সাক্ষাৎকার: বিএনপি আপন-পর চেনে না- খালেদার উপদেষ্টা তৈমুর

0

সময় এখন ডেস্ক:

সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি সামনে এনে দলের নেতৃত্বে পরিবর্তনের দাবিও তুলছেন বিএনপির নেতারা। শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তাদের। দলের অবস্থান আর নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযোগ, অভিমানের শেষ নেই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকারের।

সংস্কারের দাবি নিয়ে যারা সোচ্চার তাদের মধ্যে তৈমুর একজন। তিনি প্রকাশ্যেই বলছেন, ত্যাগীদের নিয়ে দল পুনর্গঠনের গুরুত্ব। একই সঙ্গে যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার না করে ‘বেইমানি’ করেছে তাদের বহিষ্কারের দাবিও তুলছেন। নিজ দলের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি আপন-পর চেনে না।’

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি তৈমুর। এ নিয়ে তার ক্ষোভের শেষ নেই। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হলেও ভোটের আগের রাতে তাকে বসিয়ে দেওয়া হয়, যা নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে নানা সমালোচনা হয়েছিল। সেই ক্ষোভের কথা এখনো ভোলেননি তিনি।

কীভাবে দল পুনর্গঠন চাইছেন?

অনেক সময় দলে ক্র্যাকডাউন হয়। আওয়ামী লীগেও হয়েছে, বিএনপিতেও হয়েছে। তা থেকে শিক্ষা নিতে হয়। কিন্তু ১/১১ থেকে বিএনপি শিক্ষা নেয়নি। এবার নির্বাচনে যা হয়েছে এর থেকে যদি বিএনপি শিক্ষা নিতে পারে তাহলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

দলকে ৩ ভাগে ভাগ করতে হবে। যারা এবার নির্বাচনে দলের জন্য কাজ করছে তারা এক গ্রুপ। যারা কাজ করেনি তারা এক গ্রুপে এবং যারা বিরোধিতা করেছে তারা এক গ্রুপে থাকবে। আর যারা বিরোধিতা করেছে তাদের বাদ দিতে হবে। বহিষ্কার করতে হবে।

যারা কাজ করেছে তাদের দিয়ে দল পুনর্গঠন করতে হবে। যেখানকার কমিটি সেখানে স্থানীয়ভাবে সমাধান করে দিতে হবে। ওয়ার্ডের কমিটি ওয়ার্ডে বসেই করতে হবে। ঢাকায় বসে, চাপিয়ে দিয়ে কমিটি করে দেবে, সেটা হবে না। কমিটি করতে হবে সাংগঠনিক পদ্ধতিতে। যদি এই কাজটি করতে পারে তাহলে দল ঘুরে দাঁড়াবে।

আপনার এই পরামর্শ কি শীর্ষ পর্যায়ে জানিয়েছেন?

আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে আমরা হাইকমান্ডের কাছে ম্যাসেজ পৌঁছে দিচ্ছি। যেদিন আমাদের ডাকবে সেদিন এর ব্যাখ্যা দেব, আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব। কারণ, আমরা জীবন-মরণ সমস্যায় দাঁড়িয়ে। বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্যের সঙ্গে আমাদের ভাগ্য জড়িয়ে ফেলছি। পরিবার-পরিজনের ভাগ্য জড়িয়ে ফেলছি। তাই এখানে রাঘঢাকের কিছু নেই। দলের ভালোর জন্য সব বলতে হবে।

মূল্যায়নের বিষয়টি যদি পরিষ্কার করতেন….

১/১১’র সময় যারা দলের বিরোধিতা করেছে তারা পরে পুরস্কার পেয়েছে। কালকে এসে আজকেই নমিনেশন পেয়ে গেল এটা কেমন কথা। আগে দলকে সাংগঠনিক পর্যায়ে আসতে হবে। আমরা তখনই প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। তারপরও যা হওয়ার হয়ে গেছে সামনে আর এটা হতে দেওয়া যাবে না।

শীর্ষ নেতাদের দল থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে অনেকে কথা বলছেন। আপনি কী মনে করেন?

হয়তো অনেকে অসুস্থ, বয়সের কারণে সময় দিতে পারেন না। কিন্তু তাদের সার্ভিসটা আমাদের নিতে হবে। তারা তো দক্ষ রাজনীতিবিদ। আমি বাদ দেওয়ার পক্ষে না। কিন্তু সার্ভিসও দিলেন না, আমেরিকা গিয়ে দলের নেতা হয়ে গেলেন, সেটা তো হবে না। আওয়ামী লীগের সেবা করছে এতদিন, বিএনপির চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছেন, মাটির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই তারা নেতা হয়ে গেল এটা তো হতে পারে না।

দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা হলো সবচেয়ে বড় ক্ষমতা। বাড়াতে হলে অবশ্যই আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে দলের মূল লোক কে। বিএনপি আসলে আপন-পর চেনে না। এটাই সমস্যা। দলে এখন যা চলছে, সেটা অরাজকতা।

মনোনয়ন না পাওয়ার কারণেই কি এসব কথা বলছেন?

মনোনয়ন পাইনি তাতে আল্লাহ আমায় বাঁচাইছেন। এটা লিখে দিয়েন। মনোনয়নের জন্য আমি লালায়িত নই। এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট শুরুর মাত্র ৮ ঘণ্টা আগে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলা হলো। আমি বিনা বাক্য ব্যয়ে নির্বাচনের আগের রাত ১২টায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম। আমার কাছে দল বড়। বরাবরই আমি দলের কথা চিন্তা করেছি। সব ধরনের ত্যাগ স্বীকার করে আসছি। এতকিছুর পরও আমি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি।

ঐক্যফ্রন্ট করায় বিএনপির লাভ না ক্ষতি হয়েছে?

আপাতত কোনো লাভ না দেখলেও এটা যদি কন্টিনিউ করে তাহলে লাভ হতে পারে।

জামায়াতকে বাদ দেওয়ার কথা বলেছে ড. কামাল হোসেন…

বিএনপি ও জামায়াত আলাদা দল। পারস্পারিক সহযোগিতা করছে রাজনৈতিকভাবে। কিন্তু জামায়াতের উচিত তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা। স্বাধীনতা নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ করা যাবে না। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল। প্রথম যে গুলিটা ফুটিয়েছেন তিনি হলেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু জামায়াতের জন্য বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বানাবেন এটা হতে পারে না।

শেয়ার করুন !
  • 1
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!