অনলাইন ডেস্ক:
দেশজুড়ে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনে বন্ধ দেশের আন্তঃজেলা গণপরিবহন ব্যবস্থা। খেটে খাওয়া দিনমজুর রিকশাওয়ালা ঠাকুরগাঁওয়ের তারেক ইসলামের উপার্জনও বন্ধ। যেখানে দিনের খাবার জোটানোর মতো টাকাটাও নেই তার পকেটে, সেখানে অসুস্থ কন্যাসন্তানের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা তার জন্য ছিল অসম্ভব।
তাই বলে অর্থের কাছে হেরে যেতে পারেনি সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা। ১১০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ টানা ৯ ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছান তারেক।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১৭ এপ্রিল)। এদিন ৭ মাস বয়সী কন্যা জান্নাতকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে নিয়ে আসনে তারেক ইসলাম।
এদিন সকাল ৬টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে ১১০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে রংপুরে পৌঁছান তিনি।
মুমূর্ষু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবার হাউমাউ করে কান্না ভারী করে তোলেন রংপুর মেডিকেলের জরুরি বিভাগের পরিবেশ। তার এমন কান্নায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সেখানকার উপস্থিত সাধারণ মানুষও।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিণ সালন্দর গ্রামের রামবাবুর গোডাউন এলাকার আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে তারেক ইসলাম। বাবার সংসারের হাল ধরতে রিকশার প্যাডেলে ১২ বছর বয়সে পা রাখেন তারেক। সেই তারেক এবার সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা ও কর্তব্যের নজির রাখলেন ১১০ কিলোমিটার রিকশা চালিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসে।
বর্তমানে লকডাউন পরিস্থিতিতে ঠিকমতো রিকশা চালাতে না পেরে দুর্ভোগ নেমে এসেছে তার পরিবারে। বর্তমানে শিশুটি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে (১৮নং ওয়ার্ড) চিকিৎসাধীন।
জানা যায়, ৭ মাস বয়সী শিশু জান্নাত রক্ত পায়খানা করায় গত ১৩ এপ্রিল রাতে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে একদিন চিকিৎসা দেওয়ার পর চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য জান্নাতকে রংপুরে স্থানান্তর করেন।
কিন্তু লকডাউন পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকা না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েন বাবা তারেক। ৪ দিন ধরে কোনো ব্যবস্থা করতে না পেরে অবশেষে নিজেই রিকশা চালিয়ে সন্তানকে নিয়ে আসেন রংপুরে।
তারেক বলেন, শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল থেকে সন্তানকে নিয়ে বাসায় যাই। বাচ্চার কন্ডিশন দেখে আমি চিন্তিত। কিন্তু লকডাউনোর কারণে আমার অবস্থা এতটাই খারাপ যে, কালকে কী খাব সেই টাকাও আমার কাছে নেই।
এ অবস্থায় আমি কীভাবে বাচ্চাটাকে নিয়ে এত দূরের রাস্তা আসব ভেবে পাচ্ছিলাম না। অ্যাম্বুলেন্সের টাকা জোগাড় করতে না পারায় সন্তানকে বাঁচানোর জন্য রিকশা চালিয়ে রংপুরে আসি।
তিনি বলেন, সকাল ৬টার দিকে আল্লাহর নাম দিয়ে বাসা থেকে বের হই। রাস্তায় আসতে আসতে তারাগঞ্জের দিকে এসে রিকশায় সমস্যা দেখা দেয়।
পরে এক অটোচালক বাচ্চার সমস্যার কথা শুনে আমাকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছার জন্য বাধ্য হয়ে ২-৩ কিলোমিটার রাস্তা রিকশাটা ঠেলে নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, পথিমধ্যে আরেকটা গাড়ি আমাকে মেডিকেল পৌঁছানোর জন্য সহযোগিতা করে। প্রায় ৯ ঘণ্টা পর বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে এসে পৌঁছেছি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫ তলার শিশু বিভাগে (১৮নং ওয়ার্ড) শিশু জান্নাতকে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখার পর কিছু ওষুধ ও স্যালাইন দিয়েছেন। আজকের পর্যবেক্ষণ শেষে অপারেশন করা লাগতে পারে বলে চিকিৎসকের উদ্ধৃতি দিয়ে একথা জানান তারেক ইসলাম।
কিন্তু অপারেশন করার মতো টাকা তার কাছে নেই। এমনকি চিকিৎসকের লিখে দেওয়া প্রাথমিক পর্যায়ের ওষুধ, স্যালাইন, ইনজেকশন কেনার জন্য ১০০ টাকাও নেই। এখন আমি কী করব, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না বলে জানান তারেক।
অ’সহায় রিকশাচালক তারেক ইসলাম তার অসুস্থ শিশু জান্নাতকে বাঁচানোর জন্য সমাজের বিত্তবান ও দানশীল মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমার তো সামর্থ্য নেই বাচ্চার অপারেশন করাব। যদি সমাজের বিত্তবান মানুষেরা এগিয়ে আসেন- আমি জান্নাতকে বাঁচাতে পারব। আল্লাহর অশেষ করুণা আর সবার সহযোগিতা ছাড়া আমার কোনো পথ নেই।
শিশু জান্নাতের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করতে চাইলে ০১৭৭৩ ৭২২৬০১ নম্বরে বিকাশ করতে পারবেন। অ’সহায় এ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে যোগাযোগ করুন ০১৩২০ ৫৪১১০৩ নম্বরে।