সময় এখন ডেস্ক:
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাসদের হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, নির্মূল কমিটির প্রধান শাহরিয়ার কবিরের নামোল্লেখ করে ওয়াজের বয়ানে অ-শালীন ভাষায় উসকানিমুলক বক্তব্য দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। তার ওয়াজ বয়ানের নামে এসব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউব, ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
তাকে জেরা করা হয়েছে, সমাজের প্রতিষ্ঠিত, প্রথিতযশা ব্যক্তিদের এভাবে অসম্মান-অবমাননা করেছেন কেন? ইসলামী আইন কিংবা প্রচলিত আইনে সমর্থন করে কি? পুলিশ কর্মকর্তার জেরায় মামুনুল কখনও নিরুত্তর আবার কখনও জোশের জোরে বলেছেন বলে তার দাবি।
জেরা করা হয়েছে হেফাজতের আমির আল্লামা শফীর হ’ত্যাকরার ঘটনাও। মামুনুল হক বলেছেন, আল্লামা শফী অসুস্থ হলে তার মুখ থেকে অক্সিজেন খুলে নেয়ার ঘটনায় মৃ’ত্যু ঘটতে পারে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
হেফাজত নেতা মামুনুল হককে মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড নিয়ে জেরা করছে পুলিশ। তাতে অনেক বিষয়ই উঠে আসছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ বলেছেন, পুলিশ হেফাজতে মামুনুল হককে জেরা করা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে, ফেসবুকে সমাজের প্রতিষ্ঠিত, প্রথিতযশা ব্যক্তিদের ‘মুরগি চোর’, ‘জুতাপেটা’ করার জন্য উসকানি দিয়েছেন কেন? ইসলামী আইন কিংবা প্রচলিত আইন এসব সমর্থন করে কি না? মামুনুল হকের কাছ থেকে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ বলেছেন, মামুনুল হককে জেরায় তার কাছ থেকে যেসব উত্তর পাওয়া গেছে তাতে স্পষ্ট যে তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ওয়াজের বয়ানে রাষ্ট্রবিরোধী, উসকানিমূলক বক্তব্য দিতেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে, ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
মামুনুল হকের টার্গেট কওমি মাদ্রসাগুলো। কওমি মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মের দোহাই দিয়ে আন্দোলনের নামে পুলিশের সঙ্গে সহিং’সতার মুখে ঠেলে দিতে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতে ইসলাম সংগঠনটিকে অরাজনৈতিক সংগঠন বলা হলেও এতে রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের সমাহার ঘটেছে। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্যজোটভুক্ত অনেক ইসলামী দলগুলোর নেতারা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছেন।
বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত নেতারাই এখন হেফাজতে ইসলামের নীতি নির্ধারণের ভূমিকায় অবতীর্ণ। এ কারণেই বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে না’শকতাসহ তা’ণ্ডব চালানোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনের নেতা মামুনুল হককে এসব বিষয়েও জেরা করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ হেফাজতে মামুনুল হককে জেরা করা হয়েছে, হেফাজতের সাবেক আমির আহমদ শফীর হ’ত্যাকাণ্ডের বিষয়টি। আল্লামা শফীকে হ’ত্যাকরা হয়েছে বলে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামুনুল হক জেরায় আল্লামা শফীর মৃ’ত্যুর পেছনে তার এবং জুনায়েদ বাবুনগরীর ভূমিকার কথা স্বীকার করেছেন।
এজন্য জুনায়েদ বাবুনগরী তাকে যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়েছেন বলেও তিনি স্বীকার করেছেন। মামুনুল বলেন, যখন আল্লামা শফী হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় শয্যাশায়ী, সে সময় তিনি ছিলেন আল্লামা শফীর দেখভালের দায়িত্বে। দায়িত্ব পালনকালে আল্লামা শফীর মুখে অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলার নেতৃত্বে দেন তিনি। চিকিৎসকরা এ বিষয়ে তাকে তি’রস্কার করেছিলেন। তবে মামুনুল হকের বক্তব্য, তখন আল্লামা শফীর কষ্ট হচ্ছিল, এটা বিবেচনা করে অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলা হয়েছিল।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইর একজন কর্মকর্তা বলেন, আল্লামা শফীর মৃ’ত্যুর ঘটনাটি পরিকল্পিত হ’ত্যাকাণ্ড। এর পেছনে যারা জড়িত ছিল তাদের মধ্যে মামুনুল হক অন্যতম। তবে মূল পরিকল্পনাকারী মনে করা হচ্ছে জুনায়েদ বাবুনগরীকে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিষয়টি তদন্ত করছে।
হেফাজত নেতা মামুনুল হক জেরায় বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার শুরুতে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক কার্যক্রম শুরু করে। সে সময় গ্রুপিং ছিল না, রাষ্ট্রক্ষমতা দখলেও কোন লালসা ছিল না। কিন্তু হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমেদ শফীর মৃ’ত্যুর পর থেকে পুরোপুরি পাল্টে যায় সংগঠনটির চিত্র।
জুনায়েদ বাবুনগরী সংগঠনটির আমির হওয়ার পর থেকে তাদের মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতা ও আর্থিক লালসা পেয়ে বসে। সে সময় তাদের সামনে রাষ্ট্রক্ষমতা ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে বিএনপি-জামায়াত। তখন থেকে বিএনপি-জামায়াতের প্রেসক্রিপশনেই চলছিল হেফাজতের কার্যক্রম।
এরই অংশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতার নামে হেফাজতে ইসলাম সারাদেশে তা’ণ্ডব চালায়। তবে রমজান মাসে এসে হেফাজত নেতাদের বিরু’দ্ধে সরকার এমন কঠোর মনোভাব নিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করবে, এটা দূরতম ভাবনাতেও ছিল না, বলেছেন মামুনুল হক।