লাইফ স্টাইল ডেস্ক:
ক্যান্সারের নাম শুনলেই মানুষ ভয় পেয়ে যায়। এ রোগটি সম্পর্কে অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না। তবে, স্তন ক্যান্সারের সব থেকে ভালো ওষুধ হল মদ। প্রতিদিন এক গ্লাস বিয়ার বা মদ খেলে এই রোগের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
কয়েক বছর আগে ৩৫ থেকে ৭০ বছর বয়সী ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার ৮৫০ জন নারীর ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে এই তথ্যটি জানা গেছে। স্পেনের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই সমীক্ষাটি চালানো হয়েছিল। ১১ হাজার ৫৭৬ জন স্তন ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত নারীর ওপরেও এই সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে যে তারা সুস্থ হয়ে উঠছেন। প্রতিদিন মদ্যপান করার ফলে তাদের শরীরে এই রোগের জীবাণুগুলি আস্তে আস্তে দূর হতে শুরু করেছে।
স্প্যানিশ গবেষকের মতে, যদি প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে মদ্যপান করা যায় তাহলে ৪ শতাংশ হারে শরীরে এই রোগের সংক্রমণ রোধ করা যেতে পারে। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই এটি সেবন করা উচিত বলে তিনি জানান।
স্তন ক্যান্সারের সতর্কতাসূচক লক্ষণ
১। স্তন কিংবা বুকে ব্যথা
স্তন কিংবা বুকে ব্যথা, ধড়ফড় করা, টনটন করা অথবা তীব্র আঘাতের মতো ব্যথা কিংবা অস্বস্তি কোনো ভালো লক্ষণ নয়। ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে বেঁচে যাওয়া এক রোগী ডাক্তারের কাছে বর্ণনা করেন, তীব্র ব্যথা যা আসে এবং চলে যায়। আরেকজন এই ব্যথাকে মৃদু বৈদ্যুতিক শকের সাথে তুলনা করেছেন। এটা আমার বাম স্তন থেকে প্রবাহিত হয়ে ডান স্তনবৃন্তে যাচ্ছে বলে মনে হয়।
স্তন টিউমার বিভিন্ন ফর্মে হতে পারে। একক পিন্ড অথবা বিক্ষিপ্ত বীজের মতো নির্দিষ্ট আকারহীন একাধিক কর্ষিকার মতো স্তন টিস্যুর মধ্যে ছড়িয়ে থাকতে পারে। এগুলি স্তনবৃন্তের পিছনে কিংবা দুগ্ধ নালীতে থাকতে পারে। এই টিউমারের বৃদ্ধির ফলে ব্যথা অথবা অস্বস্তিবোধ হয়। অনেক সময় স্তন টিউমার চাকা কিংবা মাংসপিন্ডের মতো অনুভূত হয় না। এক্ষেত্রে শতকরা ৩০ ভাগের বেলায় একে সনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়।
এসব ক্ষেত্রে কখন, কীভাবে এবং কোথায় ব্যথা হয় তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। ডাক্তারকে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে হবে। ডাক্তার যদি অ্যান্টিবায়োটিক দেয় তাহলে কোর্স পুরো শেষ করবেন। তারপরও ব্যথা না সারলে অন্যান্য টেস্ট করার জন্য তাকে অনুরোধ করুন।
২। স্তনে চুলকানি
এই লক্ষণ প্রদাহজনক স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ বলে বিবেচনা করা হয়। এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, অনেক নারী এ ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার পর, এটাকে চর্মরোগ বিবেচনা করে মাসের পর মাস চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
স্তনে ফুসকুড়ি হলে তীব্র চুলকানি থেকে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে মলম ব্যবহার করেও কোন উপকার পাওয়া যায় না। এ ধরনের সমস্যায় স্তনের চামড়া আঁশযুক্ত হয়ে যায়। স্তনে টোল খায় অথবা খাঁজের সৃষ্টি হয়। স্তন কুঁচকে যায়। এক্ষেত্রে দ্রুত বর্ধমান ক্যান্সার টিস্যুর কারণে স্তন টিস্যু দিয়ে লসিকা নালীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়। অন্য যেকোন স্তন ক্যান্সারের তুলনায় প্রদাহজনক স্তন ক্যান্সার অনেক বেশি ভয়াবহ।
