সময় এখন ডেস্ক:
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হামলা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্ল্যানও ছিল মামুনুর রশিদ ওরফে রিপনসহ জেএমবি সদস্যদের। একইসঙ্গে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলায় আসামিদের ছিনতাই করতে আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজনভ্যানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা তাদের। আজ রোববার (২০ জানুয়ারি) গ্রেফতার জেএমবি নেতা রিপনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
এর আগে শনিবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে গাজীপুরের টঙ্গী বোর্ডবাজার এলাকায় র্যাব অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করে এই জঙ্গি রিপনকে। সে তামিম সারওয়ার জঙ্গি গ্রুপের শুরা সদস্য হিসেবে কাজ করত।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান রোস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। ওই রাতে জঙ্গিদের ছোঁড়া গ্রেনেডের আঘাতে নিহত হন পুলিশের ২ কর্মকর্তা। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে ৫ জঙ্গিসহ ৬ জন নিহত হয়। পরে পুলিশ ১৮ বিদেশিসহ ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর প্রায় দেড় বছর সে আত্মগোপনে ছিল। এ সময় সে দেশের বাহিরে পার্শ্ববর্তী কোনো একটি দেশে ছিল। এরপর সেখান থেকে ২০১৮ সালে দেশে ফিরে এসে ভেঙে যাওয়া জেএমবিকে পুনর্গঠনের কাজ করছিল সে। একইসঙ্গে হলি আর্টিজান হামলার মামলায় আসামিদের আদালতে নিয়ে যাওয়া-আসার সময় প্রিজনভ্যানে হামলা করে তাদের ছিনতাই করার পরিকল্পনা ছিল তার।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ত্রিশালের ঘটনার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পুনঃগঠিত এই জেএমবি সদস্যরা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্পর্শকাতর স্থান ও আদালত প্রাঙ্গণে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করেছিল। যেন বিচার বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্তদের ভেতর ভীতির সঞ্চার হয়। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা যায়।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিপন জানিয়েছে, হলি আর্টিজান হামলার আগে রিপন প্রায় ৩৯ লাখ টাকা সারওয়ার জাহানকে দিয়ে হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনা ও অস্ত্র সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে জানায়। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংঘটিত হয়েছে।’
জঙ্গি হামলার অধিকাংশই রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল উল্লেখ করে মুফতি মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন হামলা পরিচালনার আগে তারা মহড়া করে অনুশীলন করতো। এ ধরনের একটি অনুশীলন মহড়ার সময়ে দুর্ঘটনায় ২০১৬ সালের এপ্রিলে বগুড়ায় শুরা সদস্য ফারদিন ও অন্য এক সক্রিয় জঙ্গি সদস্য তারিকুল ইসলাম জুয়েল নিহত হয় বলেও জানায় রিপন।
রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে বগুড়ার সাইবারটেক নামক কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় রিপনের সঙ্গে ডা. নজরুলের পরিচয় হয়। নজরুলের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়েই রিপন জঙ্গিবাদে জড়ায়। এরপর তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করার। সে ৮ লাখ টাকা সংগ্রহ করে সংগঠনকে দেয়। এর মধ্যে স্থানীয় একটি বিকাশের দোকান লুট করে ৬ লাখ টাকা, সিগারেট বিক্রেতার কাছ থেকে ছিনতাই করে ১ লাখ টাকা ও অন্য এক ঘটনায় ১ লাখ টাকা ছিনতাই করে সে সংগঠনকে দেয়। শুধু তাই নয়, গুলশান হলি আর্টিজান হামলার আগের দিন তারা বারিধারা একটি বাড়িতে কয়েকজন মিলে হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনাও করেছিল বলে জানায় র্যাবের এ কর্মকর্তা।