সময় এখন ডেস্ক:
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হাম’লায় জড়িত জঙ্গিদের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন উল্লেখ করে পুলিশ জানায়, তাদের একজনের সঙ্গে প্রায় দেড় মাস পাকিস্থানেও ছিলেন তিনি।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার হারুন অর রশিদ।
নিজ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মামুনুল হকের জব্দ করা মোবাইল ফোন থেকে বাবরি মসজিদের নামে কাতার, দুবাই ও পাকিস্থান থেকে টাকা আনার তথ্য-প্রমাণও মিলেছে।
উপ কমিশনার হারুন বলেন, পুলিশ হেফাজতে ৭ দিন জেরা করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এই নেতার ‘রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের’ কথাও জানতে পেরেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
মামুনুল হেফাজতে ইসলামকে ‘পাকিস্থানের একটি সংগঠনের আদলে’ পরিচালনা করতে চাইছিলেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তিনি রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী ছিলেন। জামায়াতের সহায়তায় ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা ভাবনা ছিল তার।
মার্চে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতায় হেফাজতের বিক্ষোভ কর্মসূচি ও হরতালকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক তা’ণ্ডব চলে, পুলিশের সঙ্গে সংঘ’র্ষে প্রাণ যায় কয়েকজনের।
এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকার একটি রিসোর্টে ৩ এপ্রিল এক বেগানা নারীসহ আপত্তিকর অবস্থায় আটকের পর একাধিক বিয়ের ঘটনায় আলোচনায় আসেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল।
গত ১৮ এপ্রিল দুপুরে ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করার পর মোহাম্মদপুর থানার না’শকতার এক মামলায় জেরার জন্য মামুনুলকে ৭ দিন রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
জেরায় জঙ্গিবাদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে জানিয়ে উপ কমিশনার হারুন বলেন, মামুনুলের ভগ্নিপতি মাওলানা মুফতি নেয়ামত উদ্দিন ও মাওলানা তাজউদ্দীন ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড ছুড়েছিলেন।
একবার নেয়ামত উদ্দিন গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। তাকে পরে ছাড়িয়ে আনা হয়। এই নেয়ামতের সঙ্গে ২০০৫ সালে পাকিস্থানে গিয়ে ৪৫ দিন ছিলেন মামুননুল। সেখানে বিভিন্ন জঙ্গি ও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তখন যোগাযোগ করেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হ’ত্যাকরার জন্য আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড ছোড়া হয়। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও ২৪ জন ওই ঘটনায় নিহ’ত হন।
পরে তদন্তে জানা যায়, মুফতি আব্দুল হান্নানের জঙ্গি দল হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের কর্মীরা বিদেশি জঙ্গিদের সহযোগিতায় ওই ঘটনা ঘটায়। আর এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ইন্ধন’। সে ঘটনায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড আনা হয় পাকিস্থান থেকে।
সেই মামলার রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃ’ত্যুদ’ণ্ড দেয় আদালত। আর খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাব’জ্জীবন জেল।
পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, মামুনুলকে জেরায় তার বিদেশ থেকে অর্থ আনার বিষয়েও তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। দেশের বাইরে থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লক্ষ কোটি টাকা এনে তিনি বিভিন্ন মসজিদে-মাদ্রাসায় জঙ্গি, উগ্রবাদী কাজে ব্যবহার করতেন।
গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলমও শনিবার জানিয়েছিলেন, হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর জেরায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে।
তিনি বলেন, পাকিস্থানের ‘তেহেরিক-ই-লাব্বায়িক’ নামের সংগঠনের আদলে তারা হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশকে গঠন করে পাকিস্থান বা আফগানিস্তানের মত এ দেশকে গড়ে তুলতে চায়। যার পেছনে জামায়াত-শিবির রয়েছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দেশের কোন মাহফিলে কে ওয়াজ করবেন, সেটাও হেফাজতে ইসলামের নেতাদের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহবুব বলেন, রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন নামের সংগঠনটি বেশ তৎপর। হেফাজতের উগ্রবাদী নেতারা এর নেতৃত্ব দিচ্ছে। কোথাও কোন ওয়াজ মাহফিল করতে হলে তাদের মাধ্যমে আসতে আয়োজকদের বাধ্য করা হয়।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন’ এর নেতৃত্বে ছিলেন বলে দাবি করেন ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
নরেন্দ্র মোদীর সফরকেন্দ্রিক বিক্ষোভ থেকে সহিং’সতার ঘটনায় সম্প্রতি মামুনুল হকসহ হেফাজতের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার গ্রেপ্তার হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের ইসলামী ছাত্র শিবিরের একজন সাবেক সভাপতি। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত আরেক যুগ্ম মহাসচিব খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী হলেন শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।
309