কাজলনগর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পটি সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি

0

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা:

সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার হেতাইলবুনিয়া (কাজলনগর) মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই গ্রামের সুধীর চন্দ্র মন্ডল ও অধীর চন্দ্র মন্ডলের দ্বিতল ভবনটি মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আশাশুনি থানা সদর থেকে দূরবর্তী যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ছিল নিরাপদ।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী জানান, ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুক্তিযোদ্ধারা এখানে অবস্থান করত। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, থাকা, খাওয়া ও অস্ত্রের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হত এ ক্যাম্পটি। মুক্তিযোদ্ধারা সকল ট্রেনিং নিয়ে পাকিস্থানি সেনা ও রাজাকারদের সাথে আশাশুনি, কেয়ারগাতি, গোয়ালডাঙ্গা, চাপড়া, খুলনা, সোনাডাঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে প্রত্যক্ষযুদ্ধে বহু শত্রুসেনাদের হত্যা করে। গোয়ালডাঙ্গা সম্মুখ যুদ্ধ ও কেয়ারগাতি যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, আমিন উদ্দীন আবুল হোসেন, মোজ্জামেল হক শহীদ হন।

সাবেক আশাশুনি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হান্নান বলেন, হেতাইলবুনিয়া ক্যাম্পটি পরবর্তীতে সম্মুখ যুদ্ধে নিহত শহীদ কাজল স্মরণে নামকরণ হয় কাজলনগর নামে। এই ক্যাম্পটির নেতৃত্ব দেন মৃত রহমতউল্লা দাদুভাই (বীর প্রতিক), শামছুল আবেদীন (অব: মেজর), শেখ কমরুজ্জামান, স.ম বাবর আলী, মৃত রফিকুল ইসলাম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আহ্বানে মুক্তি সংগ্রামে নেমেছিলেন এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা। তখন হেতাইলবুনিয়া গ্রামের নিরঞ্জন মন্ডল, রঘুনাথ মন্ডলসহ সকলেই মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দেন।

মহান যুক্তিযুদ্ধের অন্যন্য স্মৃতি বিজড়িত এই ক্যাম্পটি। কিন্তু অযত্ন অবহেলায় আজ বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। সংস্কারের অভাবে এই ক্যাম্পটির দ্বিতীয় তলার ছাদ ও দেয়ালে ধরেছে ফাটল। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা এবং এলাকাবসী দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হেতাইলবুনিয়া (কাজলনগর) মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পটি সংস্কারের দাবি করেন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই ক্যাম্পটিতে জড়িয়ে আছে অনেক জীবন বিপন্নকারী মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক দুঃখময় স্মৃতির ইতিকথা। সর্বশেষ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের হাসিও। কিন্তু বর্তমানে এই ক্যাম্পটির অবস্থা খুবই শোচনীয় এবং জরাজীর্ণ। ফাটল ধরেছে দেয়াল ও ছাদে। যে কোন মুহুর্তে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী স্মৃতির অতলগহবরে হারিয়ে যাওয়া বাড়িটিতে বর্তমান বসবাসকারীরাও দাবি করেন স্মৃতিটুকু সংরক্ষণের।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা জানান, আমি কাজলনগর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পটির বেহাল দশার কথা শুনে সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হান্নানকে ক্যাম্পে পাঠিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। দ্রুত এর স্মৃতি সংরক্ষণ ও সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!