক লীগের নেতা সরওয়ার উদ্দিনকে প্র’হার শেষে পায়ের র’গকেটে দিয়েছে শিবিরের ক্যাডাররা।

সরওয়ার পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি। তিনি ওই ইউনিয়নের সবজীবনপাড়ার মোহাম্মদ আলমের ছেলে। এ ঘটনায় আহত সরওয়ার উদ্দিনের পক্ষে মঙ্গলবার পেকুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে অভিযুক্ত করা হয়েছে হেফাজতকর্মী ও সাবেক শিবির ক্যাডার মুবিনুল হক ও জালাল উদ্দিনকে।

বারবাকিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের নারী কেলে’ঙ্কারি নিয়ে সম্প্রতি ফেসবুকে পোস্ট দেন কৃষক লীগ নেতা সরওয়ার উদ্দিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে সরওয়ারের ওপর হাম’লা চালায় সাবেক শিবির ক্যাডার মুবিনুল হক, জালাল উদ্দিনসহ একদল হেফাজতকর্মী। তারা রড দিয়ে সরওয়ারের শরীরে আঘা’ত করে এবং তার ডান পায়ের র’গকেটে দেয়।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সরওয়ার উদ্দিন বলেন, গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে বারবাকিয়া ইউনিয়নের ফাঁইস্যাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এরপর পাশেই মানিকের দোকানে নাশতা করতে যান।

এ সময় দোকানের ভেতর বসে থাকা শিবির ক্যাডার মুবিনুল হক ও জালালের নেতৃত্বে একদল হেফাজতকর্মী তাকে ঘিরে ধরে। তারা ‘তুই হেফাজত নিয়ে বেশি লেখালেখি করছিস’ এবং বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ক’টূক্তি করে তাকে রড দিয়ে একাধারে প্র’হার করতে থাকে। একপর্যায়ে তার ডান পায়ের র’গকেটে দেয়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দেশের রাজনীতিতে জায়গা হারিয়ে ফেলে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির। এরপর গোপনে দল পরিচালনা করতে থাকে এই দেশবিরোধী অপশক্তি। সেজন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে আসেনি শিবির ক্যাডাররা।

এখন হেফাজতে ইসলাম দেশে ভারতবিরোধীতার জিগির তুলে নানা সহিং’স কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। এটাকেই সুযোগ হিসেবে নিয়েছে জামায়াত। দলটি হেফাজতের আড়ালে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় সারাদেশে যে তা’ণ্ডব চালানো হয়েছে, সবাই জানে এসবের মূলে রয়েছে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুন্না নামের এক শিবির ক্যাডার ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে।

প্রকাশ্যে অস্বীকার করলেও জামায়াতের বড় নেতাদের সাথে হেফাজতের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে জামায়াতপন্থী অনেকেই জায়গা করে নিয়েছে। আহমদ শফীর মৃ’ত্যুর পর বাবুনগরী হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ নেন। হেফাজতের নতুন কমিটির দেড় শতাধিক সদস্যের মধ্যে ৮৩ জনই বিএনপি জামায়াত জোটের বিভিন্ন শরিক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। এদের মধ্যে জামায়াত শিবির ও উগ্রবাদী সংগঠন খেলাফত মজলিসেরই রয়েছেন ৩১ জন।

এছাড়াও বিভিন্ন মাদ্রাসায় হাজার হাজার শিবির ক্যাডার ঢুকেছে। এরাই কক্সবাজারে কৃষক লীগ নেতার ওপর হাম’লা করেছে। এভাবে বেছে বেছে দেশের কয়েকটি জায়গায় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর চোরাগোপ্তা হাম’লা চালাচ্ছে শিবির ক্যাডাররা।

হেফাজতের নামে এই অপশক্তি আবার যদি সংগঠিত হতে পারে তাহলে দেশে আবারও অতীতের সেই ভী’তিকর দিন ফিরে আসবে। দেশকে পাকিস্থান-আফগানিস্তানে পরিণত করবে এই অপশক্তি। তাই হেফাজত এবং তাদের ভেতরে জামায়াত-শিবিরের যে তৎপরতা তা অতিদ্রুত বন্ধ করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে।

লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে কেনা স্বাধীনতাকে জামায়াত-হেফাজতের হাতে ধ্বং’স হতে দেওয়া যাবে না। জামায়াত-হেফাজতের এসব মধ্যযুগীয় কর্মকাণ্ড রুখে দাঁড়াতে সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানান সচেতন মহল।

শেয়ার করুন !
  • 171
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!