সময় এখন ডেস্ক:
একাধিক মন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর ঘটনায় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ২২৬টি আইডি, পেজ এবং ওয়েবসাইট শনাক্ত করা হয়েছে। যারা এসব আইডি নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদের নজরদারিতে রেখেছে সিআইডির সাইবার মনিটরিং টিম। কয়েকজন যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে জন্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে যাদের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৬টি মামলা করা হয়েছে।
সিআইডির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সৌদি আরব প্রবাসী সুমন সরদার (২৫) নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে আসছেন। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের সদরপুরের ঢেউখালী। সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরত আসার সময় তাকে গ্রেফতার করতে ইমিগ্রেশনের পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছে সিআইডি। এছাড়া তুহিন শেখ নামে এক ব্যক্তি ‘শেখ তুহিন’ নামে ফেসবুক আইডি থেকে গুজব ছড়ান। এরই মধ্যে সিআইডি তাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর নিজের দায় স্বীকার করে তুহিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। আরও যেসব আইডি থেকে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা হলো- সুমন আহমেদ চৌধুরী, ওয়াহেদুল ইসলাম, মো. জাহান, জামিল হাসান আজাদ পিয়াস, লক্ষ্মীপুরের রামগতির মৃত গোলাম সোবহানের ছেলে আব্দুর রহমান, নরসিংদীর শিবপুরের সাঈদ খানের ছেলে মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মুসাফির পথিক, হাসান মাহমুদ, গোলাম নবিউল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, আমি আওয়ামী লীগের ডাক্তার, রুবেল আহমেদ, দাদা ভাই, বিএনপি ব্রেকিং নিউজ২৪, মোখলেছুর রহমান ভূঁইয়া, সুমন আহসান, সঞ্জীব আনোয়ার, থলের বিড়াল, নারায়ণগঞ্জের জামতলার মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মঈনুল হাসান আনিস, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের নান্দু আহমেদ, নওয়াব, মিনার আহমেদ, আনোয়ার পারভেজ পাভেল, ফারিয়া সুলতানা পলি, হারুন অর রশিদ, রাকিব হুসাইন, রনি সভাপতি, আমি নেতা হবো, নূর আলম রিপন, আব্দুল্লাহ ইউসুফ শামীম ও চৌধুরী আনিস।
সিআইডির দায়িত্বশীল সূত্র আরও জানায়, গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানোর ঘটনায় ৩৭ ফেসবুক আইডি শনাক্তের পাশাপাশি ৬৫টি ফেসবুক পেজ, ৬৩টি ভুঁইফোঁড় নিউজ ওয়েবসাইট, ৫টি ইউটিউব চ্যানেল, একটি ব্লগ ও ২টি ওয়েবসাইট শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি ফেসবুক আইডি ও ১১টি পেজ বন্ধ করে দিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে সিআইডি।
জানা যায়, এসব ফেসবুক আইডি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সম্পর্কে মানহানিকর স্ট্যাটাস দেওয়া হয়।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, গুজবে ইন্ধনকারী আইডি ছাড়াও একটি গ্রুপ রয়েছে যারা প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের অনলাইনে গিয়ে বিভিন্ন নিউজে পাঠক মন্তব্যের জায়গায় অশ্নীল ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়ায়।
সিআইডি বলছে, গুজব ছড়ানোর ঘটনায় এ পর্যন্ত আটজনকে তারা গ্রেফতার করেছে। অন্যদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে। এছাড়া সাইবার টহল জোরদার করা হয়েছে।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ঠেকাতে এরই মধ্যে সিআইডি সাইবার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে মোট জনবল ৩৪২ জন। বর্তমানে সাইবার সেন্টারে কর্মরত আছেন ৫২ জন। সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক ও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, ওমান, কাতার থেকে অপপ্রচার চালাচ্ছেন এমন কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে সিআইডি। দেশে বসে যারা গুজব ছড়াচ্ছেন তাদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে তুহিন শেখ, আবদুর রহমানসহ কয়েকজনকে। বিদেশে বসে গুজব রটনাকারীদের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলে এরই মধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই মধ্যে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কূটনৈতিক চ্যানেলে রাষ্ট্রদূতদের চিঠি দিয়েছে সিআইডি। এছাড়া ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে ইন্টারপোলকে অবহিত করে বিদেশ থেকে কয়েকজন গুজব রটনাকারীকে দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গুজব রটনাকারীদের ব্যাপারে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সজাগ রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পল্টন, রামপুরাসহ কয়েকটি থানায় এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। গুজব রটনাকারীরা দেশ-বিদেশে যেখানে থাকুন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।