‘হারকিউলিস’ কি জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে পারবে?

0

সময় এখন ডেস্ক:

কোনো এক কিশোরীকে দলবেধে ধর্ষণ করলো গুন্ডারা। কিছুদিন যেতেই একে একে সবার ক্ষত বিক্ষত লাশ খুঁজে পাওয়া গেল। লাশের গলায় ঝোলানো নিজেদের কুকর্মের স্বীকারোক্তি, সঙ্গে এক সুপারহিরোর নাম। এমনটা আমরা প্রায়ই হিন্দি ছবিতে দেখে থাকি যে, বিচার না পেয়ে কেউ একজন সুপারহিরো হয়ে যায়, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অপরাধীকে শাস্তি দেয়।

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশেও এমনটাই দেখতে পাচ্ছি আমরা। একের পর এক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে ধর্ষকদের লাশ। লাশের গলায় ঝোলানো কাগজে গ্রিক বীর হারকিউলিসের নামও পাওয়া গেছে। যদিও এটা আইন বহির্ভূত কাজ এবং এটাও একটি অপরাধ। কিন্তু তবুও সাধারণ মানুষ এতে স্বস্তি পাচ্ছে।

মানুষের যখন দম বন্ধ হয়ে আসে, তখন যেকোনোভাবেই সে এটা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেতে চায়, কিংবা পরিত্রাণ পেতে চায়। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সমাজে একের পর এক যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এর কোনো বিচার হচ্ছে না। একটা সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হলে একধরণের দমবন্ধ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দেখা যায়, তখনই মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিতে চায়। সাম্প্রতিক এই হারকিউলিসের ঘটনাটা হয়তো তারই ফসল। আমাদের সমাজের মানুষ এগুলোকে বাহবা দেয়।

এক সময় দেখা যেত, মানুষ অপরাধ করতো। এরপর পুলিশ তাকে অ্যারেস্ট করতো। কিন্তু কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই বেরিয়া আসতো সে। এরপর আবারও একই অপরাধে লিপ্ত হতো। এ অবস্থা দেখতে দেখতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেল। তখনই শুরু হলো ‘ক্রসফায়ার’ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনা। মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হলেও ক্রসফায়ার জনপ্রিয়তা পেলো। মানুষ এতেই স্বস্তি খুঁজে নিতে চাইলো। সাধারণ মানুষ ভাবতে লাগলো, মারুক এগুলোকে, এগুলোকে মারাই উচিৎ। কীসের বিচার? এখনো ক্রসফায়ারের পক্ষে সমর্থন জানান অনেকেই।

কিন্তু সভ্য সমাজে এসব বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মোটেই কাম্য নয়। সিনেমাতেই এগুলো ভালো, কিন্তু নাগরিক সমাজে এগুলো একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এটা এক কথায় আইনের লঙ্ঘন। কিন্তু মানুষের ক্ষোভটাকেও অস্বীকার করা সম্ভব নয়।

এই অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হলো, যে কোনো অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা। অপরাধীদের বিচার করা। শুধু বিচার করলেই হবে না, সেই বিচারটা যেন দৃশ্যমান হয় সে ব্যবস্থাও করতে হবে। মানুষ যেন বোঝে যে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে।

আমরা যেমন দেখি যে, একজন ভুল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাকে হাতকড়া পরানো হয়। অন্যদিকে একজন হত্যাকারী, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হাতকড়া ছাড়াই মুক্তহস্তে পুলিশের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে হেঁটে যান। এগুলো দেখলে আইন, প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থার ওপর থেকে মানুষের আস্থাটা চলে যায়। এমনটা হতে থাকলে বাংলাদেশে এই কথিত হারকিউলিসদের উত্থান ঘটতেই থাকবে, যেটা কারও জন্যই ভালো হবে না।

লেখক: অর্চি হক

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!