হেফাজত ও বিএনপি-জামায়াতের গভীর সম্পর্কের নেপথ্যে

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক রিমান্ডে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি তার একাধিক বিয়ে, গোপন সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। যা রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য এবং কৌতুকের সৃষ্টি করেছে। মামুনুল হক বলেছিলেন, তার দুই স্ত্রী চুক্তিভিত্তিক। অথচ ইসলামে চুক্তিভিত্তিক কোন বিয়ে আছে কি না সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নাই।

আবার তিনি এটাও বলেছিলেন, স্ত্রীকে খুশি করার জন্য সীমিত পরিসরে মিথ্যা বলা যায়। আর এরই সূত্র ধরে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন, হেফাজতের নেতাকর্মীদের উসকানিদাতা বিএনপির সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্ক কি এরকম চুক্তিভিত্তিক, নাকি অ’বৈধ? হেফাজত নিয়ে বিএনপি কি সীমিত পরিসরে সত্য গোপন করছে নাকি পুরোটাই মিথ্যা কথা বলছে।

হেফাজতের শীর্ষ নেতাদেরকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদেরকে একে একে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, রিমান্ডে তারা প্রায় সকলেই স্বীকার করছেন বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তাদের গোপন বৈঠক হয়েছিল, তাদের আঁতাত ছিল। এই বৈঠক এবং আঁতাতের কারণেই হেফাজত সরকারবিরোধী সহিং’সতার পথ বেছে নিয়েছে। এসব অপকর্মের পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছে আল-জাজিরার মত কয়েকটি বিত’র্কিত গণমাধ্যমও।

হেফাজতের নেতারা এটাও বলেছেন, সহিং’সতা করার জন্য বিএনপি ও জামায়াত শুধু মৌখিকভাবেই তাদেরকে উসকানি দেয়নি বরং আর্থিক সহযোগিতাও করেছে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের তা’ণ্ডবের আগে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা- প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা ও হাবিবুন নবী সোহেল এবং জামায়াতের একজন নেতা নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে এই তা’ণ্ডবের পেছনে বিপুল অর্থ ডোনেশন হিসেবে দেয়।

সেই সাথে কী কী করতে হবে, কতদিন ধরে করতে হবে, কোন কোন ইস্যু নিয়ে করতে হবে- এসব ব্যাপারেও তারা হেফাজতকে পরামর্শ দিয়েছে। অর্থ এবং পরামর্শ- এই দুটোর প্রেক্ষিতেই হেফাজতের বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল।

হেফাজতের একাধিক নেতা বলেছেন, রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে ছিল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। এ জন্যই তারা তা’ণ্ডব চালিয়েছিল। হেফাজত নেতাদের রিমান্ডের এ ধরণের তথ্য উঠে আসার পরপরই বিএনপি নেতারা এর তীব্র প্রতিবাদ করছেন। বিএনপির একাধিক নেতা হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন।

সেই সাথে জামায়াত পুরোপুরি নীরবতা পালন করছে। যদিও ২৬-২৮ মার্চের তা’ণ্ডবের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এরই মধ্যে শিবিরের কয়েকজন ক্যাডারকে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে হেফাজতের কোন সম্পর্ক নেই বরং সরকারই হেফাজতকে লালন পালন করেছে, হেফাজতের সৃষ্টি করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদও হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন।

তবে এভাবে বড় গলায় অস্বীকার করা সত্ত্বেও রিমান্ডে প্রাপ্ত তথ্যগুলোর আলোকে রাজনৈতিক অঙ্গনে হেফাজত-বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

২০১৩ সালে হেফাজত যখন ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে তা’ণ্ডব চালিয়ে শাপলা চত্বরে অবস্থান গ্রহণ করল, তখন বিএনপি নেতারা দল বেঁধে হেফাজতের কাছে গিয়েছিল। আহমদ শফীকে কদমবুসি করেছিল। সেই সময় হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বিএনপির সখ্যতা নতুন করে বলার নেই। খোদ খালেদা জিয়া নিজেই হেফাজতের নেতাদেরকে মেহমান বলেছিলেন এবং তাদের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

সেই অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য রেখেছিলেন। সরকার যখন দক্ষতার সঙ্গে শাপলা চত্বরের অবস্থান থেকে হেফাজতকে তুলে দেয় তারপর বিএনপি তার তীব্র প্রতিবাদ করেছিল এবং সেখানে হ’ত্যাকাণ্ড হয়েছে বলেও বিএনপি নেতারা দাবি করেছিল। একই দাবি হেফাজতও করেছিল। যদিও তাদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, প্রত্যেকেই জীবিত! অথচ হলুদ সাংবাদিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আল-জাজিরা সে সময় বানোয়াট কল্প-কাহিনী প্রচার করেছিল।

অথচ এখন বিএনপি বলছে, তাদের সাথে হেফাজতের কোন সম্পর্ক নেই! তাহলে কোনটি সত্যি? জুনায়েদ বাবুনগরী যখন হেফাজতের আমির হলেন তখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তাহলে বিএনপি এখন কোন মুখে এমন গভীর সম্পর্ককে অস্বীকার করে?

হেফাজত যখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধিতা করল তখন কেন হেফাজতের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ? হেফাজত যখন সারাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তা’ণ্ডব চালানোর সিদ্ধান্ত নিলো এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করলো, ঠিক সে সময়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সব কর্মসূচি থেকে বিএনপি সরে এলো- সেই প্রশ্ন এখন উঠেছে।

কাজেই বিএনপি ও জামায়াত এখন যতই নিজেদেরকে হেফাজতের থেকে সম্পর্ক নাই দাবি করুক না কেন, বাস্তবতা হলো তাদের মধ্যে প্রেমপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে এই প্রেমপূর্ণ সম্পর্কটি চুক্তিভিত্তিক নাকি অ’বৈধ, খতিয়ে দেখা দরকার।

শেয়ার করুন !
  • 174
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!