হেফাজতিরা যা মেনে নিতে পারে, আর যা পারে না

0

মুক্তমঞ্চ:

হেফাজত ইসলামের মহাসচিব নুরুল ইসলাম গেহাদি গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, পবিত্র মাহে রমজান মাসে দেশের শীর্ষ আলেম-ওলামাকে হয়রা’নি মেনে নেয়া যায় না।

হেফাজতের সহকারী মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ও মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন রাজীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় বুধবার ইফতারের আগ মুহূর্তে হেফাজতের সহকারী মহাসচিব ও লালবাগ মাদ্রাসার মুহাদ্দীস মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন রাজীকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিচয়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়, তা মেনে নেওয়া যায় না।

তবে ইফতারের পরে গ্রেপ্তার করলে মেনে নেওয়া যেত কি না সেটা তিনি উল্লেখ করেননি।

এমন দুজন আলেমকে মাহে রমজানের শুরুতে এভাবে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া দেশের ইসলাম-প্রিয় তৌহিদী জনতার আবেগ অনুভূতিকে আঘা’ত করার শামিল, যা মেনে নেওয়া যায় না, বলেন নুরুল ইসলাম।

তবে তিনি একথা বলতে ভুলে গেছেন, কওমি মাদ্রাসায় দান হিসেবে দেওয়া দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ ফিতরার টাকা বা বড় অনুদান ও কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকায় গাড়ি বড়ি নিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করা মেনে নেওয়া যায়।

মাদ্রাসায় কী পরিমাণ টাকা দানে বা অনুদানে পাওয়া যায়, আর কত টাকা কোথায় কীভাবে খরচ হয় তার হিসাব দেওয়া কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কারণ এতে উনাদের একটু অসুবিধা আছে। সরকার আলেম-ওলামাদের সুবিধা অসুবিধা না দেখে আয় ব্যয়ের ব্যাংক হিসাব চাওয়া কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

চীনে উইঘুর মুসলিমদের ওপর যতই নির্যা’তন হউক না কেন, চীনাপন্থী বামদের সাথে নিয়ে, মধ্যপ্রাচ্যের টাকা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মুসলিম নির্যা’তন ও হ’ত্যা নিয়ে কথা বলা একটু অসুবিধা। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন প্রতিহতের উছিলায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জনগণের জান-মালের ক্ষ’তি করে অবাধে মিথ্যাচার করে দায় এড়ানোর চেষ্টা মেনে নেওয়া যায়।

তবে ভেজাল ওষুধ বানিয়ে শত কোটি টাকা লোপাট করে গ্রেপ্তার ও জেল এড়াতে ভয়ে বিদেশে পলাতক পিনাকী ভট্টাচার্যকে হেফাজতের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা বানানো হয়েছে গোপনে মোদিজীকে ম্যানেজ করার জন্য, তাই এটা মেনে নেওয়া যায়।

নিজেদেরকে অ-রাজনৈতিক সংগঠন ঘোষণার পরেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে অ’বৈধ উপায়ে সরকার পতনের আন্দোলন করা মেনে নেওয়া যায়, এতে টাকা বা হুর গেলমানের নিশ্চয়তা দিয়ে আওয়ামী লীগ (আসলে ছাত্রলীগ) থেকে আসা বেইমান নুরুর অনুসারীদের নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ব্যবহার করা জায়েজ, তা মেনে নেওয়া যায়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন প্রতিহতের উছিলায় মিথ্যা কথা বলে ও ভয় দেখিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে তা’ণ্ডব চালিয়ে শহীদ হবার (!) বা ডেডবডি ফেলার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা মেনে নেওয়া যায়। এ সময় নিহ’ত আহত নিরীহ ছাত্রদের খোঁজ খবর না নিয়ে হোটেল রিসোর্টে গিয়ে আমোদ ফূর্তিতে মেতে থাকা ব্যক্তিগত বিষয়, তাই সেটা মেনে নেয়া যায়।

