কুমিল্লায় ২য় স্বামীর বাড়িতে ৪র্থ স্বামীর হাতে গৃহবধূ হত্যাকাণ্ড

0

কুমিল্লা সংবাদদাতা:

নাসিমা নামে এক গৃহবধু তার ২য় স্বামীর দেয়া বাড়িতে চতুর্থ স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ২১ জানুয়ারি সোমবার রাত ৯টায় কুমিল্লার শাকতলায়। আজ মঙ্গলবার নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার পর শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন নিহতের ৪র্থ স্বামী মেহেদী হাসান।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ বছর আগে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়নের মগের কলমিয়া গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে নাসিমা আক্তারের সঙ্গে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার জায়েকবাজার এলাকার প্রবাসী আলমগীর হোসেনের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে রয়েছে। কিছুদিন পর প্রবাসী আলমগীর হোসেনকে তালাক দিয়ে আপন দেবর প্রবাসী শহীদ উল্যাহকে বিয়ে করেন নাসিমা। এ সংসারেও এক ছেলে আছে। নাসিমার নামে শাকতলায় সাড়ে ৩ শতক জমি ক্রয় করে একটি টিনশেড বাড়ি নির্মাণ এবং ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে দেন শহীদ উল্যাহ। পরে শহীদ উল্যাহর প্রবাসে চলে যাওয়ার সুযোগে হুমায়ুন কবির নামে এক যুবকের সঙ্গে নাসিমা অবাধে চলাফেরা শুরু করেন। একপর্যায়ে শহীদ উল্যাহকে তালাক দিয়ে হুমায়ুনকে বিয়ে করেন নাসিমা।

এরই মধ্যে ফেসবুকে নাসিমার সঙ্গে পরিচয় হয় বরুড়া বাজারের মেহেদী ফ্যাশনের মালিক ও বরুড়া উপজেলার আগানগর গ্রামের মেহেদী হাসানের। হুমায়ুনের সহযোগিতায় নাসিমা নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে ৩০ লাখ টাকা কাবিনে মেহেদীকে বিয়ে করেন। পরে নাসিমার বহুবিবাহ ও হুমায়ুনের সঙ্গে অবৈধ সম্পের্কের বিষয়টি জানতে পেরে মেহেদী যোগাযোগ বন্ধ দেন। এর জেরে নাসিমার দায়ের করা যৌতুকের মামলায় জেলে যেতে হয় মেহেদীকে। পরে মেহেদীর পরিবারের হস্তক্ষেপে নাসিমা মামলা প্রত্যাহার করে মেহেদীকে জামিনে মুক্ত করেন। এরপর নতুন করে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন তারা। এ সংসারে দেড় বছরের এক ছেলেও আছে। এক ছেলে নোয়াখালীতে বাবার বাড়িতে, আরেক ছেলে মায়ের বাসায় থেকে শাকতলা হাইস্কুলে ৯ম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে মা-বাবার সঙ্গে থাকত।

স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন ছেলের সঙ্গে নাসিমার বেপরোয়া জীবন-যাপন ও চলাফেরা করার কারণে তার ৪টি সংসারেই কলহ দেখা দিয়েছিল। তার শেষ পরিণতি হলো মৃত্যু। সোমবার বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে এসে বড় ছেলে দেখে বাড়ির গেইটে তালা ঝুলছে। মা-বাবার মোবাইল বন্ধ পেয়ে সন্ধ্যায় সে বাড়ির দেয়াল টপকে খোলা জানালা দিয়ে গেইটের চাবি নেয়। এরপর গেইট খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখে মায়ের মরদেহ কম্বলে মোড়ানো। বাবা ও ছোট ভাই নেই। খবর পেয়ে ৯টার দিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন অর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নিহত নাসিমার ভাই মনির হোসেন বলেন, বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব রুমের বক্স খাটে নাসিমার মরদেহ কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখেছিল ঘাতক মেহেদী। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এদিকে নিহতের ছোট ছেলে ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ থাকলেও ঘাতক মেহেদীর ছোট ভাই ফোন করে পুলিশকে জানিয়েছেন শিশুটিকে কেউ একজন বরুড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশিদ বলেন, নিহতের গলায় দাগ দেখে ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। ঘাতককে ধরতে অভিযান চলছে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!