আ’লীগ নেতা মোর্শেদকে ফাঁদে ফেলে কুপিয়ে হত্যা, বিএনপি নেতা আটক

0

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা:

এসপিওনেজ জগতে একে বলা হয় ‘বুবি ট্র্যাপ’ বা গোপন ফাঁদ। বাড়ির পাশের বাজার থেকে ফিরছিলেন মোর্শেদ আলী। কিন্তু পথেই যে তার জন্য মৃত্যুর ফাঁদ পাতা হয়েছিল, জানা ছিল না কারো। আঁধারে চোখে পড়ে না, এমন সরু জিআই তার দিয়ে রাস্তায় তৈরি ফাঁদে মোটরসাইকেল নিয়ে আটকা পড়েন তিনি। আর সেখানেই কুপিয়ে হত্যা করা হয় মোর্শেদ আলীকে।

ময়মনসিংহের নান্দাইলে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মোর্শেদ আলী (৫৫) নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কানুরামপুর বাজার থেকে দত্তপুর গ্রামের নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন মোর্শেদ। ওই সময় তার সহযাত্রী ছিলেন মজিবুর রহমান ও নাজিম উদ্দিন। ছোট ভাইকে আগে বাড়িতে পাঠিয়ে পেছন পেছন ফিরছিলেন মোর্শেদ আলীর বড় ভাই সিদ্দিক আলীও। পথে কানুরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে রাস্তার দুই পাশের গাছে জিআই তার বেঁধে গতিরোধক ফাঁদ পেতে আটকানো হয় মোর্শেদ আলীকে। মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যাওয়ার পর চারদিকে ঘেরাও করে দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয় মোর্শেদ আলীর ওপর। কুপিয়ে পাশের একটি ধানের জমিতে ফেলে দেওয়া হয় তাকে।

স্থানীয়রা আরও জানায়, এ সময় মোর্শেদ আলীর দুই সহযাত্রীকেও আঘাত করা হয়। পেছনে থাকা মোর্শেদ আলীর বড় ভাই সিদ্দিক আলী ছোট ভাইয়ের ওপর হামলা দেখে চিৎকার শুরু করেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসার আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে মোর্শেদ আলীকে উদ্ধার করে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে মোর্শেদ আলীর মৃত্যুর খবরে সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে কানুরামপুর ও কুতুবপুর গ্রামের অন্তত ২০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া কানুরামপুর বাজারের কয়েকটি দোকানেও আগুন ধরিয়ে দেওয় হয়। শনিবার সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তখনও আগুনের ধোঁয়া বের হচ্ছে ধ্বংসস্তুপ থেকে। যে স্থানে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে সেখানে মানুষের ভিড়।

ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. মাহফুজুর রহমান জানান, খবর পেয়ে নান্দাইল ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট ও ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ১টি ইউনিট আগুন নেভাতে গেলে উত্তেজিত জনতার বাধার মুখে পড়ে। পরে নান্দাইল থানা পুলিশ, ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ ও ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভোট ৫টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।

নিহতের ভাতিজা মিল্লাত হোসাইন বলেন, চাচার কোনো সন্তান নেই। আওয়ামী লীগের জন্যই কাজ করে যাচ্ছিলেন তিনি। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি অল্প ভোটের ব্যবধানে বিএনপি পার্থীর কাছে হেরে যান। ওই নির্বাচন করার সময় স্থানীয় নুরুল ইসলামের পরিবারের সঙ্গে তাদের বিরোধ তৈরি হয়। বিএনপি নেতা নুরুল ইসলামের ছেলে সুমন স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

মিল্লাত হোসাইন জানান, তার চাচা পরাজিত হওয়ার পর কানুরামপুর বাজারে নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করেন সুমনরা। এ নিয়ে তার চাচা বাদী হয়ে মামলা করেন। সে কারণেই ক্ষুব্ধ হয়ে তার চাচাকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় কাঁদতে কাঁদতে তার চাচাকে কুপিয়ে হত্যায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি।

নিহতের বড় ভাই সিদ্দিক আলী জানান, ছোট ভাইয়ের পেছন পেছন ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু রাস্তায় জিআই তারের ফাঁদ পেতে তার ভাইকে ফেলে দেওয়া হয়। পরে বিএনপি কর্মী সুমন ও তার লোকজন তার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে।

নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন মোর্শেদ আলী। তাকে হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি করেন তিনি।

নান্দাইল মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া বলেন, পূর্ব বিরোধের জের ধরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। এ ঘটনায় নুরুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!