হেফাজতের ঢাকা সভাপতি জুনায়েদ হাবিব গ্রেপ্তার

0

সময় এখন ডেস্ক:

হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার অভিযানে এবার ধরা পড়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব।

একজন আলেমের গায়ে হাত দিয়ে দেখেন- সম্প্রতি এমন বক্তব্য দিয়ে উত্তে’জনা সৃষ্টির (ভিডিও সংবাদে সংযুক্ত) চেষ্টা করা এই নেতাকে শনিবার রাজধানীর বারিধারা মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, মতিঝিল ও লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগ যৌথ অভিযানে বারিধারা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ নিয়ে হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় ৯ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলো। তাদের একাংশকে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে অবস্থানকে ঘিরে দিনভর তা’ণ্ডব এবং একাংশকে ২৬ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ত্রাসের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, তার (হাবীব) বিরু’দ্ধে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে না’শকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও সম্প্রতি হেফাজতের যে সকল তা’ণ্ডব হয়েছে সেখানেও তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

পুলিশের মাধ্যমে হেফাজতের এই নেতাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে বলেও জানান ডিএপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার।

হেফাজতের নেতারা ধরা পড়ছেন গত ২৬ মার্চ থেকে নানা সহিং’সতার ঘটনায়। এই ঘটনায় ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে তা’ণ্ডবের ঘটনায় চাপা পড়ে যাওয়া মামলাগুলো নতুন করে চালু হচ্ছে।

আগে যারা গ্রেপ্তার

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘ’র্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তা’ণ্ডব চালায় হেফাজত কর্মীরা। হাম’লা হয় নানা সরকারি স্থাপনার পাশাপাশি থানাতেও। তখন অ্যাকশনে যেতে বাধ্য হয় পুলিশ। এতে প্রাণ হারায় ৪ জন।

দুই দিন পর হরতালের দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে হেফাজতের আক্র’মণ ছিল ব্যাপক। সরকারি-বেসরকারি ৩৮টি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুনও দেয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নও। বাদ যায়নি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও একাত্তরে শহিদদের নামফলকও।

ব্যাপক তা’ণ্ডব চালানো ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ্ং পুলিশের ওপরেও হাম’লা হয়।

৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে বেগানা নারী নিয়ে আপত্তিকর অবস্থায় হেফাজত নেতা মামুনুল হক আটক হওয়ার পর হেফাজত কর্মীরা ওই এলাকা ছাড়াও মুন্সিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে তা’ণ্ডব চালায়।

ওই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা হেফাজতকে সতর্ক করে বক্তব্য রাখতে থাকেন। এরপর থেকে গ্রেপ্তার হতে থাকেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা।

গত ১১ এপ্রিল ধরা পড়েন হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী। পরদিন তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

১২ এপ্রিল না’শকতার পরিকল্পনা, ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানো, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়’যন্ত্র ও ধর্মীয় অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচরে মামুনুল হকের তারবিয়াতুল উম্মাহ মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার হন কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি ইলিয়াস হামিদী। পরদিন তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।

১৩ এপ্রিল গ্রেপ্তার জন নারায়ণগঞ্জ হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মুফতি বশির উল্লাহ গ্রেপ্তার হক ২৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জে সহিং’সতার মামলায়। একই দিন ধরা পড়েন হেফাজতের সহপ্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফউল্লাহ। তাকে ২০১৩ সালের ৫ মের তা’ণ্ডবের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

১৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন হেফাজতের সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজী। হেফাজতের সাম্প্রতিক তা’ণ্ডবে তার ইন্ধনের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। একই দিন রাতে গ্রেপ্তার করা হয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে। তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ মে তা’ণ্ডবের মামলায়।

১৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন হেফাজতের ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের। তিনি ২০১৩ সালের ৫ মের ঘটনাপ্রবাহের পর মতিঝিল থানায় করা না’শকতার মামলার আসামি। জুবায়ের ইসলামী ঐক্যজোটের প্রয়াত আমির মুফতি ফজলুল হক আমিনীর জামাতা।

শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে হেফাজতের সহকারী মহাসচিব ও আলোচিত নেতা মামুনুল হকের দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমেদকে। তার বিরু’দ্ধেও ৮ বছর আগের শাপলা চত্বর ও সাম্প্রতিক সহিং’সতায় সম্পৃক্ততার তথ্য আছে পুলিশের কাছে।

২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সংঘ’র্ষের মামলায় আসামি করা হয়েছে হেফাজত নেতা মামুনুল হককেও। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটিয়া, হাটহাজারীতে শতাধিক হেফাজতকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় তা’ণ্ডবের পর মা’রা যাওয়া হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফীকে হ’ত্যাকরার অভিযোগ এনে করা মামলায় গত রোববার যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে সেখানেও বাবুনগরীকে আসামি করা হয়েছে।

ভিডিও:

শেয়ার করুন !
  • 576
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!