বিশেষ সংবাদদাতা:
সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের নেতাকর্মীরা আওয়াজ ছাড়াই বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন। এই যোগদান হচ্ছে নীরবে, নিভৃতে, গণমাধ্যম এড়িয়ে। তবে বিএনপি এবং জামায়াত একে যোগদান বলতে নারাজ। তারা একে বলছেন আপাতত ‘মিলমিশ’। কৌশলগত কারনে সাময়িকভাবে জামায়াত বিএনপিতে আশ্রয় নিচ্ছে।
বিএনপি নেতারা একে বলছেন, এটা হলো কমিউনিস্ট মডেল। ‘৬০ এর দশকে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হলো, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ গঠিত হয়। মূলতঃ কমিউনিষ্ট পার্টির লোকজনই ন্যাপ গঠন করে। গ্রেপ্তার এড়াতে এবং কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকাণ্ড চালাতে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে দলে দলে ন্যাপে যোগ দেয় শিক্ষার্থীরা। বহুদিন ন্যাপ ছিলো কমিউনিস্ট পার্টির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সংগঠন।
নির্বাচনের আগে থেকেই জামায়াত ছাড়ার জন্য বিএনপির ওপর দেশী বিদেশী চাপ ছিলো। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ভারত বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার পরামর্শ প্রকাশ্যেই দিয়েছিল। নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। যদিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শুরু থেকেই বলছিলো, জামায়াত সংশ্লিষ্ট কারো সঙ্গে তারা ঐক্য করবে না।
কিন্তু ২০ দল রেখেই ড. কামালের সঙ্গে ঐক্য করে বিএনপি। নির্বাচনে জামায়াতের ২২ জনকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকও দেয় দলটি। এ নিয়ে বিএনপি ঘরে বাইরে সমালোচনার মুখে পড়ে। নির্বাচনের পর বিএনপির উপর জামায়াত ছাড়ার চাপ আরও বেড়েছে। এমনকি ড. কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে স্বীকার করেন যে, জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া ভুল ছিল। বিএনপি নেতারা স্পষ্টই বুঝতে পারছেন যে, জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সঙ্গ ত্যাগ না করলে বিএনপির পক্ষে এগুনো কঠিন। জামায়াত থাকলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী হবে না। জামায়াত থাকলে, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোও বিএনপির দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হতে রাজী নয়।
এর মধ্যে নির্বাচনের পর নতুন করে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি সামনে এসেছে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক তার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করেই জামায়াত নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। জামায়াত এবং বিএনপির নেতাকর্মীরাও বুঝতে পারছে, আওয়ামী লীগ তার এই টানা তৃতীয় মেয়াদে জামায়াত নিষিদ্ধ করবে।
এই প্রেক্ষাপটে, বিএনপি এবং জামায়াত তাদের ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করছে। যদিও দুই সংগঠনের কেউ কাউকে ত্যাগ করতে চায় না। তারা মনে করে বিএনপি এবং জামায়াতের সম্পর্ক আলাদা হওয়ার নয়। কিন্তু বাস্তবতার খাতিরে বিএনপি এবং জামায়াত উভয়েই সম্পর্ককে একটু নিস্ক্রিয় রাখার ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সেজন্যই জামায়াতের একটি অংশ বিএনপিতে মিশে যাচ্ছে।
জানা গেছে, এর প্রধান কারণ দুটি। প্রথমত, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের বেশকিছু ভালো প্রার্থী রয়েছে। জামায়াতে থেকে তারা ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে আবার কথা হবে, সমালোচনা হবে। এজন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগে থেকেই বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আন্দোলনের স্বার্থে বিএনপি হয়ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বাম দলগুলোর সঙ্গে জোট বাধতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপি যেন ভারত বিরোধীতা এবং ইসলামী চিন্তাচেতনা থেকে দূরে চলে না যায় সে কারণেই জামায়াতের নেতারা বিএনপিকে আগলে রাখার জন্য বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে। তবে, এ নিয়ে যেন আবার নতুন করে কথাবার্তা না হয়, সেজন্য কাজটি করা হচ্ছে গোপনে।
6