বিশেষ প্রতিবেদন:
হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও সহ-অর্থ সম্পাদক মুফতি ইলিয়াস হামিদিসহ সারাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে শান্তিপূর্ণ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। আর এই আন্দোলনের হুম’কি নিয়ে নতুন করে আলোচনা হচ্ছে।
অনেকে বলছেন হেফাজতে ইসলামকে নয়, জুনায়েদ বাবুনগরী নিজে বাঁচতেই হেফাজতকে এখন বলির পাঁঠা বানানোর পাঁয়তারা করছেন।
হেফাজতের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, দেশে এখন করোনা সংক্রমণ অনেক বেশি, আর এ কারণে সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছেন। এই পরিস্থিতিতে হেফাজতে ইসলাম একটি সংগঠন হিসেবে আন্দোলন কিংবা জনসমাগম করে নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করাটা সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেবে না।
এছাড়া এই লকডাউনের মধ্যে যদি আন্দোলন-সমাবেশ করা হয় তাহলে সেখান থেকে বহু মানুষ করোনা সংক্রমিত হতে পারেন, এতে হেফাজতকেই দায়ী করা হবে। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনের কথা বলাটা এক ধরনের বোকামি। বাবুনগরী নিজেকে গ্রেপ্তার থেকে বাচাঁনোর জন্য নেতাকর্মীদের করোনা মধ্যে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন।
একটি সূত্র বলছে, হেফাজত নেতাদের মধ্যে এখন চরম আত’ঙ্ক বিরাজ করছে। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি এবং তা’ণ্ডব চালানোর রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা পুনরায় চালু করা হয়েছে। সেই সাথে হেফাজতের আমির শাহ আহমেদ শফির মৃ’ত্যুর রহস্য নিয়েও তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
ফলে হেফাজত নেতাদের সামনে যে দুর্দিন অপেক্ষা করছে, তারা বেশ বুঝতে পারছেন। এ কারণে বাবুনগরী এখন নিজেকে নিরাপদ রাখাতে যে কোনো কিছু করার জন্য প্রস্তুত বলেও জানায় সূত্রটি। আর নিজেকে নিরাপদ রাখতে নতুন এবং অত্যন্ত সহজ ও কার্যকর মিশন হাতে নিয়েছেন সংগঠনের আমির। তার ধারণা, তিনি ডাক দিলেই যে কোনো কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারবে তার অনুসারীরা। তবে এর পরিণতি কী হতে পারে, সেটা নিয়ে তিনি ওয়াকিবহাল নন, সম্ভবত।
হেফাজতের অনুসারি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ানেকেই জানান, করোনা সবার জন্য সমান। সরকার যেহেতু লকডাউন দিয়েছে তাই হুজুররা এবার আন্দোলনে যেতে বললেও আমরা যাবো না। একবার করোনা আক্রান্ত হলে আমাদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা হবে না। এছাড়া এখন যদি আন্দোলনের জন্য ডাক দেন, তাহলে আমাদের পরিবারও সম্মতি দিবে না। হেফাজত নেতাদের হেফাজত করতে গিয়ে আমরা কেন করোনা ও মামলায় জড়াবো?
বিশ্লেষকরা বলছেন, হেফাজতের আমির বাবুনগরী চাপের মধ্যে আছেন। তাই নিজেকে রক্ষায় সরকারের ওপর উল্টো চাপ সৃষ্টির জন্য নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের হুম’কি দিচ্ছেন। এছাড়া তিনি নিজেই গ্রেপ্তার আত’ঙ্কে রয়েছেন তাই নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিতে এবং সমর্থকদের আশ্বস্ত করতে এসব বোলচাল দিতে পারেন।
তবে দেশে যেহেতু কঠোর লকডাউন চলছে, তার মধ্যে যদি হেফাজত মাঠে নামার চেষ্টা করে তাহলে সরকার কঠোরভাবে দমন করবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং আইন শৃঙ্খল পরিস্থিতির স্বার্থেই, এটা সহজেই অনুমেয়। এমনিতেই সাধারণ মানুষের কাছে হেফাজত এমনিতেই একটি উগ্রবাদী সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তাছাড়া গতকাল ৫১ জন আলেমও বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামকে ফেৎনা সৃষ্টিকারী ফাসেকদের দল হিসেবে।
কাজেই জুনায়েদ বাবুনগরী যা বলছেন, তা নিজের কাছে ‘মিশন পসিবল’ মনে হলেও বাস্তবায়ন করতে যাওয়ার ফলাফল হবে গুরুতর। এই পরিস্থিতিতে বাবুনগরী নিজেকে কীভাবে রক্ষা করবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। বাংলাইনসাইডার।
136