‘যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত’

0

আইন আদালত ডেস্ক:

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা পাকিস্থানিদের দোসর হিসেবে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত, সেই সকল যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য আইনি কাঠামো তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন-বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।

বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার কাজ গত বছর থেকেই শুরু হয়েছে। এখন এটা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হলে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করারও দাবি ওঠে সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে। তাতে সমর্থন দিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করে জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল। রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে বিভিন্ন দল গঠন করে তারা ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরে বাধ্য করার মত যুদ্ধাপরাধ ঘটায় সারা দেশে। সে সময় সাধারণ মানুষের ধনসম্পদও লুট করা হয়। সেসব যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ আদালতে এ পর্যন্ত জামায়াতের ৭ শীর্ষ নেতা এবং বিএনপির ১ জনের সাজা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আরো অনেকের ফাঁসির রায় আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলেছে, সাধারণ জ্ঞান ও দালিলিক প্রমাণাদি থেকে এটা স্পষ্ট যে, জামায়াত ও এর অধীনস্ত সংগঠনের প্রায় সবাই সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছেন। গোলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী একটি ক্রিমিনাল দল হিসাবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজ করেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন গড়ে উঠলে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবিও জোরালো হয়ে ওঠে। সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানও ২০১৫ সালে এক অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্তদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবিতে সমর্থন দেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ওই বছরই আরেক অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য কোনো আইন নেই। সেজন্য সরকার আইন প্রণয়ন করবে। পরের বছর এপ্রিলে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরি করার এবং ভোটাধিকারও কেড়ে নেওয়া হবে।

এরপর ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনি ও দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার একটি প্রস্তাব জাতীয় সংসদে তোলা হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সেদিন সংসদে বলেন, যাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, তাদের সম্পত্তি ওয়ারিশের হাতে চলে যাওয়ায় আইনের মাধ্যমে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সময় লাগবে। তবে যারা পলাতক রয়েছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে ‘কোনো অসুবিধা নেই’।

তবে এরপর প্রায় আড়াই বছর হয়ে গেলেও সেই আইন এখনও মন্ত্রিসভায় ওঠেনি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আনিসুল হকের হাতেই রেখেছেন। কসবায় একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার ট্রেনে করে ঢাকা থেকে আখাউড়ায় আসেন তিনি। সেখান থেকে সড়ক পথে যান কসবায়। এ সময় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা মন্ত্রীর হাতে কাগজের নৌকা তুলে দেয়। পাশাপাশি ফুল ছিটিয়ে তাকে বরণ করা হয়।

বিডি নিউজ

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!