তিনি আরেকটি কথা বলতে ভুলে গেছেন, শুধু মতপার্থক্য হওয়ার কারণে নিজেদের মুরুব্বী নেতাকে হ’ত্যা করার চরম গ’র্হিত কাজের সামান্য কিছু প্রমাণ পেয়েই হেফাজত নেতাদের বিরু’দ্ধে হ’ত্যার অভিযোগ আনা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

দেশের আইনকে থোড়াই কেয়ার করে আকাশ বাতাস সাক্ষী রেখে বিয়ে করা, ঘণ্টা চুক্তিতে মুতাহ বিয়ে করে ফুর্তি করা মেনে নেওয়া যায়। অ’সহায় নারীদের সাহায্য সহযোগিতার কথা বলে তার বিনিময়ে তাদের সাথে লিভ টুগেদার করা যায়, ধরা পড়লে সীমিত পরিসরে মিথ্যা কথা বলা যায়। কারণ তা না হলে সারা দেশের কওমি মাদ্রাসায় একটা পেচগি লেগে যায়।

মাদ্রাসায় পড়ুয়া গরীব শিশুদের হুর গেলমান ভাবা বা গণিমতের মাল ভাবা, মেনে নেওয়ায় কোনই অসুবিধা নাই। তাই তো কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে আবাসিক ছাত্রকে ধ- মামলায় বড়খারচর আদর্শ নূরানী ও হাফেজিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হেফাজত নেতা মুফতি ইয়াকুব আলীকে ১১ এপ্রিল ২০২১ গ্রেপ্তার কিংবা শিশু শিক্ষার্থীকে ধ- এর দায়ে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার বেলগাছি গ্রামের হেফজখানার শিক্ষক হেফাজত নেতা আবু মুসাকে ২০ মার্চ ২০২১ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা মেনে নেওয়া যায় না।

চাঁদপুরের কচুয়ার সাতবাড়িয়া তা’লীমুল মাদ্রাসার এক ছাত্রকে ধ- এর দায়ে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক হেফাজত নেতা ওমর ফারুককে (২২) গ্রেপ্তার, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার এক মাদ্রাসায় ১২ বছরের এক শিক্ষার্থীকে ধ- এর দায়ে গিয়াস উদ্দিন নামে এক শিক্ষককে পুলিশের আটক কী করে মেনে নেওয়া যায় বলতে পারেন!

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে জামিয়া ইসলামিয়া যাইনুল আবেদীন মাদ্রাসায় দুই শিক্ষক কর্তৃক ৫ শিশু ছাত্রকে ধ-, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে আল-ইহসান নূরানী কিন্ডারগার্টেন ও হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ২ শিশু শিক্ষার্থীকে ধ- এর দায়ে প্রতিষ্ঠানটির দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার,

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ছাত্রীকে ধ- চেষ্টা ও ছাত্রকে ধ- এর পৃথক দুটি অভিযোগে মক্তব চালানো মসজিদের ইমাম হেফাজত নেতা মো. আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের মত এমন কিছু ঘটনা প্রতিদিন ঘটতেই পারে এবং তা ঘটবে। দেশের আলেম উলামারা বাড়ি যেতে পারেন না, তাদের একটু আমোদ-ফুর্তির জন্য এসব ঘটনা মেনে নেওয়াই যায়।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমিতে ৮ বছরের শিশুটি নিজের জন্মদিনে দেখা করতে আসা মায়ের সাথে বাড়ি যেতে চাওয়ার অপরাধে একটু প্র’হার করেছেন তার ওস্তাদ।

মাদ্রাসার ওই শিক্ষক শিশুটির ঘাড় ধরে ঠেলতে ঠেলতে মাদ্রাসার একটি কক্ষে ঢুকিয়ে তারপর তাকে উচিৎ শিক্ষা দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এটাকে আবার ভাইরাল করা কী দরকার ছিল!

তার সূত্র ধরে ‘নাস্তিক মুরতাদ’ এর মিডিয়া বিবিসি এটা সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে এখন এসব নিয়ে আমাদের বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যা’তন দমন আইনের ধারা ৯(১) ও একই আইনের ধারা ২(ট) এর ভয় দেখানো শুরু করেছে, যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না, যায় না, যায় না।

সায়েদুল আরেফিন

শেয়ার করুন !
  • 299
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!