বয়সে পঞ্চম হলেও প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতায় মন্ত্রিসভায় প্রথম প্রধানমন্ত্রী

0

বিশেষ সংবাদদাতা:

সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করে ৪র্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে আজ প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন শেখ হাসিনা। এবারের মন্ত্রিসভায় তিনি ছাড়া ৪ বারের পূর্ণমন্ত্রী আর কেউ নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ৯৬ সালের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সে হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিবার সরকার পরিচালনার সাথী একমাত্র তিনিই। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রিসভায় ৩ বারের মন্ত্রী। ৩ বারের মন্ত্রী আছেন আর শুধু স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। তিনিও ২০০৮ মেয়াদে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বয়সে বড় মাত্র ৪ জন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ মিয়া মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তি। তার জন্ম ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বরে। মন্ত্রিসভায় ২য় জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী হলেন আ.ক.ম. মোজাম্মেল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এই মন্ত্রীর জন্ম ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে ১ বছরের বড়। অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মোস্তফা কামাল প্রধানমন্ত্রীর সমসাময়িক। তার জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ জুন। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে তিনি মাত্র ৩ মাসের বড়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে আব্দুল মোমেনের ২৩ আগস্ট, ১৯৪৭। অংকের হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে ১ মাসের বড়।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতায় সবার চেয়ে অনেক উচ্চতায় নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। রাজনীতিতে তিনি এই মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং প্রাজ্ঞ। আগের মন্ত্রিসভায় যেমন তোফায়েল আহমেদ বা বেগম মতিয়া চৌধুরী বলতেই পারতেন, ৬০’র দশকেই তারা জনপরিচিতির চূড়া ছুঁয়েছিলেন। তারা বলতে পারেন, রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার চেয়ে অনেক পুরনো। যেমন ’৯৬-র মন্ত্রিসভায় অনেক মন্ত্রীই প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতেন। এমনকি, ২০০১ সালে নির্বাচন এগিয়ে আনা সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি সিনিয়র নেতারা।

২০০৮ সালে ক্ষমতায় ফিরে এসে অবশ্য মন্ত্রিসভার পূর্ণ কর্তৃত্ব ছিল প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তারপরও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনেক সিদ্ধান্তই প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপিয়ে দিতেন। ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বয়সে বড় মন্ত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি হলেও ব্যক্তিত্বে, প্রত্যয়ে ঐ মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন পূর্ণ কর্তৃত্বের অধিকারী। তাঁর সিদ্ধান্তগুলো তেমন আপত্তির মুখে পড়েনি। কিন্তু মন্ত্রিসভায় সিনিয়র সদস্য থাকায় একটি সমস্যা ছিল যে, মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর আকাঙ্ক্ষা এবং চাহিদাগুলোর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না। বিশেষ করে সিনিয়র মন্ত্রীরা তাদের মতো করে মন্ত্রণালয় চালাতেন।

এবার মন্ত্রিসভায় সে রকম পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কাল প্রথম মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের কঠোর বার্তা দেবেন বলে জানা গেছে। দুর্নীতি বন্ধ এবং নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয়ের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী একটি সমন্বয় ঘটানোর নির্দেশনা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী চাইবেন একটি ক্লিন ইমেজ নিয়ে যেন এই মন্ত্রিসভা তার মেয়াদ শেষ করে। আর অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী হয়তো তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলবেন, ‘মন্ত্রিত্ব কোন চাকরি নয়, এটা জনগণের জন্য একটি দায়িত্ব পালন মাত্র’।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!