বিশেষ প্রতিবেদন:
দেশের অন্তত ২৩টি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছে। সেখানে হেফাজতের নেতা এবং মাদ্রাসার শিক্ষকদের বাধা উপেক্ষা করে কওমি মাদ্রাসার সিনিয়র ছাত্ররা জড়ো হয়েছিলেন মাদ্রাসাগুলোর ভবিষ্যৎ এবং মাদ্রাসা বন্ধ হলে করণীয় নিয়ে তারা আলোচনা করেন।
এই আলোচনার পর কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন, তাদের মাদ্রাসাগুলো যেন বন্ধ না করে দেওয়া হয়। হেফাজতের আন্দোলনে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আর অংশগ্রহণ করবে না। রাস্তায় নেমে আর অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী করবে না। এইসব সভায় হেফাজতের কঠোর সমালোচনা করা হয় এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে হেফাজতের নেতারা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যবহার করেন এরকম অভিমতও ব্যক্ত করা হয়।
দেশের আবাসিক কওমি মাদ্রাসাগুলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। করোনা মোকাবেলার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সেটি তদারকির জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে আবাসিক কওমি মাদ্রাসাগুলোর তালিকা প্রণয়ন এবং সেখানে সরকারি নির্দেশনা কার্যকর হচ্ছে কি না তা তদারকি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা নিজেরা আলাপ আলোচনা করছেন এবং কর্মী সমাবেশের আদলে তারা বৈঠক করে সরকারের কাছে মাদ্রাসাগুলো বন্ধ না করার অনুরোধ করছেন। এই অনুরোধের পাশাপাশি তারা কিছু কিছু বক্তব্য, মন্তব্য করেছেন।
ঢাকা এবং কেরানীগঞ্জের ১১টি মাদ্রাসায় এরকম সাধারণ ছাত্রদের সভার কথা বলা হয়। তারা একে সাধারণ মত বিনিময় সভা বলে অভিহিত করছেন। ছাত্রদের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এই রমজান মাসে তাদের মাদ্রাসাগুলো চলার মত দানের টাকা আসে। বিভিন্ন মানুষ দান খয়রাত করেন। এই অবস্থায় যদি মাদ্রাসাগুলো বন্ধ থাকে তাহলে তাদের জন্য একটা সংকট তৈরি হবে।
এই প্রেক্ষিতে ঢাকা এবং কেরানীগঞ্জের যে ১১টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বৈঠক করেছেন, সেখানে হেফাজতে ইসলামের নেতাদেরকে রাখা হয়নি। এমনকি হেফাজতের নেতারা এই বৈঠকের বিষয়ে কিছুই টের পাননি।
মাদ্রাসার সিনিয়ার ছাত্ররা এই বৈঠকে পরস্পরের সাথে মত বিনিময় করেন। সেখানে তারা হেফাজতের সাম্প্রতিক আন্দোলন এবং অতীতের আন্দোলনের তীব্র সমালোচনা করেন।
সাধারণ ছাত্রদের আলোচনায় উঠে এসেছে, এতিম বাচ্চাদেরকে ব্যবহার করে হেফাজতের নেতারা দেশে অশান্তির সৃষ্টি করছে, আর বদনাম হচ্ছে কওমি মাদ্রাসাগুলোর। তাই এই ১১টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা ভবিষ্যতে হেফাজতের ডাকা কোনো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে না।
শুধু ঢাকায় নয়, চট্টগ্রামেও একাধিক মাদ্রাসায় এমন বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে বরিশাল, সিলেট ও কুমিল্লাতেও। একটি সূত্র বলছে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ঘটনার পর এখন নিজেরা একটা গোপন নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব, নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে তারা একটি ঐক্যমতের জায়গা তৈরি করেছে। তাদের এসব গ্রুপে হেফাজত নেতাদের ঘনিষ্ঠ কাউকে রাখা হয়নি।
অতীতে দেখা গেছে, হেফাজতের নিয়ন্ত্রণাধীন মাদ্রাসার শিক্ষকরা যা বলতেন সেটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই ছিলো ছাত্রদের একমাত্র কাজ। আর মাদ্রাসার শিক্ষকদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে হেফাজতে ইসলাম।
২০১৩ সালের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে এভাবে উসকে দেয়া হয়। এবার ২৬ এবং ২৭ মার্চে একই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এতে অনেক মাদ্রাসার ছাত্র প্রাণ হারিয়েছে, অনেকেই আহত হয়েছে। অনেকের নামে মামলা হয়েছে। কিন্তু হেফাজত নেতারা কারো খোঁজখবর নিচ্ছে না।
এ কারণেই মাদ্রাসার সিনিয়র ছাত্ররা মিলিত হয়ে এরকম একটি অবস্থান গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে হেফাজতের নেতারা দাবি করছেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে সরকারের একটি মহল তাদের বিরু’দ্ধে উসকে দিচ্ছে। সেই সাথে মাদ্রাসাগুলোতে সরকারি হস্তক্ষেপ শুরু হয়েছে। এতে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে হেফাজত নেতাদের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। যার পরিণতি খারাপ হতে পারে বলে হেফাজতের নেতাদের মত।