৩। পিঠের ওপরের দিকে, কাঁধে কিংবা ঘাড়ে ব্যথা
স্তন ক্যান্সারের অনেক রোগীর ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা না করে কাঁধে কিংবা ঘাড়ে, পিঠে ব্যথা করে। এ কারণে অনেকে মেরুদন্ড বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ক্রনিক পিঠে ব্যথার চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। যা ফিজিক্যাল থেরাপি দিয়েও ঠিক করা যায় না।
অনেক স্তন টিউমার গ্রন্থিময় টিস্যুতে বিকশিত হয়, যা বুকের গভীরে প্রসারিত হয়। এই টিউমার বড় হয়ে পাঁজরে কিংবা মেরুদন্ডে চাপের সৃষ্টি করে। ফলে এসব এলাকায় ব্যথার উদ্ভব হয়। এ থেকে পরবর্তীকালে দ্বিতীয় পর্যায়ের হাড়ের ক্যান্সার হতে পারে। এক্ষেত্রে পিঠের ব্যথা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। চিকিৎসায় ব্যথা ঠিক না হলে পিঠের স্ক্যান করান।
৪। স্তনের আকার পরিবর্তন
স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় ধারণা হলো স্তনে চাকার উপস্থিতি। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ৪২ বছর বয়সি একজন নারী বলেন, চাকার পরিবর্তে আমার একটি স্তন ডিম্বাকৃতির মতো হয়ে গিয়েছিলো। এই ধরণের সমস্যা অনুভব করার চেয়ে আয়নার সামনে বেশি দৃশ্যমান হয়। এক্ষেত্রে ব্রা খুলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালভাবে আপনার স্তন পর্যবেক্ষণ করুন।
৫। স্তনবৃন্তে পরিবর্তন কিংবা সংবেদনশীলতা
সাধারণত টিউমার স্তনবৃন্তের পিছনে অবস্থান করে। ফলে এর আকারের পরিবর্তন ঘটে। পুরুষের স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রায় সময় স্তনবৃন্তের পরিবর্তন দেখা যায়। স্তনবৃন্তের আশপাশের জায়গা সংকুচিত হয়ে যায়। নিপল এ অসামঞ্জস্যতা দেখা যায় ও মোটা হয়ে যায়, স্তনের চামড়ায় ছোট ছোট ছিদ্রের মত দেখা যায়। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তরা প্রায় সময় লক্ষ্য করেন তাদের স্তনবৃন্তের সংবেদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। নিপল থেকে রক্ত, পুঁজ অথবা পানি জাতীয় পদার্থ বের হয়ে আসছে।
আমেরিকান সোসাইটি অব ব্রেস্ট সার্জন জানিয়েছে, পুরুষের স্তন ক্যান্সার নারীর তুলনায় দেরীতে শনাক্ত করা যায় এবং এটা গুরুতর হয়ে থাকে।
৬। বগলে পিন্ড কিংবা ফোলাভাব
বগলে কোন ব্যথা হলে আঙ্গুল দিয়ে সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে দেখুন। স্তন থেকে নির্গত লসিকা তরলের মাধ্যমে বগলের লসিকা গ্রন্থিতে প্রথমে স্তন ক্যান্সারের বিস্তৃতি ঘটে। ঠান্ডা, ফ্লু অথবা সংক্রমণের কারণে লসিকা গ্রন্থি ফুলে গেলে অপেক্ষা করুন সেরে যাওয়া পর্যন্ত। যদি এক সপ্তাহের পরও বগলের ফোলা না কমে তাহলে ডাক্তারকে দেখাতে পারেন।
৭। লাল, ফোলা স্তন
স্তনে আঘাত লাগলে স্বাভাবিকভাবেই এটি ফুলে যাবে। কিন্ত স্তন যদি গরম অনুভূত হয় কিংবা লালচে রঙ এর হয়ে যায় তাহলে স্তনগ্রন্থির স্ফীতি অথবা প্রদাহ বলে সন্দেহ করতে পারেন। এটা প্রদাহজনক স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া স্তনের টিউমারের কারণে স্তন ফুলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি নিজেই ফোলাভাব পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।