বিশেষ প্রতিবেদন:
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যাংককের একটি বৈঠকের সূত্র অনুসন্ধানের চেষ্টা করছে। গত বছরের শুরুতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যে বৈঠকে বিএনপির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন নেতা এবং হেফাজতের কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য উড়ে গিয়েছিলেন হেফাজতের প্রয়াত মহাসচিব কাসেমীসহ কয়েকজন নেতা। বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ কয়েকজন নেতাও ব্যাংককে গিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে হেফাজতের দুয়েকজন নেতা বলেছেন, তাদের প্রয়াত আমির আহমদ শফীর নির্দেশে তারা এ বৈঠকে গিয়েছিলেন। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এই বৈঠকে সরকার পতনের একটা নীল নকশা তৈরি করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী হেফাজত পরবর্তীতে পুনর্বিন্যাস্ত হয়। আহমদ শফীকে হ’ত্যাকরা হয় এবং হেফাজত সরকারে বিরু’দ্ধে এক ধরনের কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়টি অনুসন্ধান করছেন। একটি সূত্র বলছে, ব্যাংককে বৈঠকের ব্লুপ্রিন্ট পাওয়া গেলে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে এবং কারা কারা, কেন না’শকতা করেছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। জানা গেছে, ২০২০ সালের শুরুতেই যখনও সারাবিশ্বে করোনা নিয়ে উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের তৈরি হয়নি, সেই সময় বিএনপি`র অন্তত ৫ জন নেতা উড়ে গিয়েছিলেন ব্যাংককে।
তাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন হেফাজতের কয়েকজন নেতা। তাদের মধ্যে একজন এই বৈঠকের কথা স্বীকার করেছিলেন। তিনি হলেন কাসেমী। কাসেমী কিছুদিন আগে মৃ’ত্যুবরণ করেছেন। এ ছাড়াও এই বৈঠকে মামুনুল হক গিয়েছিলেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়াও এখন যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্তত দুজন ওই বৈঠকে যোগদান করেছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে ওই বৈঠকে গিয়েছিলেন দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ বেশ কয়েকজন নেতা।
বিএনপির যে কজন নেতার অনুদানের ওপর দলটি টিকে আছে, তাদের একজন আবদুল আউয়াল মিন্টু। তার ব্যাংককভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে এবং ব্যাংকককে ঘিরেই তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কার্যক্রম পরিচালনা করেন বলেও জানা যায়।
এই বৈঠকের উদ্যোক্তা ছিল বিএনপি। মূলত বিএনপি অসংগঠিত এবং আন্দোলন করতে অক্ষম। এই বাস্তবতায় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক হেফাজতকে সামনে নিয়ে এসে সারাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করাই ছিল ওই বৈঠকের প্রধান লক্ষ্য। তবে বৈঠকের খুঁটিনাটি ইত্যাদি বিস্তারিত বিষয়গুলো আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
সরকারি সংস্থাগুলো মনে করছেন, এই বৈঠকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, অনেক গভীর ষড়যন্ত্রের বীজ বপন হয়েছিল। এই বৈঠকের প্রেক্ষিতে হেফাজতের নেতারা ঢাকায় ফিরে আসেন এবং বাবুনগরীর নেতৃত্বে সংঘটিত হতে থাকেন। এই পর্যায়ে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান আহমদ শফী। তিনি হেফাজতের আমির হলেও তিনি ছিলেন সকলের কাছে মুরুব্বি হিসেবে গ্রহণযোগ্য একজন। এছাড়া হেফাজতের সাধারণ কর্মী এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তার ব্যাপারে অন্ধ ছিল।
আর এ কারণেই হেফাজতের নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ কয়েকজন পরিকল্পনা করেন, আহমদ শফীকে না সরালে হেফাজতের কর্তৃত্ব পাওয়া যাবে না। আর কর্তৃত্ব না নেয়া গেলে এই সরকার পতনের প্রচেষ্টাও সফল হবে না। আর এ কারণেই আহমদ শফীর মৃ’ত্যু ত্বরাণ্বিত করা বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে পিবিআই তদন্ত করছে এবং ৪৩ জন জড়িত বলে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। ব্যাংককের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বাবুনগরী তার পছন্দের ব্যক্তিদের, যারা স্বাধীনতার বিরোধী, বিএনপিপন্থী এবং উগ্র আওয়ামীবিরোধী, তাদেরকে বেছে বেছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেয়া হয়।
যে কোনোভাবে একটি ইস্যু দিয়ে সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানো এবং কোণঠাসা অবস্থায় ফেলে সরকার পতনের করার একটা নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন জুনায়েদ বাবুনগরী।
এরই অংশ হিসেবে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করা এবং চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় ২৬ এবং ২৭ মার্চ তা’ণ্ডবের মধ্যে দিয়ে। তবে এটি ষড়যন্ত্রের শেষ নয়, আরো কিছু ষড়যন্ত্র অপেক্ষা করছে। তবে সেটি কী, তা তদন্ত করে খুঁজে বের করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বাংলাইনসাইডার।