আজ বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিবস

0

সময় এখন ডেস্ক:

বলা হয়, দুঃসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যদি বলা হয়- একাত্তরে বাঙালির সবচেয়ে কঠিন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধুরাই প্রকৃত বন্ধু, তবে কি ভুল বলা হবে? সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অকৃত্রিম বন্ধু হলো রাশিয়া। রাশিয়া এমন একটি দেশ যাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির অস্তিত্বের লড়াই। সেসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো পরাশক্তিগুলো যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তখন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের অভূতপূর্ব সহায়তা দিয়েছিল। যুদ্ধের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের অবদান ঈর্ষণীয়। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ বিনির্মাণেও তারা বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো পাশে ছিল। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে পুঁতে রাখা মাইন অপসারণে রুশ সেনাদের অবদান কোনভাবেই ভুলে যাওয়ার নয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে আমাদের কোন খাবার ছিল না, তারা খাবার দিয়ে সাহায্য করেছে। ত্বরিত গতিতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বন্ধ করতে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপিত হলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন তাতে ভেটো দিয়েছিল। তারা যদি ভেটো না দিত, তাহলে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হতো। ফলে আমরা আর স্বাধীনতার স্বাদ পেতাম না। এমনকি যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌবহর যদি পাঠানো না হতো; তবে যুদ্ধের শেষ পর্যায়টা ভিন্ন রকম হতো পারত। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তিতেও তাদের অবদান অতুলনীয়।

মুক্তিযুদ্ধের পর চট্টগ্রাম বন্দরকে কার্যোপযোগী করে তুলতে পাকিস্থানিদের পুঁতে যাওয়া হাজার হাজার মাইন, ডুবিয়ে দেয়া জাহাজের জঞ্জালমুক্ত করতে গিয়ে রুশ বাহিনীর ৩ জন বীর সেনা সদস্য জীবন উৎসর্গ করেন।


ছবি: বঙ্গবন্ধুকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের শীর্ষ নেতা লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ

সে সময়কার সোভিয়েত ইউনিয়ন এখন আর নেই। তবে রাশিয়া আজও বাংলাদেশের সবচেয়ে ভাল বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম। এদেশে যখনই কোনো সংকট দেখা দেয়, তখন রাশিয়াই সবার আগে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ায়। ১৯৭৫ এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল, তখন প্রথমেই যে দেশগুলো ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল তার মধ্যে একটি।

২০১৪’র নির্বাচনের পর যে দেশগুলো বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিল সেখানেও রাশিয়া ছিল অগ্রদূত। এবারের নির্বাচনের পরও রাশিয়া বাংলাদেশের অগ্রগতির পক্ষেই নিজেদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।

মুক্তিযুদ্ধ ছিল এদেশের অস্তিত্বের অগ্নিপরীক্ষা। সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বাংলাদেশের বন্ধু ছিল তারাই দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু। বাংলাদেশের সমস্ত দুর্যোগ-দুর্বিপাক, অগ্রগতি-অভিযাত্রা সবকিছুর সঙ্গেই তারা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের যে বন্ধুত্ব সেটার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিবস আজ। ১৯৭২ সালের আজকের এই দিনেই বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা আজকের রাশিয়া। বাঙালি জাতি কৃতজ্ঞতার সাথে রাশিয়ার অবদান স্মরণ করছে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!