বিশেষ প্রতিবেদন:
হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হকের শ্বশুরের আপন ভায়রা ভাই হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হ’ত্যাকারী মেজর ডালিম। মামুনুলের মাধ্যমেই এদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রে সক্রিয় এই পলাতক ডালিম।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, যতটুকু জানি ডালিমের আত্মীয় আমাদের মামুনুল সাহেব। তিনি প্রায়ই স্কাইপের মাধ্যমে ডালিমের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। মামুনুলের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে কথা বলতেন। অনুদান পাঠাতেন আমাদের সংগঠনকে। এছাড়াও ২০ দলীয় জোটের সাথে লিয়াজোঁ রক্ষা করতেন আমাদের মামুনুল সাহেবের মাধ্যমে এমনটাই জানি। অন্যান্য দলকে টাকা পাঠাতেন কি না সে বিষয়ে আমি সঠিক বলতে পারছি না।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য ডালিম তার আত্মীয় হেফাজত নেতা মামুনুলের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে বড় অংকের অর্থ সহযোগিতা পাঠাতেন। যা দেশে না’শকতা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হতো।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন অর রশীদ রিমান্ডে থাকা মামুনুল হকের বিষয়ে সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, পাকিস্থানে ৪৫ দিন অবস্থান করেন মামুনুল হক। সেখান থেকে জঙ্গি ও উগ্রবাদী মতাদর্শ নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। মামুনুল হক হেফাজতকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফয়দা নেয়ার পায়তারা করছিল। রিমান্ডে শাপলা চত্বরে যাওয়া থেকে শুরু করে অনেক কথার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মামুনুল হকের আপন ভগ্নীপতি মাওলানা মুফতি নেয়ামতুল্লাহ দীর্ঘ ১৫-২০ বছর পাকিস্থানে ছিলেন। সেখানে একটি মাদ্রাসাও করেছিলেন। পাকিস্থানের একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে মামুনুলের সম্পৃক্ততা ছিল। ২০০৫ সালে তিনি পাকিস্থানে যান। সেখানে ৪৫ দিন থেকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিং’সতার ঘটনা ঘটান। এছাড়া সরকার উৎখাতে মামুনুল হক সব ধরনের পরিকল্পনাও করেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এই উপ-কমিশনার বলেন, পাকিস্থানের একটি উগ্রবাদী সংগঠনকে মডেল হিসেবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে বাংলাদেশে এসে মওদুদী, সালাফী, হানাফী, কওমি, দেওবন্দসহ সব মতাদর্শের মানুষকে একত্রিত করেন মামুনুল।
তিনি বলেন, মুফতি নেয়ামতুল্লাহ দেশে এসে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হন। তখন মামুনুল হক তার বোনকে বিয়ে দেন নেয়ামতুল্লাহর সঙ্গে। ২১ আগস্ট যে গ্রেনেড হাম’লায় জড়িত মাওলানা তাজউদ্দিনের (বিএনপির এমপি পিন্টুর ভাই) সাথে নেয়ামতুল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। নেয়ামতুল্লাহ গ্রেপ্তারও হলে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় মামুনুল হকের বাবা বিএনপির চারদলীয় জোটের নেতা থাকায় ওই সরকারের আমলে জেল থেকে নেয়ামতুল্লাহকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন।
ডিসি তেজগাঁও বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে তারা যে টাকা আনতেন সেই টাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলেন। মামুনুল হকের আপন ভায়রা-ভাই জামায়াত নেতা কামরুল ইসলাম আনসারী। তার সঙ্গে মামুনুলের জামায়াতের একটি গোপন আঁতাত রয়েছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, মামুনুলকে রিমান্ডে নেয়ার পরে তার মোবাইলটি সিজ করা হয়। সেই মোবাইল থেকে অনেক তথ্য তারা পেয়েছেন। এর মধ্যে বিশেষ করে, তার মোবাইলে কাতার, দুবাই, পাকিস্থানসহ অনেক দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা আসত।
তিনি বলেন, ভারতের বাবরি মসজিদের নামে ভারতবিরোধী বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা আনতেন মামুনুল। টাকাগুলো বিকাশ, হুন্ডিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আনা হতো। বাবরি মসজিদের নাম দিলে ইসলামিক সেন্টিমেন্ট পাবে, অন্যদিকে ভারতবিরোধী মনোভাবের লোকদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাবে। এজন্য বাবরি মসজিদের নামে টাকাগুলো আনা হতো।
ডিসি বলেন, এই টাকা দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মসজিদে ও কওমি মাদ্রাসায় উগ্র জঙ্গিবাদী কায়দায় কিছু কিছু লোককে মামুনুল হক ম্যাসেজ করেছিলেন। মামুনুলকে যেন বিভিন্ন মাদ্রাসায় ওয়াজ মাহফিলের জন্য বক্তা হিসেবে নেয়া হয় সেজন্য সে অনুরোধ জানাতেন।
এর আগে ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। গ্রেপ্তারের পরের দিন মামুনুলকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।