সময় এখন ডেস্ক:
দেশব্যাপী তা’ণ্ডব চালিয়ে এবং নারী কেলে’ঙ্কারির ঘটনায় আলোচিত হেফাজত নেতা মামুনুল হকের জালিয়াতি এবং ধর্ম ব্যবসার খবরে অনেকে আশ্চর্য হলেও ইতিহাস বলে ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করা তাদের পারিবারিক রীতি।
মামুনুল হক হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব। মামুনুলের পিতা আজিজুল হক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের প্রতিষ্ঠাতা। এই দলের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস জানলেই বোঝা যাবে মামুনুল হকের ধর্ম ব্যবসার প্রকৃত রহস্য।
জানা গেছে, ১৯৫২ সালে মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী এবং মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জীর হাতে সদ্য প্রতিষ্ঠিত লালবাগ কওমি মাদ্রাসায় বুখারী শরীফের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান আজিজুল হক। ধীরে ধীরে হাফেজ্জীর সাথে আজিজুল হকের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
১৯৮১ সালে হাফেজ্জীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হলে তাতে যোগ দেন আজিজুল হক। কিন্তু একপর্যায়ে টাকা এবং ক্ষমতার লোভে চাকরিদাতা হাফেজ্জীর দল ত্যাগ করে গঠন করেন নতুন দল। শুধু তাই নয়, হাফেজ্জীর পরিবারের ওপর হাম’লা-নির্যা’তনও করেন আজিজুল হক।
হাফেজ্জীর জ্যেষ্ঠ পুত্র শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফের এক ঘনিষ্ঠজন জানান, ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব হয়। এরপর খেলাফত আন্দোলনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইসলামি নেতাদের শত শত কোটি টাকা দেন ইরানি বিপ্লবের নায়ক আয়াতুল্লাহ খোমেনী।
১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে খেলাফত আন্দোলন গড়ে তুলতে হাফেজ্জীকে ২০০ কোটি টাকা দেন আয়াতুল্লাহ খোমেনী। এই টাকার লোভে মাথা খারাপ হয়ে যায় আজিজুল হকের। টাকা নিয়ে হাফেজ্জীর সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয় আজিজুল হকের।
শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফের ওই ঘনিষ্ঠজন জানান, লালবাগ মাদ্রাসায় ভালো শিক্ষক হিসেবে সম্মান পেতেন আজিজুল হক। ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ছিল তার। এই বিষয়টি কাজে লাগিয়ে হাফেজ্জীকে খোমেনীর দেওয়া ২০০ কোটি টাকার মধ্যে ১০০ কোটি টাকা দাবি করে বসেন আজিজুল হক। কিন্তু হাফেজ্জী সেই দাবি না মানলে অনুসারীদের দিয়ে তার ওপর অত্যা’চার শুরু করেন আজিজুল হক।
শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফের ওপর হাম’লার বিবরণ দিয়ে ওই ঘনিষ্ঠজন জানান, শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ ছিলেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের মুয়াজ্জিন। লালবাগ মাদ্রাসায় তেমন আসতেন না। কিন্তু শুধুমাত্র হাফেজ্জীর জ্যেষ্ঠ সন্তান হওয়ার অপরাধে শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফকে লালবাগ মাদ্রাসায় প্র’হার করা হয়। এ সময় “মইষটারে মার, বেশী কইরা মার” – বলে চিৎকার করেন আজিজুল হক।
হাফেজ্জীর পরিবারের উপর আঘা’ত চলতেই থাকে, একদিন ধাওয়া দিয়ে বাসা পর্যন্ত আসে আজিজুলের অনুসারীরা। হাফেজ্জীর ছেলেরা বাথরুমের উপরের ট্যাংক ধরে ঝুলে লুকিয়েও বাঁচতে পারেননি, হাতের আঙ্গুল ভেঙে দেওয়া হয়।
তবে প্রাণ হারানোর ভয়ে হাফেজ্জীর ছেলেরা শেষ পর্যন্ত ওভাবেই ঝুলে ছিলেন। আজিজুল হকের অত্যা’চারের এক পর্যায়ে হাফেজ্জী কিছুদিন লালবাগ মাদ্রাসায় ঢুকতে পারেননি, বাধ্য হয়েছেন মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়তে!
জানা গেছে, ২০০ কোটি টাকার লোভ এবং ক্ষমতার জন্য ১৯৮৫ সালে লালবাগ মাদ্রাসার চাকরি ছাড়েন আজিজুল হক। এরপর ১৯৮৮ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাত মসজিদের পাশে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার দখল নেন। এরপর খেলাফত আন্দোলন ভেঙে ১৯৮৯ সালে খেলাফত মজলিশ গঠন করেন।
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হিফজুর রহমান বলেন, খেলাফত মজলিশ গঠনের পর থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে মোহাম্মদপুরে জায়গা দখল করেন আজিজুল হক। মাদ্রাসাকে পারিবারিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেন তিনি। ছেলে, আত্মীয় স্বজনদের নিয়োগ দেন মাদ্রাসায়। বর্তমানে আজিজুলের চার ছেলে, নাতিসহ অন্তত ২০ আত্মীয় প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা করছেন।
হিফজুর রহমান আরো বলেন, ২০০০ সালে আজিজুল হকের নির্দেশে মোহাম্মদপুরে খেলাফত মজলিশের কর্মীরা মসজিদের ভিতরে একজন পুলিশ সদস্যকে মে’রে ফেলে। এরপর ২০০১ সালে তাকেসহ ৩৬ শিক্ষককে একযোগে প্রতিষ্ঠানটি থেকে অ’ন্যায়ভাবে বের করে দেওয়া হয়।
হিফজুর বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সাথে সম্পর্ক, মস্তানি করে মাদ্রাসার জায়গা দখল, ছাত্রদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা এসব ছোটবেলাতেই বাবা আজিজুল হকের কাছে শিক্ষা পেয়েছে মামুনুল হক। পারিবারিক শিক্ষা পেয়েছে দখলদারিত্বের, রাজনৈতিক গুণ্ডাপাণ্ডাদেরকে তোষামোদের; সে নিজে গুণ্ডামি-ভণ্ডামি করবে না তো কী করবে?
1.7K