সময় এখন ডেস্ক:
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী ৩ ডোজ টিকা নেয়ার অভিযোগ তোলা সেই ওমর ফারুকের অবস্থান নিয়ে আবারও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, পর্যবেক্ষণে রাখার পর ফারুককে গত ৩ আগস্ট মায়ের সঙ্গে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে ফারুকের স্বজনেরা বলছেন, ফারুক এখনও বিএসএমএমইউতেই আছেন।
এই বক্তব্যকে ‘উল্টোপাল্টা’ দাবি করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
প্রবাসী অ্যাপ থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করে ২৬ জুলাই সকালে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে টিকা নেয়ার জন্য যান ফারুক। সেখানে প্রথমে একটি বুথে তাকে এক ডোজ টিকা দেয়া হয়। ফারুক ওই বুথের স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে পরবর্তী করণীয় জানতে চাইলে তাকে সামনের বুথের দিকে যেতে বলা হয়।
ফারুকের অভিযোগ, পরের বুথে গেলে তাকে আবার টিকা দেয়া হয়, এরপর সামনের আরেকটি বুথ থেকে দেয়া হয় টিকার আরেকটি ডোজ।
এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ২৮ জুলাই ওমর ফারুককে র্যাবের সহায়তায় নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে নিজেদের জিম্মায় এনে হাসপাতালে ভর্তির কথা স্বীকার করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পরদিন বলেন, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলামকে প্রধানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী শনিবার (৩১ জুলাই) কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
ফারুক এখন কেমন আছেন, জানতে চাইলে রোববার বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ওমর ফারুকের তদন্ত প্রতিবেদন আসছে। সে সুস্থ হয়ে তার মায়ের কাছে ফিরেছে।
তবে ফারুকের স্বজনের দাবি, তিনি এখনও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাননি। রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভূঁইঘরে ওমর ফারুকের বাসায় গিয়ে তার থাকার কক্ষটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। প্রতিবেশীরাও জানান, তারা ফারুককে ফিরে আসতে দেখেননি।
ওমর ফারুককে দাদী রোকেয়া বেগম বলেন, আমার নাতি ভালা আছে, ওর মায়-বাপে হাসপাতালে গিয়া ওর সাথে দেখা কইরা আসে। ফারুক এহনো হাসপাতালেই আছে। হাসপাতাল থেকে বলছে, চিন্তা কইরেন না, ও পুরাপুরি সুস্থ হইলে বাসায় দিয়া আসা হবে।
ফারুকের বাবা জামাল হোসেনও দাবি করেন, তার ছেলে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, আমরা গিয়ে দেখা করে আসি, কথা বলে আসি। ও সুস্থ হলে হাসপাতাল থেকে ছাড়বে, তারপর বাড়ি নিয়ে আসবো। এর বাইরে কিছু জানতেই চাইয়েন না।
ফারুক মামাতো বোন শাহিনুর বেগম বলেন, ওমর ফারুক হাসপাতালে কোথায় আছে, কোন ওয়ার্ডে আছে তা বলা যাবে না। কারণ, নিষেধ আছে।
ফারুকের প্রতিবেশীরাও একই দাবি করছেন। আবু বক্কর নামে স্থানীয় একজন বলেন, ফারুক এখনও বাড়িতে আসে নাই। আসলে তো আমরা দেখতাম। আমাগো বাড়ির সামনে দিয়েই ওর বাড়িতে যাইতে হয়। সে বাড়িতে আসলে তো মসজিদে নামাজ পড়তে আসতো।
তবে ফারুকের স্বজন-প্রতিবেশীদের কথা একদমই মানছেন না বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ওসব বাজে কথা। ওমর ফারুক সুস্থ হয়ে তার মায়ের সঙ্গে বাসায় ফিরেছে। আপনাকে কে বলছে এমন উল্টোপাল্টা কথা। আপনি তার নাম বলেন, তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফারুকের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম বলেন, ৩ আগস্ট ওমর ফারুককে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। আপনারা বেশি খোঁজ নিচ্ছেন বলেই হয়তো তারা এড়িয়ে যাচ্ছে। হয়তো তারা ভয় পাচ্ছে। তবে আবার তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এমন নিউজ করবেন না।
ফারুকের কী কী পরীক্ষা করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশি কিছু পরীক্ষা করা হয়নি। মেডিসিন বিভাগের অধীনে ভর্তি ছিল। এর বেশি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না, আমি ব্যস্ত আছি।