টাঙ্গাইল সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ফলদা রামসুন্দর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক বনভোজনে হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খাওয়ানোর ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সাধারণ শিক্ষার্থী এবং প্রগতিশীল সংগঠনগুলো ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করছে। পাশাপাশি দোষীদের যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার (২৮ জানুয়ারি) এই ঘটনাটি গ্রামবাসীর মধ্যে জানাজানি হলে এলাকাবাসী প্রথমে বিদ্যালয় ঘেরাও করে প্রতিবাদ করে। শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ক্লাশ বর্জন করে। পরে বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় এখনও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা যায়, উপজেলার ফলদা রামসুন্দর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বার্ষিক বনভোজন উপলক্ষ্যে শনিবার (২৬ জানুয়ারি) দুই শতাধিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা উঠিয়ে গাজীপুরের সাফারি পার্কে যায়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে হিন্দু ধর্মালম্বী ২২ জন শিক্ষার্থীও ছিল। পিকনিকে দুপুরে খাওয়ার জন্য গরুর মাংসের আয়োজন করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে সেখানে হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা কোন খাবারের ব্যবস্থা ছিল না। এ সময় হিন্দু শিক্ষার্থীরা খাওয়ার পর জানতে পারে যে তারা গরুর মাংস খেয়েছে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে হিন্দু শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একজন জানান, “পিকনিকে গাজীপুরের সাফারি পার্কে যাওয়ার জন্য ৩শ’ টাকা করে চাঁদা দিয়েছি। গরুর মাংসের কথা প্রধান শিক্ষক স্যারকে জানালে তিনি বলেন, “একদিন খেলে কিছু হবে না, খাবি না তা আসলি কেন?” পরে বিষয়টি আমাদের অভিভাবকদের অবহিত করি। এ ঘটনায় সোমবার প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে আমরা ক্লাশ বর্জন করেছি।”
এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সরন দত্ত বলেন, “পিকনিকের নামে হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খেতে দেয়া ঠিক হয়নি। প্রধান শিক্ষক হিন্দু শিক্ষার্থীদের আলাদা খাওয়ার ব্যবস্থা করেননি। এতে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলে বিদ্যালয় ঘেরাও করে এর প্রতিবাদ করেছে”।
উপজেলার ফলদা রামসুন্দর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাহেরুল ইসলাম তোতা এ প্রসঙ্গে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আজ মঙ্গলবার ইউএনও, ওসিসহ এলাকার লোকজন নিয়ে জরুরি মিটিং হবে। এর একটি সুষ্ঠু সুরাহা করা হবে।”
এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলাম বলেন, “প্রধান শিক্ষক হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খেতে দিতে পারেন না। তারপরও যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবালের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
ভূঞাপুর থানার ওসি রাশিদুল ইসলাম বলেন, “পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিদ্যালয় এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে”।