সময় এখন ডেস্ক:
লকডাউন ও করোনায় ক্ষ’তিগ্রস্ত অ’সহায় কর্মহীন ১ কোটি ২৫ লাখ পরিবারকে সরকার খাদ্য সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এছাড়া আসন্ন ঈদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ উপহার হিসেবে ৩৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেবেন বলে তিনি জানান।
রবিবার (১৮ এপ্রিল) সংসদ ভবনের সরকারি বাসভবন থেকে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনায় মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সমন্বয় সাধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে সচেষ্ট রয়েছেন। প্রথমত সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা এরপর জীবিকা। জীবিকার জন্য আমাদের অনেকের জীবনকে আমরা বি’পন্ন করে তুলেছি। সরকার করোনা এবং লকডাউনে অ’সহায় কর্মহীন মানুষের আর্থিক সুরক্ষায় ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় লকডাউনে ক্ষ’তিগ্রস্ত ১ কোটি ২৫ লাখ পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এ কার্যক্রম সমন্বয় করবে। আসন্ন ঈদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ঈদ উপহার হিসেবে ৩৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
তিনি জানান, শেখ হাসিনার সরকার গত লকডাউনে ক্ষ’তিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছিল। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রণোদনা প্যাকেজ।
লকডাউনে নগদ সহায়তা, আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি তালিকার বাইরে থাকা ছিন্নমূল ভাসমান মানুষদের সহায়তা দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেসব দরিদ্র পরিবার নতুন করে সংকটে পড়বে, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তাদেন তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের জানান, সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে অ’সহায় কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষকে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে। বি’পন্ন মানুষের পাশে সবার আগে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঐতিহ্য।
তিনি বলেন, যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এদেশে প্রতিবেশীর বিপদে-সংকটে প্রতিবেশীরাই এগিয়ে আসে। করোনা সংকটে এই বৈশ্বিক মহামারীতে বাংলাদেশে যারা অসহায় ও কর্মহীন, তাদের সহযোগিতায় সরকারের পাশাপাশি আসুন, দল মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মানবিকতার হাত প্রসারিত করি।
সচ্ছল প্রতিবেশীর উদার সহযোগিতা দরিদ্র প্রতিবেশীর সাময়িক সংকট কাটিয়ে উঠতে সহজ করে। আসুন, এই সংযমের মাস রমজানে অসহায় দরিদ্রদের মধ্যে মানবিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যাই।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এ পৃথিবী থেকে করোনা কবে যাবে তা কেউ জানে না। কাজেই এর সঙ্গে আমাদের অ্যাডাপ্ট করে চলতে হবে। এর মধ্যেই আমাদের কাজ করা শিখতে হবে। অ্যাডজাস্ট করে আমাদের কাজ চালিয়ে নিতে হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে বলেন, অগ্রাধিকারভুক্ত পদ্মা সেতু, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বাস র্যাপিড ট্রানজিটের কাজ কোভিডের কারণে স্থবির হওয়ার কোনও কারণ নেই। এ কাজগুলোকে যথারীতি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি জানান, পদ্মা সেতুর এখন সার্বিক অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ। অগ্রগতি ভালো। এভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আমরা জাতিকে জানিয়েছি, আগামী বছর জুন মাসে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেবো। আশা করি, এর মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, কর্ণফুলী টানেলের কাজও ভালো এগিয়ে যাচ্ছে। ফাস্ট টিউবের পর সেকেন্ড টিউবও ১ কিলোমিটার হয়ে গেছে। কাজ চলছে। এ সেতুর ৬৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্স্ট ফেজ-এর কাজ ৬২ শতাংশ শেষ হয়েছে। সেকেন্ড ফেজ প্রক্রিয়াধীন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর গতি বজায় রাখতে হবে। দরকার হলে গতি আরও বাড়াতে হবে। আমরা যে সময়সীমা দিয়েছি, সেই সময়ের মধ্যে এসব কাজ শেষ করতে হবে।
করোনাকালে বিএনপিকে দোষারোপের রাজনীতি পরিহার করে ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দেশের রাজনীতি এ করোনাকালেও বন্ধ নেই। মাঠের রাজনীতি না থাকলেও আমাদের কথাবার্তায় বক্তব্যে প্রতিপক্ষকে আক্র’মণ করে রাজনীতি করাই যেন এখন প্রধান এজেন্ডা।
তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র নিয়ে নানা কথা বলে। তাদেরকে বলবো, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগে নিজ দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশ যদি আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, তাহলে তার আগে নিজ দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
কথায় ও আচরণে রাজনীতিতে আপাদমস্তক অরাজনৈতিক মূল্যবোধ চর্চা করে বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়? হালুয়া-রুটির গণতন্ত্র এখন আর জনগণ চায় না। কারফিউ গণতন্ত্র জনগণ এখন আর চায় না। হ্যাঁ/না ভোটের নামে ১১৪ শতাংশ ভোটার এটাও জনগণ আর দেখতে চায় না।
কাদের বলেন, আমরা আগেও বলেছি, করোনা রাজনৈতিক দল চেনে না। প্রতিদিনই আমরা হারাচ্ছি মূল্যবান প্রাণ। দীর্ঘ হচ্ছে মৃ’ত্যুর মিছিল। এ সময় দোষারোপের রাজনীতি পরিহার করে আমাদেরকে করোনা সংকট মোকাবেলায় ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসতে হবে।
সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন, আমরা সংক্রমণ রোধে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করি। ঘরে অবস্থান করি। ঘরে ঘরে সচেতনতার দুর্গ গড়ে তুলি। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলি।