বেরিয়ে আসছে হেফাজত নেতাদের দুর্নীতির চিত্র, সমঝোতার চেষ্টা

0

সময় এখন ডেস্ক:

একদিকে সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়ার পরও গ্রেপ্তার চলমান, অন্যদিকে কওমি মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণে হেফাজত নেতাদের একের পর এক দুর্নীতির আলামত। এই দুইয়ে মিলে মানসিক চাপে পড়েছেন গ্রেপ্তার না হওয়া হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রেপ্তার বন্ধ করে আলোচনায় বসে সমঝোতার তাগিদ দিচ্ছেন। হেফাজত থেকে মামুনুল হকসহ রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠনসহ প্রশাসনের দেওয়া শর্তগুলো নিয়েও কথাবার্তা চলছে।

এ রকম প্রেক্ষাপটে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারীরা। তারা প্রশাসনকে উদ্যোগ নিয়ে পুরনো নেতৃত্ব ভেঙে নতুন কমিটি করতে বলছেন। তবে শীর্ষ নেতা বা পদব’ঞ্চিত কেউই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনের গতিতে মামলার তদন্তপ্রক্রিয়া চালানোর কঠোর বার্তাই দেওয়া হচ্ছে তাদের। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে গত বুধবার রাতে হেফাজতের আরেক যুগ্ম মহাসচিব এবং শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবীকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে মামুনুল হকসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের প্রায় ২০ জন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২ জন রয়েছেন পুলিশ রিমান্ডে। এর মধ্যে ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড দিয়েছেন ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত।

এদিকে হেফাজতের সাম্প্রতিক ১৬টি মামলার তদন্তভার পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রিসোর্টকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট রূপগঞ্জ থানার মামলায় মামুনুলকে রিমান্ডে চাওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি ঘটনায় আলামত ও ফরেনসিক পরীক্ষা করে জড়িতদের শনাক্ত করা হবে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, খেলাফত মজলিসের প্রয়াত আমির স্বঘোষিত স্বাধীনতাবিরোধী শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক চারদলীয় জোটের আমলে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নেন। পরে মাদ্রাসার আয়-ব্যয়সহ সব কিছু ছিল তার বড় ছেলে মাহফুজুল হক ও ছোট ছেলে মামুনুল হকের নিয়ন্ত্রণে।

একইভাবে যাত্রাবাড়ী, বারিধারা, লালবাগের বেশ কিছু মাদ্রাসা পরিচালানা করছেন হেফাজতের কয়েকজন নেতা। এসব মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের হিসাবে আছে ব্যাপক গরমিল। মধ্যপ্রাচ্য থেকে যেসব অনুদান এসেছে, সেগুলোর বিস্তারিত তথ্য নেই।

মাদ্রাসাগুলোতে অ’বৈধভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ চালানো হচ্ছে। নথিপত্র যাচাই করে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট হেফাজত নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। আর্থিক দুর্নীতির প্রমাণসহ মামলাও হতে পারে। ধারাবাহিক অভিযানের মধ্যে কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয়ে অনেক হেফাজত নেতা দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন। বিশেষ করে গত সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) প্রধানের কাছে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েও কাজ না হওয়ায় উদ্বিগ্ন তারা।

হেফাজতের কয়েকজন নেতা সরাসরি ও বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রেপ্তার বন্ধ করে ফের আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানায় সূত্র। পুলিশের গোয়েন্দারা মামুনুল হকসহ রাজনৈতিক নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনসহ কয়েকটি শর্ত দিয়ে পরে আলোচনা হতে পারে বলে জানান।

এ ব্যাপারে হেফাজতের ভেতরে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। তবে কমিটি গঠনের ব্যাপারে গতকাল পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্তমান কমিটি থেকে বাদ পড়া শফীপন্থী কয়েকজন নেতাও বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করছেন। তারা প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন।

এদিকে ডিবি কার্যালয়ে মোহাম্মদপুরের না’শকতার পাশাপাশি সরকারবিরোধী চক্রান্তের ব্যাপারে মামুনুলকে জেরা করা হচ্ছে। রিমান্ডে থাকা অপর নেতাদেরও জেরা চলছে। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ২০১৩ সালের মতিঝিল ও পল্টনের মামলায় মামুনুল হকের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীকে গত ৫ এপ্রিলের পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, বংশাল থেকে ঢাকা মহানগরের সহদপ্তর সম্পাদক ইহতেশামুল হক সাখীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। বুধবার রাতে নিউ মার্কেট এলাকা থেকে ঢাকা মহানগর কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য সানাউল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে পল্টন থানার পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব ও খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, সহকারী মহাসচিব ও খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির খুরশিদ আলম কাসেমী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মুফতি শরাফত হোসাইন, ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমদ ও হেফাজত নেতা মাওলানা সানাউল হককে পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত।

এ ছাড়া মতিঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলামের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বুধবার আরেকটি মামলায় তার ৪ দিনের রিমান্ড হয়েছে।

এদিকে পিবিআইপ্রধান, ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, গত ২৬ মার্চের পর মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে হেফাজতের ১৬টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব আমরা পেয়েছি। সোনারগাঁয় রিসোর্টকাণ্ডের পর রূপগঞ্জের একটি মামলাও আছে।

এসব মামলায় তদন্তের প্রয়োজনে আমরা মামুনুল হকের রিমান্ড চাইব। তবে ফরেনসিক, আলামত যাচাই করে ঠিক যারা জড়িত তাদের বিরু’দ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!