বিশেষ সংবাদদাতা:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হুট করে আওয়ামী লীগ ছেড়ে গণফোরামে যোগ দিয়ে চির প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে জিতে গেছেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। এই প্রাক্তন আওয়ামী লীগার এবং অন্য বিজয়ী প্রার্থী মোকাব্বির খানের উপর বেশ চটেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
বিরোধের সূত্রপাত হয় মূলত দুই সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণ নিয়ে। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারা শপথ নেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করায় এ বিপত্তি তৈরী হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত যদি তারা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নেয় তাহলে দুজনকেই গণফোরাম থেকে বহিস্কার করা হতে পারে। ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, সহসাই সুলতান মনসুর আওয়ামী লীগে যোগদান করবেন। ইতিমধ্যে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা চূড়ান্ত হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি সপ্তাহের যে কোনদিন ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতে পারেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন প্রথম অবস্থায় নির্বাচিত দুই এমপির শপথ নেওয়া ও সংসদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে থাকলেও, এখন তিনি বিএনপির চাপে পড়ে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। গণফোরামের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা সংসদে যোগ না দেয়ার পক্ষ নেয়ায় ড. কামাল হোসেনও এখন চাচ্ছেন না, ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে দুজন সদস্য সংসদে যোগ দেন। এতে জোটের ইমেজ নষ্ট হবে।
সূত্র জানায়, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। এরপর সিঙ্গাপুরে অবস্থান করা ড. কামাল হোসেনকে বিষয়টি টেলিফোনে জানানো হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে দলের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীকে বলেন, ‘ওদের বহিষ্কার করে দাও’। তবে সুব্রত চৌধুরী ড. কামালকে বলেন, এখনই এ ধরনের সিদ্ধান্ত না নিয়ে তাদের আরো বুঝাতে হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত অমান্য করে তারা যদি সংসদে শপথ নিতে যায় তাহলেই তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে রোববার টেলিফোনে দুই সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান জানান, তারা নব্বই দিনের মধ্যে শপথ নেবেন ও সংসদে যোগ দেবেন। কারণ, এলাকার জনগণ তাদের সংসদে যোগ দেয়ার জন্য ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।
জানতে চাইলে গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমি টেলিফোনে দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে জানিয়েছি। তিনি আমাকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তবে যেহেতু তিনি দেশে নেই সেহেতু আমি ব্যবস্থা নেইনি। তবে তারা (দুই সংসদ সদস্য) যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘আমি গণফোরামের কেউ না’, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘তিনি তো গণফোরামে যোগ দিয়ে দলীয় চিঠি নিয়ে নির্বাচন করেছেন। এখন যদি জাতীয় বেঈমান হতে চান তাহলে আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব।’
বহিষ্কারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুলতান মোহম্মদ মনসুর বলেন, ‘আমি আমার সিদ্ধান্ত বলে দিয়েছি। কে কী বললো এতে আমার কিছু আসে যায় না।’ এ ব্যাপারে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমি বলেছিলাম ব্যক্তিগতভাবে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। যেটা আমার নেতা ড. কামাল হোসেনও এর আগে গণমাধ্যমে বলেছেন। তবে দলীয়ভাবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আমি যেহেতু গণফোরাম করি, সেহেতু ড. কামাল হোসেন যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমি সেটাই মেনে নেব।’
1