বিশেষ সংবাদদাতা:
সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পর বিএনপিতে পরিবর্তন চায় তৃণমূল এবং শীর্ষ, বঞ্চিত নেতারা। এরমধ্যে নির্বাচনের আগে থেকেই দলের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি তীব্র অনাস্থা এবং ক্ষোভের বহিঃ প্রকাশ ঘটেছিল স্বয়ং স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের। ফলে মহাসচিবের পদে থেকে দায়িত্ব পালনে অক্ষম প্রমাণিত হয়েছেন ফখরুল- এমনটাই জানিয়েছেন তৃণমূল পর্যায়ের বঞ্চিত ও ত্যাগী নেতারা।
এরই মধ্যে দলের হাল ধরতে মহাসচিব হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। গতকাল রোববার বিকেলে তারেক জিয়াকে ফোন করেন রিজভী। এসময় তিনি দলের মহাসচিব হওয়ার জন্য নিজেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ফোনালাপে রুহুল কবীর রিজভী বিএনপির সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার কাছে। সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ করেন তিনি। দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনের পর থেকে দলের যেসব নেতাকর্মী মামলা-হামলায় জর্জরিত তাদের কোন খোঁজখবর সিনিয়র নেতারা নিচ্ছেন না। বিশেষ করে মির্জা ফখরুল এসব নিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন; সিনিয়র নেতারা দলের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসছেন না ও কোন রাজনৈতিক নির্দেশনা নেতাকর্মীদের দিচ্ছেন না এবং কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দলের সিনিয়র নেতাদের পাওয়া যাচ্ছে না, নেতাকর্মীদের মামলার বিষয়ে দলীয় সিনিয়র আইনজীবীরাও নিরুত্তর, অধিকাংশ সময়ই তারা ফোন ধরেন না। এই অবস্থায় দল চালিয়ে নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে তারেক জিয়ার কাছে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবীর রিজভী।
সূত্রটি জানায়, তারেক জিয়া রিজভীকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন- শীঘ্রই দলের পুনর্গঠন হবে। নতুন মহাসচিব নিয়োগ করা হলে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। তখন রিজভী নিজেই এই দায়িত্ব নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। রিজভী তারেককে বলেন- আমি সার্বক্ষণিকভাবে বিএনপির কাজ করছি। দলীয় কার্যালয়েই ২৪ ঘণ্টা এসব তদারকি করি। দলের নেতাকর্মীদের মাঝে আমি আস্থাভাজন এবং দুঃসময়ে পরীক্ষিত। কাজেই আমাকে বিবেচনা করে দেখতে পারেন। তখন তারেক জিয়া তাকে জানান- যার যোগ্যতা আছে তাকেই মহাসচিব হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এদিকে রিজভীর মহাসচিবের পদের প্রতি আগ্রহের কথা জেনে মির্জা ফখরুল মনক্ষুন্ন হয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি দলের অপর সিনিয়র নেতাদের সামনে রিজভীর নাম উল্লেখ না করে বলেন, যারা দলের ভালো চায় না, পদ নিয়ে চিন্তা করে সারাদিন, মিছিল নিয়ে ফটোসেশন করে, তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া উচিৎ। তারা আসলে বিএনপির নাকি অন্য কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।
প্রসঙ্গত, বিএনপির নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে আগেও তারেক জিয়ার কাছে অভিযোগ করেছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।