ডা. জেনির ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানালেন পুলিশ কর্মকর্তারা

0

সময় এখন ডেস্ক:

লকডাউনের পঞ্চম দিন রাজধানীতে এক চিকিৎসকের পরিচয়পত্র দেখানো নিয়ে ‍সৃষ্ট ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সাঈদা শওকত জেনিকেই দায়ী করেছে পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন।

ঘটনার পর দিন সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমকে পাঠানো বিবৃতিতে তার বিরু’দ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের প্রতি জনৈক চিকিত্সক কর্তৃক এহেন অ-পেশাদার ও অ-রুচিকর আচরণে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত মর্মাহত।…একজন গর্বিত পেশার সদস্য হয়ে অন্য একজন পেশাদার বাহিনীর সদস্যদের প্রতি কটাক্ষ বা অ-সৌজন্যমূলক আচরণ কখনোই কাম্য নয়।’

মহামারিকালে ঘরের বাইরে আসলে পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক জানিয়ে বলা হয়, ‘মন্ত্রণালয়ের বৈধ আদেশ লঙ্ঘন এবং কর্তব্যরত বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সাথে অ-সৌজন্যমূলক আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিকট উক্ত চিকিৎসকের বিরু’দ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন জোর দাবি জানাচ্ছে।’

আগের দিন এফিল্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল এলাকায় জেনির গাড়ি আটকে তার পরিচয়পত্র চান নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এ কাইয়ুম।

ওই গাড়িতে জেনির কর্মস্থল বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের স্টিকার সাঁটানো ছিল, তার গায়েও চিকিৎসকের অ্যাপ্রন ছিল। তারপরেও কেন পরিচয়পত্র দেখাতে হবে- এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জেনি তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়ও বলেন। ওসি কাইয়ুমও জানান, তিনিও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে আসেন ঢাকা মহানগর পুলিশের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন। আধা ঘণ্টা পর তিনি ঘটনাটির মীমাংসা করতে সক্ষম হন।

ডা. জেনির অভিযোগ, তাকে ভুয়া ডাক্তার বলেছেন ওসি কাইয়ুম, এক পর্যায়ে পাপিয়ার সঙ্গে তাকে তুলনা করেছেন।

ডা. জেনি একজন রেডিওলজিস্ট এবং বাংলাদেশে রেডিওলজিস্টদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিজ-এফডিএসআর এক বিবৃতিতে ওসি কাইয়ুমের সাজা দাবি করেছে।

তারা বলেছে, পাপিয়ার মত একজন অপরাধীর সঙ্গে পুলিশ ডা. জেনির তুলনা করেছে, যা একজন নারী চিকিৎসকের জন্য চরম অবমাননাকর।

তবে পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তিনি (জেনি) নিজ পেশার পরিচয় বাদ দিয়ে অ-প্রাসঙ্গিক পরিচয় তুলে ধরে পুলিশ ও বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেনের সামনে ঔ’দ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন এবং জাতির সামনে পেশাজীবী সংগঠনগুলোতে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করেছেন।’

গত ১৪ এপ্রিল থেকে চলা লকডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষি’দ্ধ করা হয়েছে। যারা বাইরে যেতে চান, তাদেরকে মুভমেন্ট পাস সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।

তবে চিকিৎসকদের জন্য এই পাস নেয়ার দরকার নেই। তাদের ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র দেখালেই হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

লকডাউনের প্রথম দিন এক চিকিৎসক পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও তাকে জরি’মানা করা হয়। আরেকজনকে একটি চেকপোস্টে ‘কসাই’ ডাকার অভিযোগ উঠেছে।

এ ছাড়া কয়েকজন চিকিৎসককে কর্মস্থলে নামিয়ে দিয়ে আসা গাড়িকে আটকে জরি’মানা করা হয়েছে। এক চিকিৎসক পুলিশের সঙ্গে ফোনে কথা বললে তাকে জেলে পাঠানোর ‍হুম’কি দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে ডা. জেনির ঘটনা চিকিৎসকদেরকে ক্ষুব্ধ করেছে। তাদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা বিএমএ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বলেছে, এগুলোর সুরাহা না হলে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হয়ে যেতে পারে।

তবে পুলিশ এসোসিয়েশন বলছে, ডা. জেনিকে পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তিনি অত্যন্ত ন্যা’ক্কারজনকভাবে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অ-সৌজন্যমূলক আচরণ করেন যা একজন পেশাদার ও সচেতন নাগরিকের কাছ থেকে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

গত ১৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য কার্যক্রমে জড়িত সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাপ্তরিক পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) অবশ্যিকভাবে ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তিনি তা অ’মান্য করেছেন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তার পরিচয় প্রদান না করে নিজ মন্ত্রণালয়ের আদেশ ল’ঙ্ঘন করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উক্ত চিকিৎসক বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে যে শব্দ প্রয়োগ করেছেন তা অত্যন্ত অ-রুচিকর ও লজ্জাজনক। এক পেশার সদস্য হয়ে আরেক পেশার কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি যে ভাষা প্রয়োগ করেছেন তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ‘তুই’ বলে সম্বোধন করেছেন এবং ‘আর আমি কী, সেটা এখন তোদের দেখাচ্ছি হারাম *দা’ বলে হুম’কি দিয়েছেন।’

এই করোনাকালে পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ সর্বজন স্বীকৃত উল্লেখ করে বিবৃতিতে জানানো হয়, করোনায় ৯১ জন পুলিশ সদস্য মা’রা গেছেন, ২০ বিশ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এর পরেও জীবনের ঝুঁ’কি নিয়ে মানুষের জীবন রক্ষায় পুলিশ সদস্যরা তীব্র দাবদাহে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজ করছেন।

‘পেশাগত বৈচিত্রের কারণে পুলিশের এ চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালনকালে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন’ উল্লেখ করে পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন বলেছে, দেশের স্বার্থে ও মানুষের জীবন রক্ষা ও করোনার বিভী’ষিকা থেকে মুক্তি পেতে পুলিশের কাজে সবাই সহযোগিতা করবে, এটাই তাদের প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!