সময় এখন ডেস্ক:
জাতীয় সংসদ ভবনের লেক শুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। আর তাতে ধরা পড়ছে বড় বড় আকারের রুই, কাতলা, বোয়ালসহ হরেক রকমের মাছ। এসব মাছকে ঘিরে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মাঝে যেন চলছে উৎসবের আমেজ। বিকেলে অফিস শেষ করে অধিকাংশ কর্মকর্তা ছুটে যাচ্ছেন মাছের হাটে। সেখান থেকে তাজা তাজা মাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন। গত কয়েকদিন ধরে সংসদ প্রাঙ্গনে এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
জানা যায়, একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসতে যাচ্ছে আগামী ৩০ জানুয়ারি। তাই সংসদ সচিবালয়ে চলছে জোর প্রস্তুতি। নতুন করে সাজানো হচ্ছে সবকিছু। বাদ যায়নি সংসদের লেকও। পুরো সংসদ ভবনের লেকের পানি শুকিয়ে স্বচ্ছ পানি দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আর সে কারণে ধরা পড়েছে সংসদ লেকের নানা প্রজাতির মাছ।
এদিকে নির্মাণ কাজ শুরুর ৩৭ বছর পর এই প্রথম লেক সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আগে ১৯৯২ সালে একবার লেকের পানি সেচে ফেলা হয়েছিল। লেকের পানির নিচে জমে যাওয়া আড়াই ফুট কাদা অপসারণ এবং নিচে ফাটল আছে কি না, পরীক্ষা করতে এ কাজে হাত দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। আর পানি সরিয়ে ফেলার আগে সংসদ লেকের মাছ ধরা শুরু হয়।
পুরো লেকের মাছ ৬ লাখ ৪২ হাজার টাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করেছে সংসদ সচিবালয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার থেকে লেকের মাছ ধরে সংসদের সামনেই বিক্রি করা হচ্ছে। সংসদের পূর্ব পাশের এমপি হোস্টেলের প্রবেশ মুখে টানেলের নিচে বাঁশ দিয়ে ঘিরে মাছের অস্থায়ী হাট বসানো হয়েছে। রুই, কাতলা, বাইম, শোল, শিং, মাগুর, চিতল, তেলাপিয়া বোয়ালসহ হরেক রকমের মাছ ধরা পড়ছে সংসদের লেকে।
রুই মাছ ১ কেজি পর্যন্ত ১৩০ টাকায়, ১ থেকে ২ কেজি ওজনের হলে ১৮০ টাকা, ৩ থেকে ৫ কেজি ওজনের হলে ৩০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ কেজি ওজনের হলে ৪০০ টাকা এবং ৮ কেজির ঊর্ধ্বে হলে পাওয়া যাচ্ছে ৫৫০ টাকায়। ১ কেজি ওজনের কাতল মাছ ১২০ টাকা, ১ থেকে ২ কেজি ওজনের হলে ১৭০ টাকা, ৩ থেকে ৫ কেজি ওজনের হলে ২৫০ টাকা, ৫ থেকে ৮ কেজি ওজনের হলে ৩৬০ টাকা, ৮ কেজির ঊর্ধ্বে হলে ৪২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
৫০০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া মাছ ১০০ টাকা কেজি, ২ কেজির ঊর্ধ্বে ১৮০ টাকা। চিতল মাছ দেড় কেজি পর্যন্ত ৩৫০ টাকা, ৫ থেকে ৮ কেজি ওজনের হলে ৬৫০ টাকা। শোল মাছ ৫০০ গ্রাম ওজনের হলে ২৫০ টাকা, ১ কেজির ঊর্ধ্বে হলে ৩৫০ টাকা। ২৫০ গ্রাম ওজনের বাইম ৪০০ টাকা কেজি, ৫০০ গ্রাম ওজনের বাইম ৬০০ টাকা। শিং-মাগুর ৮ থেকে ১০টায় ১ কেজি হলে ৮০০ টাকা, ১৬টায় ১ কেজি হলে ৪৫০ টাকা।
মাছ ব্যবসায়ী গণি মিয়া বলেন, যতদিন মাছ আছে ততদিন বিক্রি চলবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে মাছ পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সংসদ ভবনের পুরো লেকের ১৫ ফুট বৃত্তাকার একটি অংশ বাদে পুরোটার নিচেই কংক্রিটের মেঝে। এই সংস্কার কাজে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ধরা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই কাজ শেষ করতে হবে। না হলে বৃষ্টিতে লেক আবার ভরে যাবে।”
১৮ একরের সংসদ লেকের পানির মূল উৎস বৃষ্টি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে মৎস্য অধিপ্তর সংসদ লেকে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের পোনা ছাড়ে। সংসদ ভবনের লেকের মাছ ধরার জন্য আগে টিকেট বিক্রি করত পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাব। তবে দরপত্র দিয়ে এবার মাছ বিক্রি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বলে সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান।