সময় এখন ডেস্ক:
‘৭৫ এর পর থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত সময়ে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা কেবল লুটপাটের রাজনীতি করে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ রবিবার (২০ জুন) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ে এসব পরিবারকে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ সেমি পাকা ঘর দেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় বসে শুধু নিজে খাব, নিজে ভালো থাকব সেটা তো না। ক্ষমতায় থাকা মানে হচ্ছে মানুষের সেবা করার একটা সুযোগ, মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্ত থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তা, কুড়িগ্রামের সদর, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন ও সুবিধাভোগীরা সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি পুরো বাংলাদেশ ঘুরেছি, গ্রাম-গঞ্জে, মাঠে-ঘাটে। কোথায় কী সমস্যা জানি। আওয়ামী লীগ অধিকার নিয়ে কাজ করে। জাতির পিতা মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দিয়েছেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের মাধ্যমে ভূমিহীনদের খাসজমি দেওয়া এবং তাদের জন্য গৃহনির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন, সেই থেকে যাত্রা শুরু।
আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর হস্তান্তরকালে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আজ প্রত্যেক উপকারভোগীর হাতে জমিসহ ঘর, কবুলিয়ত, দলিল, নামজারি ও গৃহসনদ হস্তান্তর করা হচ্ছে। স্থায়ী আশ্রয়স্থল পেতে যাওয়া মানুষ এরই মধ্যে মেতেছে উচ্ছ্বাস-উল্লাসে।
গরিব-অসহায় মানুষের মধ্যে যাদের জমি আছে, কিন্তু ঘর তৈরির সামর্থ্য নেই তারা বিনামূল্যে পাচ্ছেন এসব ঘর। আর যাদের জমিটুকুও নেই তাদের দুটোই দেওয়া হচ্ছে কোনো খরচ ছাড়া।
এতে স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে পাল্টে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জীবনমান। নতুন জীবনবোধ তাদের সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে স্থায়ী ঠিকানা করে দিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে ৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়ে তহবিল চালু করা হয়। পরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এগিয়ে আসেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণের পর মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গরিব-অসহায় মানুষের জন্য বিশেষ কিছু করতে চাচ্ছিলেন। সে অনুযায়ী গত বছরের জুন মাসে সারা দেশে দুই শ্রেণিতে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করা হয়।
এই তালিকা ধরে পর্যায়ক্রমে ঘর দেওয়া শুরু করেছে সরকার। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে ৬৯ হাজার ৯০৪টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ রবিবার দ্বিতীয় পর্যায়ে একসঙ্গে ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারকে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
চলমান এই প্রকল্পে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরো ১ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’ শিরোনামে। সারা দেশে মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে সরাসরি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, শেখ হাসিনা প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব-অসহায় মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
বর্তমান উদ্যোগে প্রায় ৯ লাখ পরিবার ঘর পাচ্ছে। এর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উদ্যোগে হস্তান্তর করা হয়েছে প্রায় পৌনে ২ লাখ ঘর ও ফ্ল্যাট। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই উদ্যোগে উপকারভোগী পরিবার দাঁড়াবে পৌনে ১১ লাখে। প্রতি পরিবারে গড়ে ৫ জন হিসাবে উপকারভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৫৪ লাখ।
আজ সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪৩৬টি ঘর রংপুর বিভাগে প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ১০ হাজার ৫৪৭টি ঘর, ঢাকায় ৭ হাজার ৬৩০টি ঘর, রাজশাহীতে ৭ হাজার ১৭২টি, বরিশালে ৩৭ হাজার ১৫৩টি, খুলনায় ৯১১টি, ময়মনসিংহে ২ হাজার ৫১২টি এবং সিলেট বিভাগে ১ হাজার ৯৭৯টি ঘর প্রদান করা হচ্ছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের তালিকানুযায়ী দেশে ভূমিহীন এবং গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি (ক-শ্রেণি)। আর শুধু গৃহহীন পরিবার হচ্ছে ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি (খ-শ্রেণি)।