বিশেষ সংবাদদাতা:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবগঠিত মন্ত্রিসভায় এসেছে অনেক বড় পরিবর্তন। পুরনোদের স্থলে এসেছেন নতুনেরা। কিন্তু মন্ত্রিত্ব হারিয়েও ম্লান হয়নি তারা। হননি হতোদ্যম। বন্ধ হয়নি তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা। রাজনীতির মাঠে সরব তারা। তাদেরকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কর্মী সমাবেশে, তাদের নির্বাচনী এলাকায় কর্মসূচিতে এবং দলীয় কর্মকাণ্ডেও তারা সোচ্চার হয়েছেন। এরকম ব্যক্তির সংখ্যা কম হলেও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তাদের তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সাবেক পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সপ্তমবারের মত নির্বাচিত হলেও মন্ত্রিত্ব পাননি। এর আগেরবার তিনি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু মন্ত্রিত্ব না পেলেও তাকে দলীয় কর্মকান্ডে সরব দেখা যাচ্ছে। তিনি ১৯ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশের সকল কর্মকান্ডে সক্রিয় রয়েছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় তিনি যাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে তিনি দলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জামায়ালপুরে যে উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো চলছিল সেগুলো চালিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো তদারকিও করছেন।
যোগাযোগ করা হলে মির্জা আজম বলেন, মন্ত্রিত্ব একটা দায়িত্ব। আমার মূল দায়িত্ব হলো আমি একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য, এলাকার জনগণ আমাকে উন্নয়নের জন্য ভোট দিয়েছেন। এলাকার উন্নয়ন ও আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার জন্য আমার যতটুকু শক্তি আছে তা দিয়ে আমি কাজ করে যাবো।
এবার মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিত্ব পাননি দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। মন্ত্রিত্ব না পেলেও তার মধ্যে কোনো দুঃখবোধ নেই। বরং তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। মন্ত্রিসভা যেদিন গঠিত হয় সেদিন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেও, পরের দিনই তিনি নির্বাচনী এলাকায় যান। নির্বাচনী এলাকায় তিনি কর্মীসমাবেশ করেন। উন্নয়নের যে অঙ্গীকারগুলো করেছেন সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছেন বলে জানা গেছে।
যোগাযোগ করা হলে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন যে, নির্বাচনী এলাকায় আমার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। এলাকার জনগণ উন্নয়নের জন্যই আমাকে ভোট দিয়েছে। কাজেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা আমার কাজ। প্রধানমন্ত্রী যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই মন্ত্রিত্ব দিয়েছেন। মন্ত্রিত্ব না পেলেই মন খারাপ করে থাকতে হবে এটা কোন রাজনৈতিক আচরণ হতে পারে না।
এবার মন্ত্রিত্ব বঞ্চিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এবং দুইবারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। মন্ত্রিত্ব বঞ্চিত হওয়ার পরও তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও বেশি সক্রিয় হয়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তার নির্বাচিত এলাকায় দুইবার সফর করে এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে সমন্বয় সভা করেছেন।
যোগাযোগ করা হলে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, মন্ত্রী থাকার কারণে আমি এলাকার দিকে তেমন নজর দিতে পারিনি। মানুষ অনেক আশা করে আমাকে নির্বাচিত করেছে। এলাকার যে উন্নয়ন সেদিকটা আমি এখন বেশি করে দেখতে পারব। এলাকার উন্নয়ন হলেই আমার রাজনীতি সফল হবে।
আওয়ামী লীগ এবারের মন্ত্রিসভায় পুরনো অধিকাংশ মন্ত্রীকেই বাদ দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই হতাশাগ্রস্থ হয়ে রাজনীতিতে অদৃশ্যমান হয়ে গেছেন। তাদেরকে কোন কর্মকান্ডে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি দলীয় কর্মকান্ডেও তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যেমন- মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, শাজাহান খান প্রমুখ। কিন্তু বিগত দিনের অনেক মন্ত্রী এবার মন্ত্রিত্ব না পাওয়ার পরও দলের হাল ধরেছেন। এলাকায় কাজ করছেন এবং সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য নিজেদেরকে উজাড় করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষনেতা বলেছেন, যারা মন্ত্রিত্ব পাননি, মন্ত্রিত্ব বঞ্চিতদের কাছ থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এটাই প্রত্যাশা করে।
1