বিশেষ সংবাদদাতা:
আসন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্রে নবনির্বাচিত সাংসদরা হস্তক্ষেপ করতে পারেন- এমন গুঞ্জন উঠেছে। যদিও এ বিষয়ে সরকার দলের নীতি নির্ধারকরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সাংসদদেরকে এই নির্বাচনের প্রার্থীতার বিষয়ে দূরে থাকতে। যদিও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেরাই সাংসদদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
২০১৪ এবং ২০০৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে সংসদ সদস্যদের বিরোধ ছিল প্রকাশ্য। অধিকাংশ উপজেলা চেয়ারম্যান সাংসদ হবার জন্য এবং দলের নিয়ন্ত্রণ নিতে সাংসদদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রচারে নেমেছিলেন। অনেক সংসদ সদস্যই মনে করেন উপজেলা চেয়ারম্যানদের জন্যই তাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার হয়েছিল। এ কারণে ২০১৪ এর সাংসদরা উপজেলা চেয়ারম্যানদের তাদের অধীনস্ত এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবী করেছিলেন। কিন্তু উপজেলা পরিষদ একটি স্বাতন্ত্র স্থানীয় সরকার কাঠামো হওয়ায় সাংসদদের দাবী হালে পানি পায়নি।
এবার অনেক নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্য শুরু থেকেই উপজেলা পরিষদকে তাদের আওতায় রাখতে চান বলে স্থানীয় পর্যায়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কয়েকজন সাংসদ ইতিমধ্যেই তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার উপজেলাগুলোতে পছন্দের প্রার্থীও ঠিক করে ফেলেছেন! তাদের মনোনয়নের বিষয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে দেন দরবার থেকে শুরু করে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও জানিয়েছেন। কিন্তু দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলে দেওয়া হয়েছে তদবিরে কোনো কাজ হবে না। সাবধান করে দেওয়া হয়েছে- তদবির করলে সেটাও অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে।
দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, সাংসদদের কাজ আর উপজেলা পরিষদের কাজ সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দেখি সাংসদরা তার পুরো নির্বাচনী এলাকায় একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান। সবসময় খবরদারি করতে চান। এজন্যই তারা চান তাদের একান্ত অনুগতদের উপজেলা পরিষদের নেতৃত্ব দিতে। দেখা যায় দলের প্রভাবশালী এবং হেভিওয়েট নেতারা তাদের একান্ত বাধ্যগতদের উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান বানিয়ে এলাকায় একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম করেন। হাই কমান্ড এই পরিস্থিতির অবসান চান।
প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা বলেন, ‘এর ফলে নেতৃত্বের বিকাশ এবং দলের তৃণমূলের সহজাত রাজনৈতিক বিন্যাস ক্ষুন্ন হয়। সাধারণ মানুষের কথা কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছায় না। প্রধানমন্ত্রী এই অবস্থার অবসান চান। তিনি চান সাংসদদের পছন্দে নয়, জনগনের পছন্দের ব্যাক্তি যেন উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন পায়।’
দলীয় সূত্র বলছে, উপজেলা চেয়ারম্যান নিয়ে আগে দলের সাংসদদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করতো। তারা ভাবতেন উপজেলা চেয়ারম্যানই জাতীয় সংসদে নির্বাচনে তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবেন। তারা প্রার্থী হতে চাইবেন। এজন্যই তারা উপজেলার মনোনয়নে তৎপর থাকবেন। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় সভাপতি জানিয়েছিলেন- স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। নির্বাচনে কোন ইউপি চেয়ারম্যানকেই মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ফলে সাংসদদের উপজেলা নিয়ে ভাবনার কারণ থাকা উচিৎ নয় বলে মনে করে হাইকমান্ড। সভাপতি চান- উপজেলা পরিষদ স্বাতন্ত্র্য মর্যাদায় স্থানীয় সমস্যার সমাধানে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠুক। তাই এবার মনোনয়ন হবে সাংসদদের মতামত বা পছন্দের তোয়াক্কা না করেই।
1