স্বাস্থ্যখাতে সংকট: সরকারি ঔষধ সাপ্লাইয়ের মাইন্ড গেম

0

মুক্তমঞ্চ ডেস্ক:

স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ভন্ডামির নাম সরকারি ঔষধ সাপ্লাই। এই ফ্রি ঔষধ সাপ্লাইয়ের নামে জনগণকে করা হচ্ছে ভয়াবহ প্রতারিত আর চিকিৎসকদের বানানো হচ্ছে বলির পাঁঠা।

সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ বছর আর মফস্বল হাসপাতালে ৪ বছরের অধিক সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে দায়িত্ব নিয়ে বলছি আউটডোর ও ইনডোরের সাপ্লাই মেডিসিন দিয়ে ৯৫% বেশি রোগীর ৫% মেডিসিনের কন্ট্রিবিউশনও হয় না। আউটডোরে আমাদের দিন কাটে ৫ টাকা মূল্যমানের ৬/৪ ইঞ্চি টিকেটের ৩ খাতায় রেজিস্ট্রেশন করতে আর মান্ধাতা আমলের কিছু ড্রাগ বিতরণ করে।

রোগ যাই হোক না কেন, ড্রাগ প্রেসক্রিপশনে যাই লিখি না কেন, দিনশেষে রোগীর আব্দার যা যা সাপ্লাই আছে দিয়া দেন। সবাই যে এরকম তা না, তবে মেজরিটির দাবিই এরকম। আগে দিতাম না, বোঝাতাম, প্রতিবাদ করতাম। যার ফলশ্রুতিতে কয়েকবার ধোলাই খাওয়ার উপক্রম হয়েছে। খারাপ ব্যবহার, গালি গালাজ, শত্রুতা, বদনাম কিছুই বাদ যায়নি। এখন ভীষণ ক্লান্তি লাগে। মান্ধাতা আমলের এন্টিবায়োটিক- টেট্রাসাইক্লিন, এমোক্সিসিলিন, প্রেশার, ডায়াবেটিস… সাপ্লাই যা যা আছে সব দিয়ে দিতে বাধ্য হই। মেডিসিন তো মধু না, বিস্কিটও না, ডেঞ্জারাস জিনিস। কেউ যদি এসব নিয়ে ইচ্ছেমতো খায়, গায়ে মাখে, ড্রেনে ফেলে খুশির ঠ্যালায় কীই বা করার আছে!

এবার একটা পয়েন্টে আসি, স্বাস্থ্যখাত নিয়ে জনগন ও মিডিয়ার সব চেয়ে কমন এলিগেশন-

১. কোন ডাক্তার দ্যাখে না,
২. কোন ঔষধ দেয় না হাসপাতালে, সব কিনতে হয়।

গতকাল নাকি আমাদের হাসপাতালের এক রোগীও একই অভিযোগ করেছে মিডিয়াতে, টিভিতেও নাকি দেখিয়েছে। প্রথম অভিযোগ নিয়ে লেখাটা দীর্ঘায়িত না করে দ্বিতীয় অভিযোগ নিয়েই বলি।

ব্যাক্তিগত ও পেশাগত পরিচয়ের সুবাদে বেশ কিছু মিডিয়াকর্মীর সাথে পরিচয় আছে। সদ্ভাবও আছে। তাদের চ্যালেঞ্জিং পেশার প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধাবোধ আছে। আমার বক্তব্য হয়তো খুব বেশীজনের কাছে যাবে না তবুও আমার একটি অনুরোধ আছে এদেশের মিডিয়ার কাছে চিকিৎসক হিসেবে না, এদেশের সাধারণ নাগরিক হিসাবে।

রোগী হাসপাতালে কোন ড্রাগ পায়নি, বা তেমন পায়নি- এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোন মিডিয়াকর্মী কি জনগনের সামনে কোন সরকারি হাসপাতালে সাপ্লাই থাকা সত্ত্বেও বাইরে থেকে কোন সিঙ্গেল ড্রাগ কিনতে বাধ্য করেছে- এমন তথ্য এনে দিবেন। যদি এমন ঘটনার প্রমান থাকে তাহলে সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি শুধু নাগরিক হিসাবেই না, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এবং একজন চিকিৎসক হিসাবেও।

এদেশে মিডিয়াকর্মী অনেক, তারা দক্ষ, অনুসন্ধিৎসু, তারা সৎ ও দেশপ্রেমিক বলেই আমি বিশ্বাস করি। তাদের কাছে অনুরোধ, আপনাদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সমগ্র দেশ থেকে অন্তত এভারেজ ৫% সরকারি হাসপাতালে এই অভিযোগের পিছনের চিকিৎসকের দায়ভার খুঁজে এনে জাতির সামনে উন্মোচন করুন। আর যদি জনগনের জন্য আরো একটু কাজ করতে চান তাহলে সরকারি হাসপাতালে সরকার কর্তৃক সাপ্লাইকৃত ড্রাগের তালিকা এনে দেশী/বিদেশী নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দিয়ে স্টাডি করে এক্সপোজ করুন এদেশের জনগনের জন্য বরাদ্ধকৃত ড্রাগ দিয়ে কতটুকু চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।

আমি জানি, এই ইস্যু কাউকে টানবে না, এখানে সেনশেশন নাই, টিআরপি নাই। তারচেয়ে এই ভালো- হাসপাতালে ডাক্তার কোন ঔষধ দেয় না, সব কিনতে হয়। চাইলে আরেকটু যোগ করা যায়- সব ঔষধ ডাক্তার বেচে খাচ্ছে।

আমি শুধু নাগরিক হিসাবে রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানিয়ে যাচ্ছি এদেশের কমন রোগের অন্তত ৫০% ড্রাগের সরকারী বরাদ্ধ দেওয়া হোক, নতুবা হাসপাতালে ফ্রি ফ্রি ঔষধ সাপ্লায়ের এই ঘৃণ্য প্রতারণামূলক খেলার সমাপ্তি হোক।

লেখক: ডাঃ এম সজীব উদ্দীন (স্বাধীন)
পরিচিতি: চিকিৎসক ও সোশ্যাল এক্টিভিস্ট
লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!