ভুল থেকে শিখে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হেফাজতের মাজা ভেঙে দেওয়া!

0

সময় এখন ডেস্ক:

আওয়ামী লীগের সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকা অবরোধ এবং মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে তা’ণ্ডব চালিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। তাদের লক্ষ্য ছিল সরকারের পতন ঘটানো। এই উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক এই সংগঠনটি ওই বছর ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিং’সতা চালিয়েছিল। অবশ্য সরকার ওই সময় তাদের কঠোরভাবে দমন করে। কিন্তু ওই সহিং’সতার জন্য দায়ী হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরু’দ্ধে জোরালো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

নাম প্রকাশ না করে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, তখন কঠোর ব্যবস্থা নিলে হেফাজত আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারত না। এ জন্য নীতিনির্ধারকরা নিজেদের ভুল শোধরাতে চান। এবার তাদের লক্ষ্য হেফাজতে ইসলামের মাজা ভেঙে দেওয়া।

এই মুহূর্তে হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কবজায় রয়েছেন। মামুনুল হক, জুনায়েদ আল হাবিবী ও জালাল উদ্দিন রিমান্ডে পুলিশের কাছে সরকারবিরোধী না’শকতার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন।

এ মাসের ১৭ ও ১৮ এপ্রিল ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তারের পর নতুন করে না’শকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সংগঠনটির উ’চ্ছৃঙ্খল কর্মীদের রুখে দেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ঘটনায় হেফাজতে ইসলাম প্রথমবারের মতো বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে। গত রবিবার রাতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করা হয়।

এবার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে তা’ণ্ডব চালায় হেফাজত। চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে থানা, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হাম’লা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে।

২০১৩ সালে পার পেলেও এবারের দৃশ্যপট ভিন্ন। উগ্র সাম্প্রদায়িক এই গোষ্ঠীকে কোনোভাবেই ছাড় দিতে নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। বেগানা নারী নিয়ে রিসোর্টে মামুনুল হকের আপত্তিকর অবস্থায় আটক হওয়া এবং এই ঘটনার জেরে রিসোর্টে তা’ণ্ডব চালানোর পরপরই আওয়ামী লীগ নেতারা তার গ্রেপ্তার ও হেফাজতের বিরু’দ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি করেন। ফলে প্রশাসন তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক ভার্চুয়াল মতবিনিময়সভায় বলেন, হেফাজতে ইসলাম তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করেছে। তবে শুধু কমিটি নয়, সাম্প্রদায়িক সহিং’সতার রাজনীতিও বন্ধ করতে হবে।

তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের রাজনৈতিক সহিং’সতার তা’ণ্ডব কি বন্ধ হবে? শেরে বাংলানগরে নিজের সরকারি বাসভবন থেকে তিনি কুমিল্লা সড়ক জোন, বিআরটিসি ও বিআরটি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় যুক্ত হন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, হেফাজত নামধারী সন্ত্রা’সী, জঙ্গিদের আর ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই সন্ত্রা’সী গোষ্ঠীকে বিনা’শ করার এখনই সময়। তা না হলে এই দানবীয় শক্তি দেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র নষ্ট করে দেবে।

সরকার হেফাজতে ইসলামের একটি অংশকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে— এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নানক বলেন, দেশ ও জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলার প্রয়োজনে কখনো কখনো ছাড় দিতে হয়েছে। ২০১৩ সালের তাণ্ডবের পর মনে করা হয়েছিল তারা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলাম সারা দেশে যে তা’ণ্ডব চালিয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, হেফাজতে ইসলাম নামধারী সাম্প্রদায়িক এই গোষ্ঠী বিএনপি-জামায়াতের প্ররোচনায় দেশকে আবার অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছিল।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তৈরি করা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতার মাধ্যমে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে হাম’লা চালিয়েছে এবং না’শকতার সৃষ্টি করেছে। এ কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কঠোর হাতে দমন করছে।

২০১৩ সালের তা’ণ্ডবের পর হেফাজতের সঙ্গে সরকারের একটা সমঝোতা হয়েছিল, যে কারণে চরম ধ্বং’সযজ্ঞ চালিয়েও হেফাজতের নেতাকর্মীদের সাজার মুখোমুখি হতে হয়নি— সরকারের বিরু’দ্ধে এমন অভিযোগ থাকার বিষয়ে হানিফ বলেন, এটা ঠিক নয়।

দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তাই সরকার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ সব সময় স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সে কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।

এদিকে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামকে স্থায়ীভাবে ব্যান করার দাবি জানিয়েছে আহলে সুন্নাত নামের একটি সংগঠন। হেফাজতের বিরু’দ্ধে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বি’শৃঙ্খলা সৃষ্টি, জঙ্গিবাদ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ এনেছে আহলে সুন্নাত। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ উত্থাপন করে। কালেরকণ্ঠ।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!